দেশে আইন-শৃঙ্খলার বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে তিনি জানিয়েছেন, পুলিশের হাতে আর মারণাস্ত্র থাকবে না। এই ঘোষণা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাঠামো এবং দায়িত্ব পালনের পদ্ধতিতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে।
উপদেষ্টা জানালেন: পুলিশের হাতে আর থাকবে না মারণাস্ত্র
সোমবার (১২ মে ২০২৫) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ৯ম আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ সভার পর এই ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি—পুলিশের হাতে আর কোনো মারণাস্ত্র থাকবে না। এই সিদ্ধান্ত আজই সভায় নেওয়া হয়েছে এবং এটি বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে।”
Table of Contents
এই পরিবর্তনের ফলে এখন থেকে মারণাস্ত্র থাকবে কেবল আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (APBn)-এর সদস্যদের কাছে। সাধারণ পুলিশ সদস্যরা আর কোনো মারণাস্ত্র বহন করতে পারবে না, তবে রাইফেল তাদের কাছে থাকতে পারবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মতে, APBn-এর দায়িত্ব অন্যান্য পুলিশের তুলনায় আলাদা এবং তারা বিশেষ অপারেশন পরিচালনার সময়ই কেবল মারণাস্ত্র ব্যবহার করবে।
মারণাস্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থাপনা ও কমিটির দায়িত্ব
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে যার নেতৃত্বে আছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী। এই কমিটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পাশাপাশি পুলিশের অস্ত্র ব্যবহার ও প্রশিক্ষণ কাঠামো পর্যবেক্ষণ করবে।
আইন-শৃঙ্খলার বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার পুলিশের কার্যক্রমে জবাবদিহিতা ও জনবিশ্বাস আরও সুদৃঢ় করতে চাচ্ছে। এধরনের পরিবর্তন অতীতেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল, কিন্তু এবার তা বাস্তবায়নের দিকে গড়াচ্ছে।
শ্রমিকদের বেতন ও নিরাপত্তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বার্তা
উক্ত সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, “গার্মেন্টস শ্রমিকদের বৈধ বেতন-ভাতা ঈদের আগে পরিশোধ করতে হবে। অবৈধ দাবি নিয়ে যদি কেউ রাস্তায় নামে, তাকে রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না।”
তিনি জানান, হাটে এবং হাইওয়েতে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবার প্রতিটি কোরবানির গরুর হাটে ১০০ জন আনসার মোতায়েন করা হবে। পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে চাঁদাবাজি, ছিনতাই বা মলম পার্টির কার্যক্রম দমন করা যায়।
ভারত থেকে পুশইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ভারত আমাদের দেশে কিছু লোককে পুশইন করছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশের নাগরিক হলেও কিছু অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিও রয়েছেন।” এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত তথ্য ও পরিবর্তনের তাৎপর্য
- প্রথমবারের মতো পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রমে মারণাস্ত্র না থাকার ঘোষণা
- APBn-এর মাধ্যমে বিশেষ অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা
- বিশেষ কমিটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের তদারকি
- গার্মেন্টস শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কঠোর অবস্থান
- সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারে পদক্ষেপ
পুলিশের হাতে আর মারণাস্ত্র থাকবে না—এই ঘোষণার মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছেন। এর মাধ্যমে পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও বেশি মানবিকতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।
সচরাচর জিজ্ঞাসা (FAQs)
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কে?
বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হচ্ছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন কবে থেকে শুরু হবে?
এই সিদ্ধান্তটি সদ্য নেওয়া হয়েছে, তাই বাস্তবায়নে কিছু সময় লাগবে।
পুলিশের কোন বাহিনীর কাছে মারণাস্ত্র থাকবে?
শুধুমাত্র আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (APBn) সদস্যদের কাছেই মারণাস্ত্র থাকবে।
রাইফেল কি পুলিশের কাছে থাকবে?
হ্যাঁ, পুলিশের কাছে রাইফেল থাকবে তবে মারণাস্ত্র থাকবে না।
শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে সরকার কী অবস্থান নিয়েছে?
বৈধ দাবি অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে, কিন্তু অবৈধ দাবি নিয়ে রাস্তায় নামা বরদাস্ত করা হবে না।
ভারত থেকে পুশইন বিষয়ে কী বলা হয়েছে?
ভারত থেকে কিছু লোক পুশইন করা হচ্ছে যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশের নাগরিক, কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তিও রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।