জুমবাংলা ডেস্ক : সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় সাড়ে ১১ বছর তদন্ত শেষে অনেকটা হতাশ এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। বারবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করেও কূলকিনারা করতে পারেনি এই হত্যাকাণ্ডের। ভেদ করতে পারেনি রহস্য।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো আলামত পরীক্ষা করে ঘটনাস্থলে দুজন অজ্ঞাত পুরুষের ডিএনএ পাওয়া গেছে। কিন্তু তাদের এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।’
এই যুক্তিতেই অনেকবার পেছানো হয়েছে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ। প্রতিবেদন দাখিল করতে তদন্ত কর্মকর্তারা এ পর্যন্ত সময় নিয়েছেন ১০০ বার। সবশেষ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল সোমবার।
এদিনও তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করেননি। তাই ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়েছেন। ১১ সেপ্টেম্বর নতুন তারিখ ধার্য করা হয়েছে। এর আগে ২২ জুন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার বিষয়টি ৯৯ বারের মতো পেছানো হয়।
বহুল আলোচিত এই সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে র্যাবের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু নেই। অন্য কোনো সংস্থা এই ডাবল মার্ডারের তদন্তের দায়িত্ব নিলে আমরা হাঁপ ছেড়ে বাঁচি। আদালত যেহেতু আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে, আমরা তো আর নিজেদের ব্যর্থতার কথা বলতে পারি না। তবে বাদী চাইলে অন্য যে কোনো সংস্থা দিয়ে তদন্ত করানোর জন্য আদালতে আবেদন জানাতে পারেন।’
বিচার না দেখেই এরই মধ্যে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন রুনির মা। সাগরের মা সালেহা মনিরও একই আশঙ্কা ব্যক্ত করে সোমবার বলেন, ‘জানি, আর বিচার পাব না। তারপরও বিচারের দাবি করে যাব। তদন্ত সংস্থাগুলো অনেক নাটক করেছে। আর নাটক চাই না। কোথা থেকে কলকাঠি নাড়া হচ্ছে, তা বুঝতে পারছি। যার ইশারায় তদন্ত থমকে আছে, সে অনেক শক্তিধর।’
তিনি বলেন, আজ অনেক আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু আগের ৯৯ বারের মতো এবারও হতাশ হলাম। মনে হয়, র্যাব কিছু করবে না। তাই তারা দায়িত্ব ছেড়ে দিক। সিআইডি-পিবিআই বা অন্য কোনো সংস্থাকে তদন্তের দায়িত্ব দিলেও একই অবস্থা হবে আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, ‘সরকার বলে দিক, এই জোড়া খুনের বিচার হবে না।’
সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রথম তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এসআই মো. জহুরুল ইসলাম। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তদন্তভার গ্রহণ করেন ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম। ওই বছরের ১৮ এপ্রিল মামলার তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন আদালত।
পরদিন ১৯ এপ্রিল র্যাব সদর দপ্তরের সিনিয়র পুলিশ সুপার মো. জাফর উল্লাহ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের ১২ মার্চ তদন্তভার পান র্যাবের তৎকালীন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. ওয়ারেছ আলী মিয়া। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যারের সহকারী পরিচালক মহিউদ্দিন আহম্মদকে।
২০১৮ সালে দায়িত্ব দেওয়া হয় অপর সহকারী মো. সহিদার রহমানকে। বর্তমানে তদন্তকাজ চালাচ্ছেন র্যাবে কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খণর শফিকুল আলম।
জানতে চাইলে র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনার বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ চলছে। এ মামলায় র্যাবের হাতে আটক এবং সন্দেহভাজন আসামিসহ ২৫ জনের সেয়াবসহ নানা আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইএফএস (ইনডিপেনডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিস) পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।
ওই পরীক্ষাগার থেকে একটি প্রতিবেদন এসেছে। ওই প্রতিবেদনে দুজন অজ্ঞাত ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া যায়। ওই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের এখনো আমরা শনাক্ত করতে পারিনি। তিনি বলেন, আমরা চাই না, নির্দোষ কোনো ব্যক্তি সাজা পাক।
প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করতে সময় লাগছে। এ কারণে অভিযোগপত্র দিতে দেরি হচ্ছে। কবে নাগাদ তদন্ত শেষ হবে বা অভিযোগপত্র দাখিল করা যাবে এই প্রশ্নের জবাবে র্যাব পরিচালক বলেন, এটা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বাদীপক্ষ প্রয়োজনে অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের ব্যবস্থা করতে পারেন।
মামলার বাদী নওশের রোমান বলেন, ‘আমরা বারবার হতাশ হচ্ছি। রাষ্ট্র চায় না চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের বিচার হোক। এজন্য র্যাবকে দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ সরকার থাকলে আরও ১০০ বার তদন্ত প্রতিবেদন পিছিয়েও বিচার পাব না। বিচারের নামে যে দেশে প্রহসন চলছে, তা আরও একবার প্রমাণিত হলো।’
তিনি বলেন, র্যাব যদি তদন্তকাজ চালাতে না চায়, তাহলে বিষয়টি আদালতকে জানিয়ে দিক। আদালত পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। অযথা তদন্তকাজ কেন বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে?’
বাদীপক্ষকে র্যাব অনেক হয়রানি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্র চাইলে আনসার দিয়ে তদন্ত করিয়েও হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করা সম্ভব। আমরা সব সময় র্যাবকে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু আমাদের আশাবাদী করার মতো কোনো তথ্য র্যাব দিতে পারেনি। রোমানের আশঙ্কা, এই হত্যাকাণ্ডে সরকারের উচ্চমহলের কোনো হাত আছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।