বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের অন্যতম নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পরিচিত স্বর্ণ আবারও তার শক্ত অবস্থান দেখালো। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, দেশের ইতিহাসে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৩৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ভরিপ্রতি ১,৬৫,২০৯ টাকায় পৌঁছেছে। স্বর্ণের দাম এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। স্বর্ণের প্রতি মানুষের চাহিদা, বাজারের চাপে এতো বড় বৃদ্ধি যে কারও জন্য বিস্ময়কর নয়। এটি শুধুমাত্র স্থানীয় বাজার নয়, আন্তর্জাতিক অর্থনীতির প্রতিক্রিয়া হিসেবেও দেখা যাচ্ছে।
স্বর্ণের দাম: নতুন উচ্চতায় ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে
২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে জানানো হয়, ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিপ্রতি ৩,০৩৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১,৬৫,২০৯ টাকায় পৌঁছেছে। এই দাম ১৭ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। স্বর্ণের বাজারে এই রকম উচ্চমূল্য পূর্বে কখনও দেখা যায়নি। এর আগে, ১৩ এপ্রিল দাম কিছুটা কমানো হলেও আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিক্রিয়া ও স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে আবারও দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Table of Contents
এক নজরে বিভিন্ন ক্যারেটের দাম:
- ২২ ক্যারেট: ১,৬৫,২০৯ টাকা
- ২১ ক্যারেট: ১,৫৭,৬৯৭ টাকা
- ১৮ ক্যারেট: ১,৩৫,১৭৪ টাকা
- সনাতন পদ্ধতি: ১,১১,৬৫৯ টাকা
এই দাম সমন্বয়ের কারণ হিসেবে বাজুস জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে পিওর গোল্ড বা তেজাবি স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পাওয়াই মূলত দামের এই ঊর্ধ্বগতির অন্যতম কারণ। পাশাপাশি, বিশ্ববাজারে সোনার দাম প্রতি আউন্সে ৩,৩০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়াও স্থানীয় দামে প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্ববাজারের প্রভাব ও স্থানীয় বাজারের প্রতিক্রিয়া
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার পেছনে বড় একটি ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য উত্তেজনা। দুই পরাশক্তির মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগের খোঁজে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছে। এতে স্বর্ণের দাম বেড়েই চলেছে। বর্তমানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩,৩০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ।
এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারও এর প্রভাব থেকে বাদ যায়নি। বাজুসের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৬ এপ্রিলের বৈঠকে স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ববাজারের প্রতিক্রিয়া ও স্থানীয় বাজারে সরবরাহ সংকট মিলিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দেশীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বর্ণের দামের এই রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে মানুষের নিরাপদ বিনিয়োগের প্রবণতা এবং বাজারে স্বর্ণের সরবরাহ সংকটের কারণে। অনেক ব্যবসায়ী আশঙ্কা করছেন, এই দাম আরও বাড়তে পারে।
রুপার বাজারে স্থিতিশীলতা বজায়
যেখানে স্বর্ণের বাজারে রীতিমতো উত্তেজনা বিরাজ করছে, সেখানে রুপার বাজারে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি। বাজুসের নির্ধারিত দরে ২২ ক্যারেট রুপার ভরিপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২,৫৭৮ টাকা, ২১ ক্যারেট ২,৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেট ২,১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ১,৫৮৬ টাকা।
এটি নির্দেশ করে যে, যেখানে স্বর্ণ একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, রুপা এখনও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল বাজার ধরে রেখেছে।
স্বর্ণের বাজার পরিবর্তন
পাঠকরা চাইলে বিস্তারিতভাবে স্বর্ণের বাজার পরিবর্তনের বিশ্লেষণ পড়তে পারেন। সেখানে বিগত বছরগুলোর দাম পরিবর্তন, বাজারের চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
স্বর্ণকে দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়। Wikipedia অনুসারে, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
বর্তমানে সোনার দাম যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, তা দেশের অর্থনীতিতে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে। স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরকারি নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। স্বর্ণের দাম নিয়ে দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত ও বাজার মনিটরিং প্রক্রিয়া আরও জোরদার করার সময় এখন।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য (FAQs)
বর্তমানে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত?
২০২৫ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরিপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১,৬৫,২০৯ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
স্বর্ণের দামে হঠাৎ এই বৃদ্ধি কেন?
স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম ৩,৩০০ ডলারে পৌঁছানো এই ঊর্ধ্বগতির মূল কারণ।
রুপার দামে কোনও পরিবর্তন এসেছে কি?
না, বর্তমানে রুপার দামে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। ২২ ক্যারেট রুপার দাম এখনও ২,৫৭৮ টাকাই রয়েছে।
বিশ্ববাজারের প্রভাব বাংলাদেশের সোনার দামে কতটা?
বিশ্ববাজারে সোনার দামের বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি দেশের বাজারেও দামের ঊর্ধ্বগতি সৃষ্টি করে।
আগামীতে স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে কি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা ও বাজারে চাহিদা বাড়তে থাকে, তাহলে স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে।
স্বর্ণ কেন নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়?
বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মুদ্রাস্ফীতির সময় স্বর্ণকে স্থিতিশীল বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।