জুমবাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় সফুরা খাতুন (৪৫) নামে মধ্যবয়সি এক নারীর রহস্যজনক মৃত্যুর পর লাশ দাফনে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে নিহতের স্বামীর বিরুদ্ধে।
সোমবার সকাল ৮টার দিকে ওই নারীর মারা গেলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দাফন দূরের কথা কবরও খনন করতে পারেনি স্বজনরা।
এসব তথ্য জানিয়েছেন মৃত সফুরা খাতুনের প্রথম ঘরের ছেলে লোকমান হাকিম। সফুরা খাতুন সাতকানিয়া থানার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের সেনেরহাট বাজার এলাকার অলু মিয়ার মেয়ে। ২০০৬ সালে সফুরা খাতুনের স্বামী আবুল কাশেম মারা গেলে একই এলাকার মোস্তফা আলী নামে প্রতিবেশী একজনকে বিয়ে করেন তিনি।
মৃত সফুরা খাতুনের দ্বিতীয় স্বামী মোস্তফা আলীর দাবি, তার স্ত্রী ঠুনকো বিষয় নিয়ে অভিমান করে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে।
তবে মৃতের আগের সংসারের দ্বিতীয়পুত্র লোকমান হাকিমের অভিযোগ, তার মা সফুরা খাতুনকে নির্যাতন করে হত্যার পর সৎবাবা মোস্তফা আলী কথিত বিষপানে আত্মহত্যার গুজব ছড়িয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের মর্গে মৃতের ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। এরপর লোহাগাড়ার বড় হাতিয়া কুমিরা ঘোনা ৭নং ওয়ার্ডে গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয় দাফনের জন্য। আর সেখানে কবর দিতে বাধা হয়ে দাঁড়ান মোস্তফা আলী ও তার প্রথম স্ত্রীসহ ছেলে-মেয়ে।
মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন জানান, ‘বড় হাতিয়া কুমিরা ঘোনা ৭নং ওয়ার্ডের সফুরা খাতুনের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলেই পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কবর দিতে বাধা দেয়ার বিষয়ে আমাদের কেউ জানায়নি। খবর নিয়ে দেখছি।’
মৃত সফুরা খাতুনের লোহাগাড়ার বড় হাতিয়া কুমিরাঘোনা ৭নং ওয়ার্ডের আবুল কাসেমের সংসারে তার চার ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। ২০০৬ সালে তার স্বামী আবুল কাসেমের মৃত্যুর পর একই গ্রামের ৬ সন্তানের জনক মোস্তফা আলীকে দ্বিতীয় স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেন।
মৃত সফুরা খাতুনের ছেলে লোকমান হাকিমের অভিযোগ, গত ২২ ডিসেম্বর রাতে তার মা সফুরা খাতুনকে সৎবাবা মোস্তফা আলী কয়েক দফা মারধর করে। পরের দিন ২৩ ডিসেম্বর সোমাবার সকাল ৮টার দিকেও সফুরাকে ফের মারধর করেন। এরপর দুপুরের দিকে স্থানীয়দের কাছ খবর পান তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে।
লোকমান হাকিম বলেন, ‘আমাদের মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে সৎবাবা মোস্তফা আলীর বাসায় যাই। সেখানে গিয়ে বিভিন্নজনের সাথে কথা বলে জানতে পারি আমাদের মা যখন মৃত্যু যন্ত্রণায় বাসায় ছটফট করছিলেন সে সময় সৎবাবা মোস্তফা আলী বাসায় ছিলেন। স্থানীয়রা মাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে এগিয়ে গেলেও সৎবাবা মোস্তফা আলী হাসপাতালে নিতে দেয়নি। আমাদের বিশ্বাস মাকে দফায় দফায় নির্যাতনের পর বিষ জাতীয় কিছু খাইয়ে দিয়েছে অথবা গলাটিপে হত্যার পর কথিত বিষপানের গুজব ছড়িয়েন। কারণ লাশের মুখে বিষের কোনো গন্ধ নেই ‘
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. বেলাল জানান, মোস্তফা আলী প্রথম স্ত্রী ও ৬ সন্তান থাকা অবস্থাতেই পাঁচ সন্তানের জননী সফুরা খাতুনকে বিয়ে করেন। এরপর তারা একটি ভাড়া বাসা নিয়ে একই গ্রামে আলাদাভাবে বসবাস শুরু করেন। পাঁচ বছরের সংসার অবস্থায় সোমবার সফুরা খাতুনের মৃত্যু হয়।