দিলরুবা খাতুন, বাসস: স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে নিয়ে মেহেরপুরবাসী আছেন তুমূল উচ্ছ্বাসে। এটি কৃষিনির্ভর একটি জেলা। স্থানীয়রা মনে করছেন পদ্মা সেতুর কল্যাণে মেহেরপুর হবে দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত জেলা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে এখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
মেহেরপুরের মানুষ আশা করছেন মুজিবনগর বিশ^বিদ্যালয়, প্রস্তাবিত মুজিবনগর স্থলবন্দর বাস্তাবয়ন হলে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যেও সামাজিক, অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন হবে। এই অঞ্চলের মানুষের আর্থ সামাজিক ও জীবন যাত্রার মানের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। পদ্মা সেতু ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন যাত্রাকে বেগবান করবে।
মেহেরপুর কৃষিনির্ভর একটি জেলা। এ পর্যন্ত জেলায় কোনও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। অসম্পূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। প্রাচীন কালে শুধুমাত্র নদীপথ ও কাঁচা সড়ক পথে মেহেরপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা স্টেশন সংযুক্ত হয়। দেশ বিভাগের পর মেহেরপুর সবদিক থেকেই সংকুচিত হয়ে পড়ে। জেলার মানুষের বিকল্প কোনও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকাতে আদিম অর্থনৈতিক কর্ম হিসেবে কৃষিই একমাত্র পেশা।
উর্বর মাটি ও অনুকূল জলবায়ু সবসময় অর্থনৈতিক কর্ম হিসেবে কৃষিই একমাত্র পেশা। উর্বর মাটি ও অনুকুল জলবায়ু সবসময় সহায়তা করছে। কৃষিশস্য, মৎস্য, সবজি এবং গবাদি পশু পালনের ক্ষেত্রে মেহেরপুরের মানুষ সব সময় এগিয়ে। এই অগ্রসরতার কারণে জেলার কৃষির সাথে জড়িত কৃষকের ওপর নেমে এসেছে বিভিন্ন প্রকার নির্যাতন নিপিড়ন। বর্গিদের আগমন ও শস্য লুট, সুলতানদের অতিরিক্তি শস্যকর এবং শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের নীলচাষের বেদনাদায়ক ইতিহাস সেই কথায় স্মরণ করিয়ে দেয়। পদ্ধতিগত দিক থেকে মেহেরপুরের উৎপাদিত ফসল জাতীয় খাদ্যভান্ডারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ১৯৩৮ সালে ফ্লাড কমিশনের রিপোর্টে জানা যায়, এই অঞ্চলের ২৯% লোকই ভূমিহীন এবং ৪০% লোকের জমি আছে এক একরের কম। গড় হিসেবে শতকরা ২৫ ভাগ লোক ১ বিঘা পরিমাণ জমির মালিক। এই অঞ্চলের বিত্তবানদের প্রচুর পরিমাণ জমি থাকলেও তার যথাযথ ব্যবহার ছিল না। আবার অধিক লোকের কম পরিমাণ জমি থাকলেও যথাযথ কৃষিজ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে কৃষককুলে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের উপস্থিতি প্রাচীনকাল থেকেই প্রকট। মধ্যবিত্তের কৃষির ধরণই ভরণ-পোষণ যোগ্য। এক কথায় খেয়ে পরে বাঁচা ছিলো গত ৮০ দশক পর্যন্ত। ৭০ দশকে আলু, গম আবাদের মাধ্যমে ভূমিতে সেচকাজ শুরু হয়। আধুনিক ফসলের ব্যাপক প্রসারের ফলে বর্তমানে জমিতে সারা বছরই আবাদ হচ্ছে। ফলে ঋতু নির্ভরতা ফসলের আবাদ নেই বললেই চলে। শস্যের ধরণ, মাটির বৈশিষ্ট্য, সহনশীলতা, জলবায়ু, পানির প্রাপ্যতা ও আনুষঙ্গিক বৈশিষ্টের কারণে মেহেরপুরে চাষাবাদে এখন বিপ্লব এসেছে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম পায়। না। পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক ও জীবন যাত্রার মানের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।
মেহেরপুরের ইতিহাসবিদ ও প্রবীণ সাংবাদিক তোজাম্মেল আযম পদ্ম সেতু প্রসঙ্গে বলেছেন- পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১টি জেলার আন্তঃ যোাগাযোগ বেড়ে যাবে। যা কৃষিতে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। বর্তমান সরকার কৃষকদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। প্রশিক্ষণের ফলে কৃষিতে ফসল উৎপাদন বেড়ে গেছে বহুগুণ। কৃষকদের জন্য সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করায়, কৃষিতে নতুন-নতুন ফসল উৎপাদন হচ্ছে। কৃষিতে উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় ঋণ গ্রহীতাদের ব্যাংকের আওতায় প্রশিক্ষণ দেয়া যায়, তবে তা ইতিবাচক প্রভাব রাখবে অবশ্যই।
পদ্মা সেতু চালু হলে মেহেরপুরের কৃষিতে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক লাভবান হবে বলে বলেন সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নাসরিন পারভিন। তিনি বলেন- মেহেরপুরের মাটিতে সোনা ফলে। এখানকার মাটিতে সব ধরণের ফসল উৎপাাদন হয় এবং স্বাদে অনন্য। মেহেরপুরে উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চিটাগাং, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হয়। এখানকার সবজিসহ আম লিচুর সমাদর দেশের বাইরে ইউরোপ মহাদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। মেহেরপুরের আম সুস্বাদু। হিমসাগর আমের তুলনা হয়না। ফেরি পারাপরে যানজট থাকায় বেশির ভাগ সময়ই পথেই সবজি পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। পদ্মা সেতু চালুর ফলে ফেরিতে চাপ কমবে। যানজট থাকবে না। ফলে সবজিসহ কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য খুব কম সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছবে। এতে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হবে। পদ্মা সেতুতে সড়কপথের পাশাপাশি মেহেরপুরে রেলের সংযোগ যত দ্রুত চালু হবে কৃষিতে তত উন্নয়নের গতিময়তায় নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস পরিলক্ষিত হবে। তবেই ২০৪১ সালের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তাবায়ন হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।