১৯৫৩ সালে ব্রিটিশরা বার্মার দক্ষিণ অংশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। ১৮৬৭ থেকে ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ইন্ডিয়া স্টিম নেভিগেশন কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার অফিসার হিসেবে কাজ করা ডেভিড জে মিচেল লিখেছেন, উপমহাদেশের বাণিজ্যিক সুযোগগুলো কেবল রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণের মাধ্যমেই নয়, জাহাজের মাধ্যমেও বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ মনে হয়েছিল।
ইরাবতী মোহনার নিম্নাঞ্চল এবং দক্ষিণ বার্মার উপকূলীয় অঞ্চলগুলো ব্রিটিশদের অধীনে চলে আসার দুই বছরের মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতা এবং রেঙ্গুনের মধ্যে একটি নিয়মিত মেইল স্টিমশিপের জন্য দরপত্র আহ্বান করে।
কলকাতার সাথে আকিয়াব, রেঙ্গুন এবং মৌলমেইনের সাথে নিয়মিত ডাক পরিবহনের জন্য দুটো জাহাজ কাজ শুরু করে, যারা প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর ডাক পরিবহন করতো।১৮৫৭ সালের ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ তথা সিপাহী বিদ্রোহ শুরু হয়। কলম্বো থেকে কলকাতায় ব্রিটিশ সৈন্যদের পরিবহনের জন্য জাহাজটি ব্যবহার করা হয়।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, কেপ অব গুড হোপের সাথে প্রায় একই আকারের ‘বাল্টিক’ নামে আরেকটি স্টিমার কলকাতা-রেঙ্গুন রুটে যুক্ত হয়। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের এই বাণিজ্য খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। আটটি ভিন্ন জাহাজ পণ্য এবং যাত্রী পরিবহন শুরু করে। ফলে গুরুত্বের দিক থেকে রেঙ্গুন উপমহাদেশে কলকাতার পরেই দ্বিতীয় প্রধান শহর হয়ে ওঠে। রবিবার বাদে প্রতিদিন অন্তত একটি জাহাজ রেঙ্গুনে থামতো বলে জানা যায়।
শহরের কেন্দ্রীয় অংশের বিকাশ করতে দুই দশক (১৮৬২-৭২) সময় লেগে যায়। আর এর সবই হয়েছিল ভারতীয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে আমদানি করা ভারতীয় শ্রমিকদের মাধ্যমে। নিম্ন বার্মায় বাণিজ্য ও কৃষির সম্প্রসারণের সাথে সাথে রেঙ্গুনের আকারও দ্রুত বাড়তে থাকে।
বার্মায় ভারতীয় অভিবাসীদের চাহিদা এতটাই বেশি ছিল যে, মাদ্রাজ এবং বিশাখাপাটনামের মতো জায়গা থেকে স্টিমার সার্ভিস চালু করা হয়। ব্রিটিশরা শাসকরা ভারতীয় অভিবাসীদের বার্মায় পরিবহনের জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে ভর্তুকি দেওয়া শুরু করেছিল।
বিংশ শতাব্দীতেও কলকাতা-রেঙ্গুন স্টিমার সার্ভিসকে গুরুত্ব দিতে থাকে ব্রিটিশরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারত ও বার্মা যথাক্রমে ১৯৪৭ এবং ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর স্টিমার সার্ভিসটি পুনরায় চালু করা হয়।
১৯৬২ সালে বার্মিজ নেতা জেনারেল নে উইন ভারতীয়দের দেশ থেকে বহিষ্কার করার পর ফেরি সার্ভিসটি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। ষাটের দশকে প্রায় ৩ লক্ষ ভারতীয়কে বার্মা থেকে বের করে দেওয়া হয়। এভাবেই অবসান হয় প্রায় একশ বছর ধরে চলা দুই অঞ্চলের যোগাযোগের মূল মাধ্যমের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।