নিরীহ পাখি ও বন্যপ্রাণীদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত এক পাখির নাম ছাতারে। সাতভাইও বলা হয়। ইংরেজরা বলে ‘সেভেন সিস্টার’ বা ‘সাতবোন’ পাখি। এই নামের পেছনে যুক্তি আছে। এরা ছোট ছোট দলে থাকে। প্রতি দলে ৫ থেকে ৭টি পাখি থাকে। প্রায় সময়েই চেঁচায় বা ডাকাডাকি করে। মনে হয় নিজেদের ভেতর ঝগড়া-ফ্যাসাদ করছে। আসলে তা নয়।
ছাতারে (Jungle Babler) বাংলাদেশের সব গ্রামেই আছে। ভালো অবস্থায় আছে। ওদের খাবারের অভাব যেমন নেই, তেমনি নেই বাসা বাঁধার জায়গার অভাব। মাটিতে নেমে ওরা ঝোপ-জঙ্গল ঠেলে ও শুকনো পাতা উল্টে খাবার সংগ্রহ করে। এতে বন-বাগানের মাটির যেমন উপকার হয়, তেমনি গাছপালার স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। ক্ষতিকর পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ খেয়ে ওরা পরিবেশকে ভালো রাখে। ছাতারেরা তাই উপকারী পাখি। প্রকৃতির বন্ধু।
সারা দুনিয়ায় ছাতারে আছে ত্রিশ রকমের। বাংলাদেশে আছে সাত রকম। সবারই স্বভাব-চরিত্র, খাদ্য ও বাসা প্রায় একই রকম। ছাতারে লম্বায় হয় ২৯ সেন্টিমিটার। চওড়া ধরনের লম্বাটে লেজ। চওড়া পাখা। তবুও ওরা এক নাগাড়ে বেশিক্ষণ উড়তে পারে না। বেশি উঁচুতেও ওঠে না।
তবে একটু দূরে যখন উড়ে যায়, তখন ডানা থাকে স্থির। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। তাই বলে ছাতারেদের সুন্দর পাখি বলা যাবে না। ছেলে ও মেয়েপাখি দেখতে একই রকম। মেটে-বাদামি শরীরের রং। চোখের মনি লাল। পা, ঠোঁট ও তলপেট হালকা হলুদাভ। গলার স্বর কর্কশ। গলায় জোর আছে বেশ।
কোনো গাছে কলা, পেঁপে বা আম পাকলে ছাতারেরা আগে খবর পেয়ে যায়। নানান রকম ফল যেমন ওরা খায়, তেমনি খায় পোকামাকড় ও কেঁচো। মাছও খায়। ধান ও ভাত খেতে ওরা গ্রামের বাড়ির উঠোনেও চলে আসে। সুযোগ পেলে ঘর ও রান্নাঘরেও ঢুকে পড়ে। বর্ষাকালে উঠোন বাড়িতে বেশি আসে। বাল্য-কৈশোরে আমি বহুবার মুরগি ঢাকা খাঁচার ফাঁদ পেতে ছাতারে আটকেছি। আটকা পড়লে ওরা কিন্তু একটুও ডাকাডাকি করে না। নার্ভাস হয়ে পড়ে। ভয়ে চোখ যায় ঘোলাটে হয়ে।
ওরা বাসা করে ঝোপঝাড় ও গাছের ডালে। বেশ বড়সড় গোলগাল বাটির মতো বাসা। দুজনে মিলে জায়গা নির্বাচনে ব্যয় করে ২-৩ দিন। দুজনে মিলেই বাসা বাঁধা শেষ করে ৪-৮ দিনে। ডিম পাড়ে ২-৪টা। তবে প্রায় সময়েই হয় ৩টা ডিম। ডিমের রং নীল। ওই ডিমের সঙ্গে মিল আছে কোকিল, পাপিয়া ও বউ কথা কও পাখির ডিমের। ওই সব পাখিরা তাই সুযোগ পেলেই ছাতারের বাসায় গোপনে ডিম পাড়ে। ছাতারেরা ওই ডিমে তা দেয়, বাচ্চা ফোটায়।
ছাতারেরা ডিমে তা দেয় পালা করে। ১৩-১৫ দিনে বাচ্চা ফোটে। বাবা-মা খাওয়ায়, চাচা-ফুফু-খালা-খালুরাও খাওয়ায়। অর্থাৎ দলের বড়রা ছোটদের খাওয়ায়, সমান ভালোবাসে। আবার সময় সুযোগ মিললে একজনের ডিমে অন্যরাও তা দেয়। বাচ্চারা উড়তে পারে ১৭/১৮ দিনে।
ছাতারেরা নিরীহ ও ভদ্রগোছের পাখি। পোষ মানে। পাশাপাশি প্রয়োজনে দুঃসাহসী হয়ে উঠতে পারে। ঢাকা শহরের শিশু-কিশোরেরা ইচ্ছে করলে ঢাকা শহরের পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা এলাকায় গিয়ে ছাতারেদের কর্মকাণ্ড দেখে আসতে যেমন পারে, তেমনি পারে ওদের কর্কশ ডাক শুনতে। দেখতে পারে ওদের ওড়ার চমৎকার কৌশলটা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।