সিভিল সার্ভিসে ছয়টি ক্যাডারের কথা ভাবছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

জুমবাংলা ডেস্ক : সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডারের পরিবর্তে ছয়টি করার সুপারিশ করার কথা ভাবছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। পাশাপাশি সিভিল সার্ভিস থেকে ক্যাডার শব্দটি বাদ দেওয়া, অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি এবং স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের সুপারিশ আসতে পারে।

এছাড়া ডিসির পূর্ণাঙ্গ নাম ডেপুটি কমিশনারের পরিবর্তে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট অথবা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট করা এবং ভূমি, সিটি করপোরেশন, পাসপোর্ট, জন্ম ও মৃত্যু সনদ, ট্রেড লাইসেন্স ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র মানুষের হয়রানি নিরসনে দেওয়া হতে পারে একগুচ্ছ সুপারিশ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এদিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সরকার নির্ধারিত ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও ১৫ দিন সময় বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হচ্ছে না। কিছু কাজ এখনো বাকি। কী থাকছে সুপারিশে এমন প্রশ্নে কমিশনপ্রধান বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। যা থাকবে তা প্রতিবেদন দিলেই জানতে পারবেন।

কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সিভিল সার্ভিসে মোট ২৬টি ক্যাডার রয়েছে। ক্যাডারগুলোর মধ্যে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। যা নিয়ে দ্বন্দ্ব ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। একে অপরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ তুলছে। এ দ্বন্দ্ব, বাকযুদ্ধ ও লেখালেখি যে নতুন করে শুরু হয়েছে তা কিন্তু নয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০১৬ সালে তৎকালীন ২৬ ক্যাডার (ইকোনমিক ক্যাডারসহ) ও প্রশাসন ক্যাডার প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এর আগেও প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও চিকিৎসকদের সংগঠন (প্রকৃচি) নানা সময়ে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিয়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার ছিল। কিন্তু বিগত সরকারগুলো আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব নিরসনে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তবে প্রযুক্তি প্রসারের ফলে এখন ক্যাডারগুলোর দ্বন্দ্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এই বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো বিব্রত অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্যাডারের ১০ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সিভিল সার্ভিসে ২৬টির পরিবর্তে ৬টি ক্যাডার রেখে বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার সুপারিশ করতে পারে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এক্ষেত্রে ক্যাডার শব্দটি বাদ দিয়ে কর্মকর্তা হিসাবে অভিহিত করা হবে। কারণ ক্যাডার শব্দটি ঘিরে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে সাধারণ মানুষের-এমনটি মনে করছেন কমিশনসংশ্লিষ্টরা। তারা আরও জানান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর সুপারিশ করবে। ইতোমধ্যে চাকরিপ্রত্যাশীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য গঠিত কমিটি অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির সুপারিশ করতে পারেনি। কারণ কমিটির কার্যপরিধিতে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির সুপারিশ করার কোনো এখতিয়ার ছিল না। সে কারণে কমিশন সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা যৌক্তিকভাবে বাড়ানোর সুপারিশ করবে। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত থাকায় পদোন্নতিসংক্রান্ত বিষয়ে কমিশন নতুন করে কোনো সুপারিশ নাও করতে পারে।

কমিশন জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পদবি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট করার সুপারিশ করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এছাড়া সরকারি অফিসে কর্মরতদের স্যারের পরিবর্তে জনাব এবং মহিলা কর্মকর্তাদের ম্যাডাম বা পদবি মোতাবেক সম্বোধনের সুপারিশ থাকতে পারে। উল্লেখ্য, সরকারি অফিসে স্যার বলা নিয়ে প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেবাপ্রত্যাশী ও গণমাধ্যমকর্মীদের দ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটছে। সেক্ষেত্রে কমিশন স্যারের পরিবর্তে উল্লিখিত পদবি বা নাম ধরে সম্বোধনের সুপারিশও করতে পারে।

কমিশনসংশ্লিষ্টরা জানান, কমিশন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের সুপারিশ করতে পারে। এ পদ্ধতিতে দ্রব্যমূল্যের স্ফীতি ঘটলে বেতন বাড়বে আবার দ্রব্যমূল্য কমলে বেতন কমবে। প্রতিদিন সরকারি সংস্থাগুলো বাজার মনিটরিং করবে। প্রতিদিনের বাজারদর বিশ্লেষণ করে বেতন বৃদ্ধি বা কমার হার নির্ধারণ করা হবে।

আরও জানা গেছে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩০টি মতবিনিময় সভা, সেমিনার ও ওয়ার্কশপ করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বক্তব্য নিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা, ক্যাডার সংগঠন এবং সেবাপ্রত্যাশী মানুষের বক্তব্য শুনেছে কমিশন। সেক্ষেত্রে কমিশনের কাছে সাধারণ সেবাপ্রত্যাশীরা সেবা সংস্থায় কর্মরতদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেছে। বিশেষ করে ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিস, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, পাসপোর্ট অফিস, জন্ম ও মৃত্যু সনদ, ট্রেড লাইসেন্স এবং সামাজিক নিরাপত্তা সেবা নিতে গিয়ে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে।

কমিশন সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার সুপারিশ করতে পারে। এছাড়া আগের আবেদন নিষ্পত্তি ছাড়া পরের আবেদনের বিষয়ে কোনো কার্যক্রম নয় এমন পদ্ধতি চালুর সুপারিশ করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। ফলে বিশেষ সুবিধা নেওয়া বা প্রভাব খাটিয়ে দ্রুত কোনো কাজ করিয়ে নেওয়ার রাস্তা বন্ধ হবে বলে মনে করছে কমিশনসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এতে তদবিরের সংস্কৃতি ধীরে ধীরে কমে আসবে। এছাড়া সিভিল সার্ভিস নিয়ে গবেষণা সেল করার সুপারিশ করতে পারে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। দেশে সিভিল সার্ভিসের কার্যক্রম গতিপ্রকৃতি গবেষণায় কোনো প্রতিষ্ঠান এখনো গড়ে ওঠেনি।

মাথা যদি ঠিক থাকে, কেউ মাথা কিনতে পারবে না: সারজিস