এম আর মহসিন, সৈয়দপুর (নীলফামারী): সৈয়দপুরে রেলের জমি দখলে নিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জয়নাল আবেদিন ঠিকাদারকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আগামীকাল (১৮ জুলাই) রংপুরে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় তাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হলে অভিযোগের বিষয়ে তার কোনও বক্তব্য নেই বলে গণ্য করা হবে।
৬ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক মো: হোসাইন শরীফ স্বাক্ষরিত জয়নাল আবেদিন ঠিকাদারকে তলব করা নোটিশে বলা হয়, ‘অনুসন্ধানকালে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় সৈয়দপুরস্থ বাংলাদেশ রেলওয়ের অবৈধভাবে দখলকৃত ভূমির মধ্যে সৈয়দপুর উপজেলার ৭ নং কয়া মৌজার, শামসুল হক রোডের পশ্চিমে ২৮৮০ বর্গফুট ছাদপাকা তিনতলা বিল্ডিং, ১০২ বর্গফুটের ছাদপাকা দোকানঘর, ১৭৬ বর্গফুটের টিনশেড দোকানঘর, ৫৬০ বর্গফুটের ছাদপাকা প্রতিষ্ঠান, ২৮২০ বর্গফুটের ছাদপাকা প্রতিষ্ঠান এবং ১৮৯০ বর্গফুটের ছাদপাকা প্রতিষ্ঠান আপনার নামে ভোগ-দখলরত রয়েছে।’
দুদকের তলবের বিষয়ে জয়নাল আবেদিন ঠিকাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জুমবাংলাকে বলেন, অবশ্যই রংপুরে দুর্নীতি দমন অফিসে যাবো। এর আগেও একই অভিযোগে তাদে মুখোমুখি হয়েছিলাম। অভিযোগ বিষয়ে নানা তদন্ত হয়েছে। সেটার সমাপ্তি হওয়ার কথা। কেউ আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার ভবনটি সৈয়দপুর পৌরসভার সাথে রেলওয়ের যে ২৫.৭৫ একর জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে সেই এলাকায়। আর রেলের ওই জমির লাইসেন্স রয়েছে। কোনও প্রকার দুর্নীতি করিনি আমি।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ‘জয়নাল ঠিকাদারের ৪ তলা ভবনটি পৌরসভার সাথে রেলওয়ের ২৫.৭৫ একর জমি এলাকায় নয়। কারণ রেল কোনও সীমানা নির্ধারণ করে দেয়নি। উল্টো পৌরসভা নিয়ম বহির্ভূতভাবে ওই এলাকাসহ রেলের পুরো বাণিজ্যিক এলাকা বেদখল করে সরকারকে ঠকাচ্ছে। এর মামলা উচ্চ আদালতে চলমান রয়েছে।’
জয়নাল আবেদীন ঠিকাদার বর্তমানে জাতীয় পার্টির সৈয়দপুর পৌরসভা শাখার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
সৈয়দপুর শহরে রেলওয়ের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছে প্রভাবশালী মহল। দখলকৃত জমিতে নির্বিঘ্নে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য বহুতল ভবন। কোনো কোনো স্থানে এসব জমি কৌশলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে দিয়ে হরিলুট করা হয়েছে। দখলের থাবা থেকে বাদ যায়নি কেপিআই অন্তর্ভুক্ত জমিও।
জানা যায়, রেলের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশেই এসব জমি দখল করা হয়েছে। আর স্থানীয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে বেদখলকৃত জমি উদ্ধারে এতদিন উচ্ছেদ অভিযানও পরিচালনা করতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদনে সৈয়দপুরে রেলের জমি যারা দখল করেছে এবং যেসব কর্মকর্তা এই দখল প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াসহ ২৪ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
২০২০ সালের ১২ আগস্ট ‘সৈয়দপুর (নীলফামারী) বাংলাদেশ রেলওয়ের পাঁচ হাজার কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি আত্মসাৎ’ সম্পর্কিত এক অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বছর ১২ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত বছরের ১৮ মার্চ কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন রেলপথ সচিবে কাছে জমা দেয়। সেই প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী জমি দখলদার ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান এবং রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত ৮ জুন মন্ত্রণালয় থেকে রেলওয়ে মহাপরিচালককে বলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত জমি উদ্ধারে দৃশ্যমান কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।