আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সমগ্র অস্তিত্ব দিয়েই ভালোবাসে মানুষ। তারই এক অনন্য নজির স্থাপন করে গেছেন মোঘল সম্রাট শাহজাহান। স্ত্রীকে ভালোবেসে বানিয়েছেন তাজমহল। পৃথিবীর আর কোনো প্রেমিক বা স্বামী হয়তো এমন কিছু আর কেউ করে দেখাতে পারবে না। তবু কাউকে পাগলের মতো ভালোবাসতে তো কোনো বাধা নেই! সম্প্রতি এমনই এক প্রেমিক স্বামীর খোঁজ মিলেছে উদীয়মান সূর্যের দেশে।
সাগর ছেনে মণি-মুক্তা বের করে নিয়ে আসেন ডুবুরিরা। কিন্তু এমন এক ব্যক্তিকে পাওয়া গেছে, যিনি কি না প্রলঙ্করী ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া স্ত্রীর খোঁজে ১৩ বছর ধরে সাগরে ডুব দিয়ে যাচ্ছেন। সাগরে ডুব দিতে দিতে গায়ের চামড়া মলিন হয়ে গেছে তার। তবু হার মানছেন না তিনি। খুঁজে বের করতেই হবে স্ত্রীকে- যেন মনে মনে এমন পণই করেছেন জাপানের সাবেক সেনা সদস্য ইয়াসৌ তাকামাতসু।
তাকামাতসুর বয়স এখন ৬৭ বছর। ২০১১ সালে জাপানের ওনাগাওয়ায় প্রলয়ঙ্করী সুনামির পর তাকামাতসুর স্ত্রী ইয়োকো নিখোঁজ হয়। শেষবারের মতো স্বামীকে পাঠানো ক্ষুদে বার্তায় ইয়োকো লিখেছিল, তুমি কী ঠিক আছ? আমি বাড়ি যেতে চাই। স্ত্রীর সেই কথামালাই তাকামাতসুকে ইয়োকোর খোঁজে এতটা পথ নিয়ে এসেছে। ১৩ বছর পর আজও স্ত্রীকে খুঁজে ফিরছেন তাকামাতসু।
সম্প্রতি মাদারশিপ নামে একটি ডিজিটাল কোম্পানি একটি ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করে। সেখানে নিজের গল্প বলতে শোনা যায় তাকামাতসুকে। স্ত্রীর জন্য এমন ভালোবাসার গল্প রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে। কাঁদাচ্ছে নেটিজেনদের। সুনামি আঘাতের সময় ব্যাংকে কাজ করছিলেন ইয়োকো। ওই সময় তার শাশুড়িকে অন্য শহরে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন তাকামাতসু।
সুনামি আঘাত হানার এক মাস পর ব্যাংক থেকে ইয়োকোর মোবাইল ফোন খুঁজে পান তাকামাতসু। মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখতে পান, বাড়ি যাওয়ার কথা লিখে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছিল স্ত্রী। এরপরই স্ত্রীকে খুঁজতে শুরু করেন তাকামাতসু। প্রথম আড়াই বছর স্ত্রীকে খোঁজ করেন তিনি। আশ্রয় শিবির, পাহাড়-পর্বত, মর্গ কোনো কিছু বাদ দেননি তাকামাতসু।
২০১৩ সালে ৫৬ বছর বয়সে স্ত্রীকে সাগরে খোঁজার সিদ্ধান্ত নেন তাকামাতসু। তখন থেকেই তিনি ডাইভিং শেখা শুরু করেন। ৬০০ বারের বেশি সমুদ্রে ডুব দেওয়া তাকামাতসু বলেন, আমি জানতাম এটা কঠিন হবে। আমার কাছে এটা খুব কঠিন লেগেছে, কিন্তু এটা ছাড়া আর কী করতে পারি। তাকে খোঁজা ছাড়া আমার কাছে আর কোনো অপশন নেই। সাগরে গেলে মনে হয়, আমি তার কাছাকাছি আছি।
স্ত্রীর প্রতি তাকামাতসুর এমন ভালোবাসার গল্প নিয়ে ‘আই ওয়ান্ট টু গো হোম’ নামে বই বেরিয়েছে। এ ছাড়া ‘দ্য ডাইভার’ এবং ‘নোহোয়ার টু গো বাট এভরিহোয়ার’ শিরোনামে দুটি ডকুমেন্টরিও তৈরি করা হয়েছে। ২০১১ সালে ভূমিকম্পের পর জাপানে প্রলয়ঙ্করী সুনামিতে ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এখনো নিখোঁজ আছেন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।