মহাকাশে প্রথম যান ইউরি গ্যাগারিন। ১৯৬১ সালে। তারপর থেকে বেশ কিছু সোভিয়েত ও মার্কিন নভোচারী মহাকাশে গেছেন। কিন্তু এ রকম বিপদসঙ্কুল যাত্রায় মানুষকে পাঠানোর আগে মহাকাশ সম্পর্কে অন্তত কিছু জানা দরকার ছিল।
রাতের কালো আকাশ কী, চন্দ্র-সূর্য-তারা কী—মানুষ পৃথিবীতে বসে এসব কী করে জানল? কেননা আকাশের দিকে যতক্ষণ খুশি চেয়ে দেখ না কেন, এমনকি যদি সারা রাত ধরেও চেয়ে দেখ, তবু আকাশকে তোমার মনে হবে যেন একটা ছাউনি। সূর্য আর চাঁদ, জ্বলজ্বলে চ্যাপ্টা তাওয়া আর তারাগুলো নিছক কতকগুলো উজ্জ্বল বিন্দু। কীভাবে ওদের আরও ভালো করে নিরীক্ষণ করা যায়?
আসল কথা হলো, সূর্য আমাদের অনেক কাছে। তাই তাকে বড় মনে হয়। এ কারণেই সূর্য উজ্জ্বল আলো দেয় আর প্রচণ্ড তাপ বিকিরণ করে। আর তারারা সূর্যের তুলনায় আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে। এ কারণেই তাদের আলো ক্ষীণ, উত্তাপও এতটুকু নেই।
চাঁদও গোলক। তবে চাঁদ পাথুরে গোলক, কঠিন, ঠান্ডা। পৃথিবীর মতো চাঁদও নিজে আলো দেয় না। ঠান্ডা পাথর কি আর বাতি হতে পারে? আকাশে চাঁদকে দেখা যায় একমাত্র এই কারণে যে সূর্য তাকে আলোকিত করে। সূর্যের আলো নিভিয়ে দাও, চাঁদও নিভে যাবে।
একটা কাগজের টুকরোর ওপর চাঁদ, পৃথিবী আর সূর্যকে পাশাপাশি আঁকা যাক। চাঁদ আর পৃথিবীর জায়গা হবে, কিন্তু সূর্যের হবে না। তাকে আঁকতে হবে আলমারির সমান করে। তাহলে বুঝতেই পারছ, পৃথিবী আর চাঁদের তুলনায় সূর্য কত বড়।
মহাকাশে জ্যোতিষ্কমণ্ডলী পরস্পরের কাছ থেকে বহু দূরে অবস্থান করছে। আমাদের বিপুল ভূমণ্ডলকে যদি একটা ছোট্ট কুলের আকারে কল্পনা করা যায়, তাহলে তার তুলনায় মটর দানার সমান আকারের চাঁদকে রাখতে হয় আধ মিটার দূরে; আর সে ক্ষেত্রে আলমারির সমান আকারের সূর্যকে রাখতে হবে পৃথিবী থেকে ২০০ মিটার দূরে।
আর সূর্যের মতোই আলমারিসমান আকারের সবচেয়ে কাছের তারাটির অবস্থানস্থল হবে মহাসাগরের অপর পাড়ে, আমেরিকায় বা অস্ট্রেলিয়ায়, ওরকম কোথাও। তাহলেই দেখতে পাচ্ছ, জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব কী বিরাট! আমাদের সবচেয়ে কাছে আছে চাঁদ। কিন্তু চাঁদ পৌঁছাতে ‘তু-১৫৪’- এর মতো শক্তিশালী জেট প্লেনেরও লেগে যাবে দুসপ্তাহ, তাও আবার অবিরাম গতিতে চললে।
লেলিনগ্রাদের (বর্তমান সেন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়া) মতো একটা শহরের কথাই মনে মনে কল্পনা করো না কেন। এই এত বড় শহরটার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত হেঁটে পার হতে গেলে অবিরাম গতিতে চলতে হবে ঘণ্টা পাঁচেক। রাজপথের ওপর দিয়ে গাড়ি হাঁকিয়ে চললে পেরোতে সময় লাগে পনেরো মিনিট। আর ‘তু-১৫৪’ জেট প্লেন আকাশপথে ওই দূরত্ব পাড়ি দেয় দেড় মিনিটে। একবার ভেবে দেখ, কত দ্রুত ওড়ে!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।