সূর্যে প্রতি মুহূর্তে বিপুল পরিমাণ শক্তি তৈরি হচ্ছে। সে কারণেই সেখান থেকে আলো আর তাপের অকল্পনীয় ফোয়ারা ছুটছে সারাক্ষণ। ব্যাপারটা প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো কিংবা ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনও ঠিকই সন্দেহ করেছিলেন। কিন্তু এর পেছনের সঠিক কারণটা কেউই জানতেন না।
প্রায় এক শতাব্দী আগ পর্যন্তও সব উত্তপ্ত ও জ্যোতিষ্ককে আগুনের রূপ হিসেবে ভাবা হতো। সেগুলোতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলেছে বলে ধারণা করতেন বিজ্ঞানীরাসহ সাধারণ মানুষও। একইভাবে সূর্যও জ্বলছে বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই আগুন জ্বলছে কীভাবে? এর জ্বালানি কী? সূর্যে কি তাহলে অক্সিজেন আছে? এসব প্রশ্নের উত্তর তখনো অজানা।
ততদিনে কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার চলছে বাসাবাড়ি বা শিল্পকারখানায়। তাই এর উত্তরে কেউ কেউ ভাবলেন, সূর্যের জ্বালানি সম্ভবত কয়লা। এই কয়লা পুড়েই সূর্যে তাপ ও আলো তৈরি হচ্ছে বলে ধারণা করলেন কোনো কোনো বিজ্ঞানী।
উনিশ শতকের বিজ্ঞানীরা ততদিনে জেনে গেছেন যে পৃথিবী প্রতি বছর সূর্যের চারপাশে একবার পাক খায়। খাতা কলমে হিসেব কষে সূর্য থেকে আমাদের গ্রহটির দূরত্বও নির্ণয় করা হলো। এরপর তখনকার প্রচলিত পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র ব্যবহার করে নির্ণয় করা হলো সূর্যের ভর।
তাতে দেখা গেল, সূর্যের ভর প্রায় ৩ লাখ ৩৩ হাজার পৃথিবীর সমান। আমাদের এই নক্ষত্রটির ভেতর প্রায় ১৩ লাখ পৃথিবী এঁটে যাবে অনায়াসে। এবার হিসেব করে দেখা গেল, সূর্যের জ্বালানি যদি কয়লা হয়, তাহলে সেখানে কী পরিমাণ কয়লা থাকতে পারে। আর সেগুলো দিয়ে কতদিন সূর্যের বুকে একটানা আগুন জ্বলে থাকতে পারে।
চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখা গেল, সূর্যে যে পরিমাণ কয়লা থাকা সম্ভব, তা দিয়ে মোটামুটি দুই হাজার বছর হেসে-খেলে জ্বলতে পারবে নক্ষত্রটা। এই সময়টা কিন্তু নেহাত কম নয়। কিন্তু সে কথা সত্যি হলে ঝামেলাও আছে। কারণ, এর সোজাসাপ্টা মানে হলো, মিশরবাসীরা যখন প্রাচীনকালে পিরামিড বানাচ্ছিল, তখন যদি সূর্য প্রথমবারের মতো জ্বলতে শুরু করে, তাহলে যিশুখ্রিস্টের জন্মের আগেই সব কয়লা শেষ হয়ে যাবে।
কিংবা ধরুন, যিশুখ্রিস্টের জন্মের সময় যদি প্রথম সূর্য জ্বলে ওঠে, তাহলেও এতদিনে তার আগুন নিভে যাওয়ার কথা। তার মানে, কয়লা সংক্রান্ত ভাবনায় কিছু ঘাপলা আছে! ব্যাপারটা একটা রহস্যের জন্ম দিল। কেউ তা উদঘাটন করতে পারে না। এ সমস্যা সমাধানের কিছুটা আভাস পাওয়া গেল ১৯০৫ সালে। সে বছর বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রণয়ন করেন জার্মান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন।
তাঁর তত্ত্ব থেকে জন্ম নেয় নতুন একটা সমীকরণ—E = mc2। এর মাধ্যমে প্রথম বোঝা গেল, ভর ও শক্তি আসলে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। অর্থাৎ ভরকে শক্তিতে এবং শক্তিকে ভরে রূপান্তর করা যায়। তাছাড়া সামান্য পরিমাণ ভর থেকে বিপুল পরিমাণ শক্তি পাওয়া সম্ভব। ততদিনে ইউরেনিয়ামসহ বেশ কয়েকটি তেজস্ক্রিয় মৌল আবিষ্কৃত হয়েছে। বিজ্ঞানী হেনরি বেকেরেল, কুরি দম্পতি এবং আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেল, এসব মৌলের পরমাণু থেকে অবিরাম শক্তি বেরিয়ে আসছে। তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মাধ্যমে এক মৌলকে আরেক মৌলেও রূপান্তর হতে দেখলেন রাদারফোর্ড এবং তাঁর সহকর্মী সোডি।
আর ১৯১৪ সালের দিকে জ্যোতির্পদার্থবিদ সিসিলিয়া পাইনের নিবিঢ় পর্যবেক্ষণে দেখা গেল, নক্ষত্রগুলোর বেশিরভাগটাই আসলে হাইড্রোজেন মৌল দিয়ে গঠিত। এরপরই আছে হিলিয়াম মৌল। আমাদের সূর্যও তাই। ১৯১৫ সালের দিকে প্রথম নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন মার্কিন বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্কিনস। তিনি বললেন, হালকা মৌলগুলো প্রচণ্ড তাপ ও চাপে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে পরস্পরের সঙ্গে জোড়া লেগে যেতে পারে। এভাবে তৈরি হয় ভারী কোনো মৌল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।