জুমবাংলা ডেস্ক : সৌদি আরবে গত ৮ আগস্ট একটি রাজকীয় আদেশ দেন দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। আদেশে বলা হয়, তিনি এবং তাঁর ছেলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান উপস্থিত না থাকলেও বৈঠকে বসতে পারবে মন্ত্রিসভা। এই ঘোষণার মাধ্যমে কি দেশটির সিংহাসনের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারীর পথ খুলে দেওয়া হলো?
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ৩৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) সৌদি আরবের কার্যত (ডি ফ্যাক্টো) শাসক। ২০১৭ সালে তাঁর বাবা ঘোষণা দেন তিনিই হচ্ছেন সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী। এ ঘোষণার পর সিংহাসনে আরোহণের দৌঁড় থেকে বাদ পড়েন বাকিরা। আর মোহাম্মদ বিন সালমানই হয়ে ওঠেন রাজপরিবারের একচ্ছত্র অধিপতি।
২০২২ সালে মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন সৌদি বাদশাহ। এবার নতুন এক ঘোষণা দিলেন তিনি। ঘোষণা অনুযায়ী, সৌদি বাদশাহ ও যুবরাজকে ছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠক হলে তার নেতৃত্বে থাকবেন মন্ত্রিসভার সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সদস্য। আর তা হবেন বাদশাহ আব্দুল আজিজ আল সৌদের বংশধরদের কেউ। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেই প্রধান বা চেয়ারম্যান তাতে সই করবেন। ডিক্রিতে এমনই বলা হয়েছে।
এ ঘোষণার পর সৌদি ক্যাবিনেট সদস্যদের নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। রয়টার্স বলছে, ক্যাবিনেটে আধুনিক সৌদি আরবের রূপকার বাদশাহ আব্দুল আজিজ আল সৌদের সাতজন বংশধর রয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছেন জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ (৬৪), প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ (৩৬) ও বাদশাহ সালমানের দুই সন্তান।
এ সাতজনের মধ্যে প্রিন্স আবদুল আজিজ বয়স হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। বয়স হিসেবে তালিকায় প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স মানসুর বিন মোতায়েব (৭২)।
সংবাদমাধ্যম দ্য কনভারসেশনের এক প্রতিবেদন বলছে, গত ৮ আগস্ট প্রকাশিত রাজকীয় আদেশটি সৌদিতে রাজনীতির নতুন গতিপথ তৈরি করতে পারে। কেননা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কোনো ডেপুটি নেই। যুবরাজ হিসেবেও নেই, প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও নেই। এ কারণে এতদিন বোঝা যাচ্ছিল না, এ দুজনের পর কে হতে যাচ্ছেন সিংহাসনের উত্তরাধিকারী।
বছরের পর বছর সৌদি আরবের সিংহাসনে আরোহণ ও রাজনীতিতে শুধু ক্ষমতা দখলের ‘খেলা’ চলে আসছে। এতে কেউ ভাইকে সরিয়ে দিচ্ছেন, কেউবা চাচাকে। ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে পরবর্তী বাদশাহ বানাতে ভাইদের সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বাদশাহ সালমানের বিরুদ্ধে। আর মোহাম্মদ বিন সালমান কার্যত শাসক হয়ে বাকি রাজকুমারসহ অন্যদের একদম ‘চেপে ধরেছেন’।
এবার সেই চেপে ধরা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন আবদুল আজিজ। বাদশাহ ও যুবরাজের পর তিনি হয়তো উত্তরাধিকার হতে যাচ্ছেন সিংহাসনের। তবে, এখানে কিছু জটিলতা রয়েছে। তিনি এবং ক্যাবিনেটের আরেক সদস্য মানসুর বিন মোতায়েব, দুজনেই যুবরাজের চেয়ে বয়সে অনেক বড়।
এ কারণে এ দুজনের কেউ হয়তো ডেপুটি হিসেবে নিয়োগ পাবেন না। এ জন্য রাজপরিবারের বাকি পাঁচজনের মধ্যেই এখন লড়াই হবে। এ পাঁচজনের মধ্যে প্রতিরক্ষা বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রিন্স খালিদ বিন সালমান ছাড়া বাকিরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয় পেয়েছেন উত্তরাধিকারসূত্রে।
এদিকে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমানের সুপারিশের ভিত্তিতে দেশটির প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল আনা হয়েছে। আরব নিউজ বলছে, সম্প্রতি রাজকীয় ফরমানে বলা হয়, যৌথ বাহিনীর কমান্ডার লে. জেনারেল মুতলাক বিন সালেম বিন মুতলাক আল-আজিমা সামরিক চাকরি থেকে অবসর নেবেন। তাঁকে রয়্যাল কোর্টে উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
নৌবাহিনীর চিফ অব স্টাফ লে. জেনারেল ফাহাদ বিন আবদুল্লাহ বিন সালেহ আল গুফাইলিকে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁকে লেফটেন্যান্ট জেনারেলের পদমর্যাদায় ডেপুটি চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। ক্যাবিনেটের জেনারেল সেক্রেটারিয়েটের উপদেষ্টা সামির বিন আবদুল আজিজ বিন মোহাম্মদ আল তাবিবকে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
প্রিন্স খালিদ বিন সালমানের সুপারিশে এসব রদবদল হয়েছে বলে জানা যায়। ক্যাবিনেটে তাঁর প্রভাব বেড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে তিনিই যুবরাজের ডেপুটি হবেন, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। যদিও কয়েকটি মহল থেকে তাঁর পক্ষেই মত আসছে।
এখনো স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না কারা হতে যাচ্ছেন উত্তরসূরি। এ ক্ষেত্রে বাদশাহ ও যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও নৈকট্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে উঠতে পারে। সৌদি আরবের উত্তরাধিকারের ধারা যেভাবে নতুন দিকে মোড় নেয়, তাতে এবার কোনদিকে যাবে, তা এখনো আন্দাজ করা যাচ্ছে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।