মনসুর আহম্মেদ, বাসস (রাঙ্গামাটি): পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রেখে সিন্ধুকছড়িতে ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন সড়ক নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সিন্ধুকছড়ি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে এ সড়কটির নির্মাণ কাজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
এ সড়কটি নির্মাণ হওয়ায় রাঙ্গামাটির সাথে ঢাকার দুরত্ব কমেছে ৬৮ কিলোমিটার। এ সড়ক নির্মাণের ফলে এখন রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িবাসীকে আর চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা যেতে হবে না। সরাসরি সিন্ধুকছড়ির দৃষ্টিনন্দন এ সড়ক ব্যবহার করে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে এ সড়কের মাধ্যমে ঢাকা যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
পাহাড়ের পরিবেশগত অবস্থান ঠিক রেখে সম্পন্ন করায় এ সড়কটি হতে পারে পর্যটকদের জন্য দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় একটি স্থান হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
পার্বত্য চট্রগ্রামে বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের অংশ হিসেবে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি- জালিয়াপাড়া সড়ক নির্মাণ প্রকল্প ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী হতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত করার কথা থাকলে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের তত্বাবধানে মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬ মাস আগেই সড়ক নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসপি, পিএসপি সিন্ধুকছড়ি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং ২০ ইসিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আমজাদ হোসেন দীদার।
তিনি জানান, এ প্রকল্পের আওতায় সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি সড়ক টেকসইমূলক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সড়ক নির্মাণ বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ।
এ প্রকল্পের আওতায় ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট সড়ক নির্মাণ, ২৪ কিলোমিটার সড়কের দুইপাশে আধুনিক ড্রেন নির্মাণ, ২৮ মিটার কালভার্ট, ৪১০ মিটার গ্রাভিটি ওয়াল, ৬৩০ মিটার রিটেইনিং ওয়াল এবং সড়কটির বিভিন্ন অংশে পাহাড় ধ্বস ঠেকাতে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান এই সেনা কর্মকর্তা।
পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ সমুন্নত রেখে পাহাড়ে সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে দৃষ্টিনন্দন এই সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি পৌরসভা মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) কে জানান, এই সড়ক নির্মাণের ফলে রাঙ্গামাটির সাথে ঢাকার দূরত্ব অনেক কমে যাবে এবং যোগাযোগব্যবস্থা ও অনকে সহজ হবে।
বর্তমান সরকারের আমলেই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা যোগাযোগসহ প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছে এবং আরো চলমান রয়েছে জানিয়ে মেয়র আরো বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী পাহাড়ে উন্নয়ন কাজ করার সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রেখে উন্নয়ন করার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন এই সিন্দুকছড়ির দৃষ্টিনন্দন সড়ক নির্মাণের ফলে প্রধানমন্ত্রীর সে উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলো।
একইভাবে পাহাড়ের অন্যান্য যোগাযোগের রাস্তাগুলো ও সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান মেয়র।
মহালছড়ি-সিন্ধুকছড়ি-জালিয়াপাড়া সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর এস এম খালেদুল ইসলাম বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা(বাসস) কে জানান, এ সড়কটি নির্মাণের ফলে পাহাড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি এ সড়ক নিয়ে পর্যটকদের মাঝে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ায় এই সড়ক নির্মাণের খবর পেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক ও আসা শুরু করেছে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রেখে দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ের এ সড়কটি ভবিষ্যতে পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেজর এস এম খালেদুল ইসলাম।
চারিদিকে সবুজে ঘেরা পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে আঁকা-বাঁকা বাঁক নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলার জালিয়াপাড়া, সিন্ধুকছড়ি ও মহালছড়ি হয়ে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে এ সড়কটি। এখন সরাসরি ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম না হয়ে খাগড়াছড়ি রামগড় দিয়ে এসে জালিয়া পাড়া ও মহালছড়ি হয়ে রাঙ্গামাটি আসা যাবে খুব সহজেই।
প্রাকৃতিক নৈসর্গের বেষ্টনীতে তৈরি করা ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৯ মিটার প্রস্থের নজরকাড়া সিন্ধুকছড়ির দৃষ্টিনন্দন এ সড়কটি যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার পাশাপাশি পাহাড়ের পর্যটন শিল্পের বিকাশসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের জীবনমান উন্নয়নের দ্বার খুলে দিবে বলে আশা পার্বত্যবাসীর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।