জুমবাংলা ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আদর্শনগর এলাকায় এক নারীকে ১০ টুকরো করে হত্যা করে লাশ গুমের ১০ মাস পর চাঞ্চল্যকর ঘটনার মূল হোতা কথিত স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।
বৃহস্পতিবার ফতুল্লার আদর্শ নগর এলাকায় একটি ডোবায় অভিযান চালিয়ে লাশের এই অংশবিশেষ ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা একটি বটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ডোবা থেকে নারীর হাঁড়গোড়ের ১৯টি অংশবিশেষ ও বটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত বছরের ৫ এপ্রিল একই ডোবা থেকে অজ্ঞাত তরুণীর গলিত মাথার খুলি উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার ১০ মাস পর রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই। নিহত তানজিলা রংপুরের মিঠাপুরুরের চিথলীর আব্দুল জলিলের মেয়ে।
গ্রেফতার রাসেল রংপুরের মিঠাপুকুরের কুমুরগঞ্জের হাবিবুর রহমানের ছেলে। গত ৫ এপ্রিল ২০২১ সালে ভিকটিমের মাথার খুলি দেওভোগ আদর্শনগর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল ফতুল্লা থানার পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলাটি পিবিআই এর কাছে তদন্তভার আসলে সেই মামলার সূত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে একমাত্র আসামি রাসেলকে ২২ ফেব্রুয়ারি রংপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পিবিআই এর পুলিশ সুপার (এসপি) মনিরুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল স্বীকার করে যে, গলাকাটা মাথাটি তার কথিত স্ত্রী তানজিনার খণ্ডিত মাথা। রাসেল গত ২০০৮ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫.০০ এসএসসি এবং ২০১০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় একই বিভাগ হতে জিপিএ ৩.৭০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তীতে সে জীবন জীবিকার তাগিদে ঢাকার সাভার এলাকায় চলে আসে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত সেখানে সানি ট্রেডার্স নামীয় একটি সিমেন্টের দোকানে চাকরি করেন। পরে তিনি নারায়ণগঞ্জ এসে রনি নিট গার্মেন্টেস চাকরি করেন। এরমধ্যে তার পার্শ্ববর্তী এলাকার তানজিনার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু আসামি খর্বাকৃতির ও কালো বর্ণের হওয়ায় ভিকটিম তানজিনার পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে না নিলে আসামি রাসেল পরবর্তীতে ২০১৯ সালে মোনালিসা নামে একটি মেয়ের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন।
বিয়ের সংবাদ শুনে তানজিনা তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব কলহ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন এবং গার্মেন্টেসে চাকরি নেয়। এ সময় রাসেলের সঙ্গে তানজিনা পুনরায় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং তারা আবার বিয়ে করে। যদিও এ সংক্রান্তে বস্তুনিষ্ঠ কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় নি বলে জানায় পিবিআই। এরপর থেকে তানজিনা এবং রাসেল স্বামী স্ত্রী হিসেবে ফতুল্লা থানার পশ্চিম দেওভোগ আদর্শ নগর রঙ্গিলা রোড মো. নোয়াবের বাড়ির তৃতীয় তলায় বাসায় বসবাস শুরু করেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই তানজিনা রাসেলের মৃত বোনের স্বামী মোস্তফাসহ বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে গোপনে কথা বলা শুরু করে। উক্ত বিষয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়।
২০২১ সালের ২৯ মার্চ রাত ৩ টায় রাসেল শবে বরাতের নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে তানজিনাকে অন্যত্র মোবাইলে কথা বলতে দেখে রাগান্বিত হয়ে মারপিট শুরু করে। এক পর্যায়ে রাসেল ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ঘরে থাকা রান্নার কাজে ব্যবহার করা বটি দিয়ে তানজিনার গলায় আঘাত করে। এতে তার গলা কেটে রক্ত বের হয় এবং সংজ্ঞা হারিয়ে ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর তানজিনাকে বটি দিয়ে ধর থেকে মাথা কেটে আলাদা করে ফেলে। এবং হাত পাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ টুকরো টুকরো করে ফ্রিজে রেখে দেয় রাসেল।
আসামি পরে বিভিন্ন সময়ে খণ্ডিত দেহের বিভিন্ন অঙ্গ তার বাসার ছাদ থেকে পার্শ্ববর্তী ময়লার স্তুপের মধ্যে ফেলে দেয়। ২০২১ সালের ৪ মার্চ গভীর রাতে তানজিনার খণ্ডিত মাথা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভর্তি করে ফতুল্লা থানার বাড়ৈভোগ বটতলা এলাকায় ডোবায় ফেলে দেয়। এরপর ভাড়া বাসা ছেড়ে হাড়ি পাতিল ও হত্যার কাজে ব্যবহৃত বটি নিয়ে গোপনে পালিয়ে যায় এবং সোনারগাঁ থানার ছোট সাদিপুর এলাকায় ফিরোজ হোসেনের একটি টিন সেড ঘর ভাড়া নেয় রাসেল।
পরবর্তীতে ভিকটিমের আত্মীয় স্বজন তার খোঁজ খবর না পেয়ে তানজিনার ভাগিনা পলাশ ফতুল্লা থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করে। জিডির সূত্র ধরে থানা থেকে আসামিকে ফোন দিলে সে সোনারগাঁ থেকে পালিয়ে যায়। তার ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ করে দেয়। রাসেল বিভিন্ন সময়ে নামে বেনামে ২৫ টি মোবাইল এবং ১৫ টি সিম ব্যবহার করে এবং তার অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার ভাড়া বাসা থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত বটি, মরদেহ সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত ফ্রিজ তানজিনার ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়। আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমের দেহের অন্যান্য খণ্ডিত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং তার অংশ বিশেষ ময়লার স্তুপ থেকে উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, আমাদের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল এটা। আমরা গতকাল থেকে ডোবার সেচ কাজ চালাই এবং আজ সারা দিনে আমরা এই কয়েকটা টুকরো উদ্ধার করতে পেরেছি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। আমরা এখনও তল্লাশী করছি।
এ ঘটনটি যখন ঘটে তখন করোনার সংক্রমণ ব্যাপক ছিল। আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং যেটা ছিল সেটা হল আমাদের কাছে সূত্র বলতে শুধু একটি ডোবা ছিল এবং আমরা একটি খুলি পেয়েছি। সংবাদ মাধ্যমে সেটা দেখে ভিকটিমের দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয় থানায় জিডি করে। সেটার মাধ্যমে ভিকটিমকে চিহ্নিত করেছি। এখন এগুলো ডিএনএ টেস্ট করে দেখবো কী ফলাফল আসে।
তিনি জানান, ঘটনাটি শবে বরাতের রাতে ঘটেছিল। তানজিনাকে হত্যার পর লাশ ছাদে নিয়ে কুচি কুচি করে কেটে তার বাড়ির পেছনের যেই ময়লার ভাগাড় বা ডোবাটি ছিল সেখানে ফেলে দেয়। আসামির রিমান্ড আবেদন করা হবে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে বিস্তারিত জিজ্ঞেসাবাদ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।