নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বিভিন্ন সড়কে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পৌরবাসী। বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন বিশেষ করে শিক্ষার্থী, পোশাকশ্রমিক ও নিম্ন-আয়ের মানুষরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ড্রেনে বর্জ্য জমে থাকায় এবং পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় রান্নার কাজে দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে নারীদের। পৌরসভার বাসিন্দারা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে ড্রেন নির্মাণ এবং প্রকৌশল বিভাগের সঠিক তদারকি না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টিতে শ্রীপুর পৌসভার ২ নম্বর সিএন্ডবি থেকে ধনাই বেপারী উচ্চবিদ্যালয় সড়ক, ধনাই বেপারী উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক থেকে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম সড়ক, শ্রীপুর চৌরাস্তা, বারতোপা সড়কের বর্ণমালা মোড়, মসজিদ মোড় থেকে দারগারচালা মোড, শ্রীপুর থানা মোড়, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের সামনের অংশ, ১ নম্বর সিএন্ডবি এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা হারিছ উদ্দিন সড়ক এবং নতুন বাজার থেকে কড়ইতলা সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা সামান্য বৃষ্টি হলেই এক ফুট আবার কোথাও কোথাও দেড় থেকে দুই ফুট পানির নিচে থাকে।
স্থানীয়রা জানান, পৌর শহরের বিভিন্ন বাজারের ড্রেন থেকে ময়লা-আবর্জনা দীর্ঘদিন অপসারণ করা হয় না। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন কাঁচাবাজার, মাছবাজার ও মাংসবাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা। বাজারের সরু গলির পথগুলো কর্দমাক্ত হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে। বাজার থেকে প্রতি বছর কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে পৌর কর্তৃপক্ষ। তারপরও বাজার ও সরু রাস্তা উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না পৌরসভা।
ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ ও আমান উল্লাহ বলেন, পৌরসভার বিভিন্ন জায়গায় পৌর কর্তৃপক্ষ ড্রেন নির্মাণ করেছে ঠিকই, কিন্তু তা কোনো কাজে আসছে না। ড্রেনগুলো অগভীর এবং ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। নালার ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে সড়কে উঠে আসে। এ ছাড়া মুষলধারে বৃষ্টি হলে নালার নোংরা পানি সড়কের পাশের বাসা বাড়ি এবং দোকানে ঢুকে পড়ে। তখন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষদের।
বাড়িওয়ালা নজরুল ইসলাম ও জাকির হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ার কারণে বাসাবাড়িতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেন ভাঙাচোড়া এবং ময়লা আবর্জনা জমে থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমরা জুতা হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছি। সড়কে গিয়ে পা ধুয়ে জুতা পরতে হচ্ছে। নিয়ম না মেনে ড্রেন নির্মাণ এবং নির্মিত ড্রেনগুলো সঠিক তদারকি না করার কারণে পৌরবাসীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পৌরসভার শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বাজার এক দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়। ফলে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। মসজিদের চারপাশে পানি জমে থাকায় মুসল্লিদের বাসা থেকে ওজু করে মসজিদে যাওয়া যায় না। অনেক সময় ময়লা পানির ছিটা লেগে জামা নষ্ট হয়। তখন নামাজ না পড়েই বাসায় ফিরতে হয়।
চৌরাস্তার মার্কেট মালিক ফিরুজ মিয়া বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ করলেও পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সঠিক তদারকি না করায় ড্রেনে ময়লা জমে পানি সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু এখন আগের চাইতে বেশি পানি জমছে সড়কে। তাহলে এত টাকা খরচের দরকার কি ছিল।
মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম সড়কের আশপাশের শিক্ষার্থীরা জানান, সড়কে পানি জমে থাকায় সড়ক পার হতে গেলে পায়ের জুতা হাতে নিয়ে পার হতে হয়। ড্রেনগুলো পরিষ্কার থাকলে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হয়ে যেতো। এতে দুর্ভোগে পড়তে হতো না তাদের।
কড়ইতলা এলাকার বাসিন্দা আমীর হোসেন বলেন, সামন্য বৃষ্টি হলেই আমাদের এলাকার সড়কগুলোতে পানি জমে যায়। হেঁটে চলাচল করা যায় না। তাছাড়া বৃষ্টি হলেই রিকশাচালকরা ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। ২০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা নেয়। ভাড়া বৃদ্ধির কারণে প্রয়োজন থাকলেও অনেকেই বাসা থেকে বের হতে চায় না। পানি জমে থাকলেও প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নিষ্কাশন না হওয়ায় পৌরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
বাজার করতে আসা ক্রেতা জুলহাস উদ্দিন বলেন, বাজারে এলেই ময়লা পানিতে মাখামাখি করে বাসায় যেতে হয়। বাসায় গিয়ে গায়ের কাপড় ধুয়ে গোসল করতে হয়। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চাই আমরা।
বাংলাদেশ রিভার অ্যান্ড নেচার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং শ্রীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, গত এক সপ্তাহ যাবত পৌরসভার বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে পানি জমে রয়েছে। এতে শিল্প অধ্যুষিত এ পৌরসভার পোশাক শ্রমিক, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ বাসাবাড়ির লোকজন ময়লা পানিতে হাঁটাহাটি করতে হচ্ছে। দুর্ভোগ যেন পৌরবাসীর পিছু ছাড়ছে না। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে নারীদের ময়লা পানিতে দাঁড়িয়ে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে।
শ্রীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শাহেদ আকতার বলেন, যেসব এলাকায় ড্রেন ভেঙে গেছে ঐসব এলাকায় স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে আমরা মেরামত করবো। তাছাড়া পৌরসভায় প্রকৌশল বিভাগে জনবল সংকট রয়েছে। ঘুরে ঘুরে দেখার মতো সময়ও নেই, লোকও নেই। কাউন্সিলররা আমাদের মিটিংয়ে যেভাবে বলে আমরা তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে কাজ করবো।
শ্রীপুর পৌরসভার সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে পৌরসভার যেসব স্থানে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে সেসব স্থানে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিয়ে তা সমাধান করা হবে। যেসব ড্রেনে ময়লা আবর্জনা পড়ে ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে সেসব ড্রেন পরিষ্কার করে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা হবে।
শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় এসব বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।