সূর্য জি২ভি ধরনের একটি সাদামাটা নক্ষত্র। অনেকে একে হলদে বামন নক্ষত্র বলেও সংজ্ঞায়িত করেন। বিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী সাড়ে চার শ কোটি বছর আগে তৈরি হয়েছিলো এই নক্ষত্র। সেই থেকে বিরামহীন জ্বলছে। জ্বলবে আরও প্রায় ৫০০ কোটি বছর। এরপর লোহিত দানব নক্ষত্রে পরিণত হবে।
সবশেষে সাদা বামন নক্ষত্র হওয়ার মাধ্যমে শেষ হবে সূর্যের যাত্রা। কিন্তু সূর্যের পরিণতি কিছুটা ভিন্ন হলে কেমন হতো? কেমন হতো যদি সূর্য বামন নক্ষত্র না হয়ে সরাসরি পালসারে পরিণত হতো? কেনই বা পৃথিবী পালসার গ্রহ হলে সমুদ্রের নিচে বসবাসের মতো অনুভূতি হতো আমাদের?
বাস্তবে এমনটা হওয়ার আশঙ্কা প্রায় শূন্য। তাই, বিজ্ঞানের জ্ঞানকে আশ্রয় করে আমরা পুরো দৃশ্যপটটি নিয়ে যৌক্তিক কল্পনা করতে পারি। এর মাধ্যমেই মূলত প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো।
মহাবিশ্বের বেশিরভাগ নক্ষত্রের ইতি ঘটে সুপারনোভা নামের ভয়ংকর বিস্ফোরণের মাধ্যমে। আমাদের কাল্পনিক এই দৃশ্যপটে সূর্য সরাসরি পালসার নক্ষত্রে পরিণত হয়েছে। একে নিউট্রন নক্ষত্রও বলা যায়। আপনি এটা সুসংবাদ হিসেবেই নিতে পারেন। কারণ, সূর্যের সুপারনোভা বিস্ফোরণ হলে পৃথিবীসহ সৌরজগতের প্রায় পুরোটাই পরিণত হতো ধ্বংসযজ্ঞে, গ্যাস আর ধুলিমেঘ রাজত্বে।
পালসার বা নিউট্রন নক্ষত্র মহাবিশ্বের সবচেয়ে ঘন কাঠামোগুলোর একটি। মিল্কিওয়েতে এরকম নক্ষত্রের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। আমাদের কাল্পনিক দৃশ্যপটে সূর্যও এদের এক সদস্য। যাহোক, স্বাভাবিক একটি নক্ষত্র পালসার নক্ষত্রে রূপান্তরিত হলে এর আকার প্রায় ৭০ হাজার গুণ সংকুচিত হয়।
অর্থাৎ, এই হিসেবে আমাদের সূর্যের হতো প্রায় ১০ কিলোমিটার ব্যাসের একটি অতিঘন গোলক। ১০ কিলোমিটার ব্যাস আমাদের পৃথিবী গড়পড়তা একটি শহরের সমান। সূর্য পালসার নক্ষত্রে পরিণত হলে এর ঘূর্ণন হবে বেশ দ্রুত।
সূর্য ভার্গো নক্ষত্রপুঞ্জের কোনো পালসারের মতো হলে, এটা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৬১ বার করে ঘুরবে। আর হ্যাঁ, এই ঘুর্ণনের কারণে কয়েক সেকেন্ড বা মিলিসেকেন্ড পরপরই পৃথিবীর দিকে ছুটে আসবে মারাত্মক বিকিরণ!
সূর্য পালসারে পরিণত হওয়ার মোটামুটি ৮ মিনিট পর পৃথিবী ঢেকে যাবে নিকষ অন্ধকারে। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে এই ৮ মিনিট সময় লাগে। কোনো কারণে সূর্য অদৃশ্য হলেও আমরা সেটা ৮মিনিট পর টের পাবো। তাই, সূর্য পালসার হওয়ার ৮ মিনিট পর আকাশে তারার মিটিমিটি আলো ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। পূর্ণিমার চাঁদ আকাশে থাকলেও তা থেকে পাওয়া যাবে না আলো। কারণ, পালসার থেকে দৃশ্যমান আলোকতরঙ্গ নির্গত হয় না।
শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র থাকায় পালসার নক্ষত্রের দুই মেরু থেকে নির্গত হয় তীব্র তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ। তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ভিন্নতা অনুযায়ী কখনো এই বিকিরণ গামা রশ্মি আকারে নির্গত হয়, কখনো এক্স-রশ্মি আবার কখনো দৃশ্যমান আলোক তরঙ্গ হিসেবে নির্গত হয়। মহাকাশে পালসার তাই অনেকটা বাতিঘরের মতো কাজ করে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা বাসযোগ্য পালসার গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। অর্থাৎ পালসারের চারপাশে ঘূর্ণায়মান গ্রহ বাসযোগ্য হতে পারে। নিঃসন্দেহে এটা একটা সুসংবাদ। অন্তত পালসার গ্রহ হওয়ার পরও পৃথিবীতে প্রাণ টিকে থাকার সম্ভাবনা আছে।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, পালসার নক্ষত্রের চারপাশের বাসযোগ্য অঞ্চলের পরিধি সাধারণ নক্ষত্রের মতো বড় হতে পারে। এর অর্থ পৃথিবী পালসার গ্রহ হলেও এখানে পানি তরল অবস্থায় থাকার সম্ভাবনা প্রবল। তরল পানি ও পৃথিবীর উষ্ণ বায়ুমণ্ডল সূর্য থেকে আসা শক্তিশালী বিকিরণকে আটকে দিতে অনেকটাই হতে পারে। তবে সেজন্য আছে শর্ত।
পালসার নক্ষত্র সূর্য থেকে আসা গামা রশ্মি, এক্স-রশ্মি হবে পৃথিবীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। এই রশ্মিকে বাঁধা দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হবে খুবই ঘন বায়ুমণ্ডল। বর্তমান বায়ুমণ্ডলের ১০ লাখ গুণ ঘনত্ব হতে হবে সেই বায়ুমণ্ডলের।
সুরক্ষা ছাড়া এই চাপে মানুষের জীবিত থাকা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, মানুষের আকৃতিই ঠিক থাকবে না এই চাপে। ভালো করে বললে, এর অর্ধেক চাপেই মানুষের কানের পর্দা ফেটে যাবে, ফুসফুসে ভরে যাবে রক্তে।
পৃথিবী এমন ঘন বায়ুমণ্ডল ধরে রাখতে পারবে না। তাই পালসার নক্ষত্র থেকে আসা শক্তিশালী মারাত্মক বিকিরণ পৃথিবীকে আদতে ধ্বংসযজ্ঞেই পরিণত করবে। অর্থাৎ একভাবে বা অন্যভাবে পৃথিবী পালসার গ্রহ হলে এখানে জীবন ধারণ করার কোনো সুযোগ নেই।
তবে, এসব নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতে সূর্যের পালসার নক্ষত্রে পরিণত হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। বিজ্ঞানীরা এমনটাই বলছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।