বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: আধুনিক জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে মোবাইল ফোন বা সেলফোন। ছোট্ট যন্ত্রটি ছাড়া এখন জীবন কল্পনা করাই কঠিন। একসময় যেটা শুধু ধনী কর্মকর্তাদের ব্যবহার্য ছিল, সেই দিন এখন বদলেছে। বর্তমানে এসে দেখা যাচ্ছে, শিশুদের অর্ধেকই ১১ বছর বয়সের আগেই হাতে নিজস্ব মোবাইল ফোন পেয়ে যাচ্ছে।
এর ফলে কিছু সুবিধাও হয়েছে অবশ্য। যখনই হোক বা যেখানেই থাকেন পরিবার বা বন্ধুদের সংস্পর্শে থাকার একটি সুযোগ মিলছে। সেই সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তেই সব প্রশ্নের উত্তরও মিলে যাচ্ছে। ফোন ব্যবহারকারীকে বিনোদনের সুযোগও দিচ্ছে, সবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার সুযোগ দিচ্ছে আবার সত্যিকারের সময়ের জিপিএসও দিচ্ছে। বৈশ্বিক বিভিন্ন কার্যক্রমের তালিকা থেকে শুরু করে আলাদা সব ডিভাইস থেকে সরিয়ে এনে জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের তথ্য সংগ্রহের সুবিধাও পাচ্ছেন এখানে।
যদিও অনেকেই মনে করেন সেলফোন বর্তমান সময়ের একটি উদ্ভাবন, তবে এর শুরুটা অনেক আগের। প্রায় এক শতাব্দী আগের অংশেও বিস্তৃত এ ইতিহাস। সর্বপ্রথম মোবাইল ফোনের তুলনায় আধুনিক পকেটের ভেতরে থাকা ফোনটি অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে। এ পথপরিক্রমায় তারা এতটাই বদলেছে যে প্রথমবারের ফোন আর বর্তমানের ফোনের মধ্যে মিল খোঁজারও অবস্থা নেই। তবে এ পরিবর্তনটা কীভাবে কতটা হলো সেটা বুঝতে হলে আমাদের একেবারে প্রথমদিকে যেতে হবে।
১৯৪৬ সালে বিশ্বের প্রথম মোবাইল ফোন বাজারে আনে এটি অ্যান্ড টি। কিন্তু সেই সময়ে তাদের সংগ্রহে ছিল খুবই কম। ছিল না সহজলভ্যতাও। সেই সময়ে শুধু সেট করে দেয়া জায়গাগুলোতেই ১১ থেকে ১২টি চ্যানেল ধরত, যার অর্থ ছিল এর থেকে বেশি যদি কখনো ব্যবহারকারী থাকত তাহলে লাইনটা বন্দি হয়ে পড়ত। তখন ব্যবহারকারীকে কল দেয়ার জন্য বা কল গ্রহণ করার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। শুরুর দিকের ওসব মোবাইল ফোনের বিদ্যুতের চাহিদাও ছিল অনেক বেশি। সেই চাহিদা পূরণ করার জন্য সেটা গাড়ির ভেতরে রাখা হতো। যেন সেগুলো বড় কোনো বিদ্যুতের উেসর ওপর নির্ভর করতে পারে যেটা কারের ব্যাটারিতে পাওয়া যায়। ফলে সেটার নামই হয়ে যায় কার ফোন।
পরে ফোন তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বুঝতে পারে ফোনের ভেতরের ইউনিটগুলো কমানো দরকার। সেই সময়ে মটোরোলাও সেলুলার ফোনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছিল। প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যাশা ছিল যে তারা বাজারে এটিঅ্যান্ডটিকে পাল্লা দেবে। ১৯৯৩ সালের দিকে এসে তারা সে লক্ষ্য অর্জন করে। কিন্তু মটোরোলার ফোনটির ওজনও বেশ বেশি ছিল, ২ দশমিক ৫ পাউন্ড, আর টক টাইম পাওয়া যেত ৩৫ মিনিট। তারপর সেটা চার্জ দিতে হতো ১০ ঘণ্টা। সেই ফোনটাও এখন আমরা যেমনটা ব্যবহার করি তার তুলনায় অনেক দূরের বিষয় ছিল। কিন্তু তা প্রতিযোগীর চোখে ধুলো দিতে বেশ কার্যকর ছিল, এমনকি সে ফোনটাই মানবজীবনকে একটি সর্বজনীন মোবাইল যোগাযোগের পথে ধাবিত করে।
এক সময় সেই বাজারের দখল নিজের হাতে নেয় নকিয়া। যদিও সেই বাজার এখন আর তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট শেয়ার ছিল ৩ শতাংশ, যা ২০০৭ সালে ছিল ৪৮ শতাংশ। এমনকি নকিয়ার ফোন আগের ফোনের ভার্সনের তুলনায়ও হালকা হতে শুরু করে। সেই সময়ে ফোনের যে আকার ছিল তা পকেটে ধরার মতো ছিল না। কিন্তু হাতে ধরে রাখার মতো ফোন এনে বেশ সাড়া ফেলে দেয় নকিয়া। টক টাইমও বেড়ে দাঁড়ায় ১ ঘণ্টায় আর চার্জ করতে প্রয়োজন হতো ৪ ঘণ্টা।
তারপর এলো প্রথম স্মার্টফোনের জীবন। যদিও এ তথ্য নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। বর্তমানে সবার হাতে হাতে থাকা স্মার্টফোনগুলো থেকে সেটা কিছুটা ব্যতিক্রম হলেও অনেক মানুষের ধারণা আইবিএমের বানানো সিমন পার্সোনাল কমিউনিকেটরই প্রথম স্মার্টফোন। ১৯৯২ সালে ওই ফোন বাজারে আসে। সেটার এমন কিছু ফাংশন ছিল যেটা পরবর্তী দেড় দশক ধরে বিস্তৃত বাজারে তেমন কোনো পরিচিতি অর্জন করতে পারেনি। সিমন সেই সময়ে মাত্র ৫০ হাজার ইউনিট বিক্রি করে এবং পরবর্তী সময়ে স্মার্টফোন যেভাবে বাজার দখল করে নিয়েছিল সেভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি।
ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাতে যুক্ত করে ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ। তারপর নতুন নতুন করে আরো অনেক কিছু ধীরে ধীরে যুক্ত হয় আধুনিক স্মার্টফোনে।
ঠিক যেভাবে এখনো নতুন নতুন মডেলে নতুন নতুন সব ফিচারের সংযোজন অব্যাহত রেখেছে বিভিন্ন ফোন তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।