জুমবাংলা ডেস্ক : ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়া সর্ম্পকের অভিযোগ তুলে স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে চলে যান বাবার বাড়ি। এরপর থেকে স্ত্রী প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠেন বলে জানান অনেকে। তারা বলছেন, বাবার বাড়িতে বসেই স্বামীকে শায়েস্তা করতে নানা তৎপরতা চালাতে শুরু করেন স্ত্রী।
একপর্যায়ে নিজেদের লোক দিয়ে শ্বশুড়-শাশুড়িকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় স্বামী মামলা করায় স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতে যৌতুক মামলা ঠুকে দেন। এরপর ক্ষোভে-অপমানে স্বামী বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার আঁচারগাও ইউনিয়নের সিংদই গ্রামে আত্মহত্যার এ ঘটনা ঘটে। শুক্রবার ময়নাতদন্তের পর লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, ওই গ্রামের মো. রইছ উদ্দিনের ছেলে মো. শামীম মিয়া প্রায় ১০ বছর আগে বিয়ে করেন পাশের খাকদারা গ্রামের মো. মতিউর রহমানের মেয়ে সাবিকুন্নাহার তানিয়াকে। দাম্পত্য জীবনে ৫ বছর ও ৩ বছরের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। গত এক বছর ধরে স্বামীর পরকীয়া সর্ম্পক রয়েছে অভিযোগ তুললে দু’জনের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে স্বামী অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করেছে সন্দেহ করে স্ত্রী তার বাবার বাড়ি চলে যান। কিন্তু স্বামী শামীম ঘটনাটি মিথ্যা বলে স্ত্রীকে বেশ কয়েকবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। স্ত্রী বাড়িতে ফিরে না আসার পেছনে শ্বশুর-শাশুড়ির ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেন শামীম।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রী তানিয়া বেশ কয়েকবার স্বামীকে শায়েস্তা করার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। একপর্যায়ে গত ১ জুলাই দুপুরে নিজেদের লোক দিয়ে শ্বশুর-শাশুড়িকে মারধরসহ বাড়িঘর ভাঙচুর করান। এ ঘটনায় শামীম শ্বশুড়বাড়ির ৪/৫ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়।
এ অবস্থায় স্ত্রী তানিয়া ঘটনাটি কোনোভাবে মানতে না পেরে গত ১১ আগস্ট স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন ও যৌতুকের অভিযোগ তুলে ময়মনসিংহ আদালতে মামলা করেন।
শামীমের চাচাতো ভাই মাজহারুল হক জানান, গত বৃহস্পতিবার শামীম আদালতে গিয়ে নকল তুলে মামলার সত্যতা পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরে বিকেলে বাড়িতে গিয়ে কারও সঙ্গে কোনো কথাবার্তা না বলে নীরব হয়ে যান। এ অবস্থায় রাতে বাড়ির পাশে সড়কে বসেই কীটনাশক পান করেন তিনি। গুরুতর অসুস্থ হলে প্রথমে নান্দাইল ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রাত ১১টার দিকে শামীম মারা যান।
নিহত শামীমের বোন বিলকিস আক্তার জানান, বিনা অপরাধে মিথ্যা অজুহাত তুলে তার ভাইয়ের স্ত্রী তানিয়া বিভিন্নভাবে অত্যাচার নির্যাতন ছাড়াও মা-বাবাকে মারধর করে পঙ্গু করে দেয়। এরপর ভাইয়ের বিরুদ্ধে আরেকটি মিথ্যা মামলা করায় ভাই সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনার জন্য তিনি তানিয়াসহ পরিবারের লোকজনের বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শ্বশুর মতিউর রহমান শামীমের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে তারা কোনোভাবেই জড়িত নন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ওই ছেলে (শামীম) নেশাখোর। তার পরিবারের মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে।
নান্দাইল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, শামীমের মা-বাকে মারধরের ঘটনায় মামলার পরপরই একজনকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় থেকেই শামীম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এ অবস্থায় মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।