জুমবাংলা ডেস্ক : সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা ছাড়া গণতন্ত্র সুরক্ষা পাবে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
তারা আরও বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী কালাকানুন, প্রকাশ্য এবং প্রচ্ছন্ন নানামুখী চাপ এবং বিধিনিষেধের বেড়াজাল, কর্মস্থলেও অধিকার বঞ্চিত হওয়া কিংবা নিরাপত্তা না থাকার কারণে সাংবাদিকরা স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে পারেন না। সংবাদ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এমন কোনো পন্থা নেই যা অবলম্বন করা হচ্ছে না। এর ফলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনেকটা বন্ধই হয়ে গেছে।
শনিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে সিলেট আম্বরখানাস্থ ব্রিটানিয়া হোটেলের সেমিনার কক্ষে সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন-এসএমইউজে আয়োজিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) নেতৃবৃন্দের সংবর্ধনা এবং ইফতার ও দোয়া মাহফিলে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন। রাতে বিএফইউজের (একাংশ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এসএমইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বদরের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী। আলোচনায় আরও অংশ নেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ সিলেটের সভাপতি ডা. শামীমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী, প্রফেসর ড. খায়রুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোজাম্মেল হক, প্রফেসর সাহাবুল হক, অ্যাডভোকেট এমরান আহমেদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান, আলহাজ হাবিবুর রহমান, এনামুল হক জুবের, আবদুল কাদের তফাদার, এম এ মতিন, মাহবুবুল হক চৌধুরী, আবদুল আহাদ খান জামাল, সাব্বির আহমেদ, শাহজান সেলিম বুলবুল প্রমুখ।
সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে রুহুল আমিন গাজী বলেন, স্মরণকালের ইতিহাসে মিডিয়া এবং মিডিয়া কর্মীদের এমন দুর্দিন আর কখনও দেখা যায়নি। সমাজ-রাষ্ট্রের অনিয়ম-দুর্নীতি, ত্রুটিবিচ্যুতি, নিপীড়ন-নির্যাতনের স্বরূপ নাগরিক সমাজের সামনে প্রকাশ করার শক্তিশালী ঘটনাধারী এ মহান মাধ্যম এবং মাধ্যমটির কর্মীগণই আজ ভয়ংকর এক পরিস্থিতিতে আবর্তিত হচ্ছে। গত ১৫ বছরে ৬০ জন সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে। জেলে ঢুকানো হয়েছে অনেক সাংবাদিককে।
তিনি বলেন, সত্য প্রকাশ করতে কিংবা পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে হামলা-মামলা ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বহু সাংবাদিক। এমনকি কখনও কখনও প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিতে হচ্ছে। এ ভয়ংকর পরিস্থিতির শিকার হয়ে খোদ রাজধানীতে বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক আফতাব আহমেদ, সাংবাদিক দম্পতি ফরহাদ খাঁ-রহিমা বেগম, আবুল হাসান আসিফ, ফতেহ ওসমানি, শফিকুল ইসলাম টুটুল, মাহমুদ হাসান তারেক, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের সাংবাদিক আবদুল হাকিম, পাবনায় ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাংবাদিক সুবর্ণা আক্তার নদী, কুমিল্লায় আবুল কালাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জে ইলিয়াস হোসেন, চুয়াডাঙ্গায় আবু সায়েম, সিলেটে রুহেল আহমেদ তালুকদার, নোয়াখালীতে বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরসহ বহু সাংবাদিক জীবন দিয়েছেন। কিন্তু দেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না। সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়নের কোনো বিচার হয় না। ৬০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হলো অথচ কোনো সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার হওয়ার কোনো দৃষ্টান্ত নেই। সাংবাদিকতা খুব ঝুঁকিপূর্ণ পেশা এটা ঠিক আছে। কিন্তু খুন হয়ে যাবে, নির্যাতিত হবে, বিচার হবে না- এটা কোনো স্বাভাবিক পরিবেশ নয়।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক সুরক্ষার জন্য আইনি সহায়তাটাই বেশি দরকার। বিচারহীনতার কারণে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন বাড়ছে। প্রতিটি ঘটনা অনুযায়ী দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে সাংবাদিক হত্যা কিংবা তাদের ওপর হামলা-মামলা ও হুমকি এসব অনেকটাই কমে আসবে। কিন্তু এটা কে করবে? দেশে গণতন্ত্র নেই বলে সাংবাদিক নির্যাতন বাড়ছে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকের ভালোর পক্ষে, কল্যাণের পক্ষে থাকতে হবে। সাংবাদিকরা হবে সত্যের পন্থি। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলবে। বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার হরণ, ভোটাধিকার হরণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ, অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলবে সাংবাদিকরা। এজন্যই ‘গণমাধ্যম’ ও সাংবাদিকদের ভরসার শেষ ঠিকানা মনে করে সাধারণ মানুষ। কিন্তু স্বাধীনতা না থাকায় সংবাদমাধ্যম আজ গণমুখী সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছে। সরকার নানা ধরনের কালাকানুন তৈরি করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছে। আজ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ততটুকুই আছে যতটুকু সরকারের পক্ষে যায়।
তিনি অভিযোগ করেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য প্রধান বাধা হচ্ছে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি।
সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট নিশ্চিতের নির্দেশনা পলকের
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।