আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীদেরও আঘাত করেছে। চলতি বছর দেশটির শীর্ষ ৫০ ধনীর সম্মিলিত সম্পদ ২০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি খাতের শেয়ারদরে পতনও ভূমিকা রেখেছে। মহামারীর সময় প্রযুক্তিপণ্য, অনলাইন পরিষেবা ও চিকিৎসাসামগ্রীর চাহিদা বেড়ে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছিল ধনীরা। অর্থনৈতিক বিপর্যয়েরও সময়ও তাদের সম্পদ ফুলেফেঁপে উঠেছিল। বর্তমানে ওই ক্ষেত্রগুলোয় চাহিদা কমে যাওয়ায় ধনীদের সম্পদের পরিমাণও নিম্নমুখী হয়েছে। খবর স্ট্রেইটস টাইমস।
মার্কিন ব্যবসায়িক ম্যাগাজিন ফোর্বসের ২০২২ সালের তালিকা অনুসারে, সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ১৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে নেমেছে। ২০২১ সালে তাদের সম্পদের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। সে সময় তাদের মোট সম্পদ ২৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল।
ফোর্বস বলেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধনীদের কাছে সিঙ্গাপুরের আকর্ষণ বাড়ছে। তবে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি স্টকের দরপতন চলতি বছর শীর্ষ ৫০ ধনীর সম্পদে প্রভাব ফেলেছে। মহামারী শুরুর পর বাড়লেও বর্তমানে প্রযুক্তিপণ্য, অনলাইন পরিষেবা ও চিকিৎসা ডিভাইসের চাহিদা নিম্নমুখী হয়েছে। এ পরিস্থিতি ধনীদের সম্পদ উল্লম্ফনে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এটিকে মহামারী-পরবর্তী বাস্তবতা হিসেবে উল্লেখ করেছে ম্যাগাজিনটি।
শেনজেন মিনড্রে বায়ো-মেডিকেল ইলেকট্রনিকসের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান লি সাইটিং নগররাষ্ট্রের শীর্ষ ধনী। এক বছরে তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে ১ হাজার ৫২০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিক্রি ধীর হয়ে যাওয়ায় তার মেডিকেল ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর নিম্নমুখী হয়েছে।
রিয়েল এস্টেট খাতের অব্যাহত পুনরুদ্ধারের কারণে সম্পদ বেড়েছে এ খাতে ব্যবসা করা দুই ভাই রবার্ট ও ফিলিপ এনজির। ১ হাজার ৫২০ কোটি ডলার সম্পদ নিয়ে সিঙ্গাপুরের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী তারা। গত বছর তাদের সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪২০ কোটি ডলার। তারা দুই ভাই দেশটির ফারইস্ট অর্গানাইজেশন নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিষ্ঠানটি সিঙ্গাপুরের বৃহত্তম বেসরকারি রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার। গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাদের প্রয়াত বাবা এনজি টেং ফং। ১৯৩৪ সালে তিনি চীন থেকে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান এবং অর্চার্ড রোডের রাজা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
এদিকে জাপানের নিপ্পন পেইন্ট হোল্ডিংস নিয়ন্ত্রণকারী ৯৫ বছর বয়সী পেইন্ট টাইকুন গোহ চেং লিয়াংয়ের মোট সম্পদ কমেছে। গত এক বছরে তার মোট সম্পদ ৩০ শতাংশ কমে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে সম্পদ কমার পরও তিনি নগররাষ্ট্রটির তৃতীয় শীর্ষ ধনী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। কারণ বেশির ভাগ শীর্ষ ধনীর সম্পদই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি সংস্থার শেয়ারদরে পতনের কারণে ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা অ্যাডুয়ার্ড সেভেরিনের মোট সম্পদ অর্ধেকের বেশি কমে ৯৬০ কোটি ডলারে নেমেছে। এতে সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীর তালিকায় তার অবস্থান দুই থেকে চারে চলে গিয়েছে। ৯৩০ কোটি ডলার নিয়ে এ তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছেন সিটি ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী চেয়ারম্যান কুইক লেন বেং। তার সম্পদের পরিমাণ গত বছরের ৮৫০ কোটি ডলার থেকে বেড়েছে।
গত বছর নিউইয়র্ক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গেমিং ফার্ম সির শেয়ারদরে উল্লম্ফন হয়েছিল। তবে চলতি বছর সংস্থাটির শেয়ারদরে পতন হয়েছে এবং সংস্থাটির সাবসিডিয়ারি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান শপিও লোকসান গুনেছে। এতে সির সহপ্রতিষ্ঠাতাদের সম্পদও নিম্নমুখী হয়েছে। ৪২০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে সির সহপ্রতিষ্ঠাতা ফরেস্ট লি দেশটির শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় ১১ নম্বরে, ২৮০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে গ্যাং ইয়ে ১৩ নম্বরে এবং ৭৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার সম্পদ নিয়ে ৪৮ স্থানে নেমে গিয়েছেন ডেভিন চেন। তাদের মোট সম্পদ ৭০ শতাংশেরও বেশি কমেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।