জুমবাংলা ডেস্ক : সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী ও তার স্বামী শামীম তালুকদার লাবুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মৌলভীবাজার জেলার বর্ষিজোড়া এলাকা এলাকা থেকে মো. দেলওয়ার হোসেন বাচ্চুর বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এই বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন তারা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানান, গত ০৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জ সদর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জান্নাত আরা হেনরী ও তাঁর স্বামী লাবু তালুকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়ে জয়ী হন হেনরী। স্ত্রীর কল্যাণে স্বামী লাবু তালুকদার এ বছরের মার্চে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালে সিরাজগঞ্জের সবুজ কানন উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা থেকে সরাসরি সংসদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি। কিন্তু সেবার বিএনপির রুমানা মাহমুদের কাছে পরাজিত হন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন জান্নাত আরা হেনরী। তখন ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা ঘটনায় আলোচনায় আসে তাঁর নাম। এর মধ্যে আলোচিত ছিল হল-মার্ক কেলেঙ্কারি।
শিক্ষকতার পাশাপাশি জান্নাত আরা হেনরী পরে ঠিকাদারিও শুরু করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স লাম এন্টারপ্রাইজ।
২০১৪ সালে জান্নাত আরা হেনরী দলীয় মনোনয়ন হারান। এই আসনে প্রথমবার মনোনয়ন পেয়ে পেশায় চিকিৎসক হাবিবে মিল্লাত সংসদ সদস্য হন। তিনি সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জামাতা। ২০১৮ সালেও হাবিবে মিল্লাতে আস্থা রাখে আওয়ামী লীগ এবং জয়ী হন তিনি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকা থেকে হাবিবে মিল্লাত বাদ পড়েন।
জান্নাত আরা হেনরী গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন।
প্রায় দেড় দশক আগে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বছরে আয় ছিল ১ লাখ ২২ হাজার এবং ব্যয় ছিল ৮০ হাজার টাকা। তখন তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকার। এখন তার সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৫৬ কোটি ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৬০২ টাকা।
২০০৮ সাল থেকে গত প্রায় সাড়ে ১৫ বছরে জান্নাত আরা হেনরীর সম্পদ ৮৮৪ গুণ বেড়েছে। একই সময়ে তার স্বামী শামীম তালুকদার লাবুর সম্পদ বেড়েছে ১৩৬ গুণ।
তথ্য বলছে, হেনরীর সম্পদের বাজারমূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। তিনি অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে এসব সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সিরাজগঞ্জে হেনরী ও তার স্বামীর ১৬টি বাড়ি, ২টি রিসোর্ট, একটি গরুর খামারসহ কয়েক হাজার শতাংশ কৃষি ও অকৃষি জমি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জ স্টেশন রোডে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। এ ভবনটি তার বোনের নামে। ভবনটির নিচতলায় দোকান ও বাকি ফ্লোরগুলো আবাসিক হোটেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সিরাজগঞ্জ মুজিব সড়কে রাস মেডিকেয়ার নামে একটি ভবন রয়েছে। সয়দাবাদ সদানন্দপুর বাস টার্মিনাল এলাকায় দুটি বাণিজ্যিক ভবন, গজারিয়া এলাকায় হেনরী ভুবন নামে বৃদ্ধাশ্রম, মোতাহার হোসেন তালুকদার হোমিও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রয়েছে। ফজল খান রোডে হেনরী স্কলাস্টিকা স্কুল ও কলেজ। সিরাজগঞ্জ মুজিব সড়কে বিলাসবহুল তিনতলা বাড়ি, যেখানে হেনরী বাস করেন। এই ভবনের পাশেই রয়েছে একটি বেসরকারি ক্লিনিক কাম বাণিজ্যিক ভবন। এ ছাড়া মুজিব সড়কে নবনির্মিত বহুতল আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবন। নলিছাপাড়ায় রয়েছে হেনরী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ এবং হেনরী ইনস্টিটিউট অব বায়োসায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সয়দাবাদ সদানন্দপুরে বহুতল আবাসিক ভবন, গ্রামের বাড়িতে রয়েছে একতলা ভবন ও সিরাজগঞ্জ ডাকঘরের বিপরীতে একটি ভবন রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার মিরপুরে ফ্ল্যাট ও জমি আছে। আছে ১০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার।
সিরাজগঞ্জের সবুজকানন উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন হেনরী। ওই সময়ে তিনি হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করতেন। বর্তমানে তার দখলে রয়েছে ৯টি বিলাসবহুল গাড়ি। এর মধ্যে একটি প্রাডো জিপ ঢাকা মেট্রো ঘ-২১-৭৩৪৪, যার ক্রয়মূল্য ৯৫ লাখ টাকা, দুটি প্রাইভেট কারের মধ্যে ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-১৫০৩ নম্বরের গাড়িটির দাম ১৮ লাখ। ঢাকা মেট্রো-গ-৩২-২২৭৭ নম্বরের অন্যটির দাম ২৬ লাখ টাকা। একটি পিকআপ ১২ লাখ টাকা ও পাঁচটি মাইক্রোবাস যথাক্রমে ১৮ লাখ ৫০ হাজার, ১৬ লাখ ৬৫ হাজার, ১০ লাখ ৫০ হাজার, ৩২ লাখ ও ১৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার ৯টি গাড়ির মূল্য দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে হেনরীর প্রায় ৩০০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
হেনরীর স্বামীর নাম শামীম তালুকদার লাবু। ২০০৮ সালে লাবুর ৭ লাখ টাকার সম্পদ ছিল। আর ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ কোটি ৫১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭০ টাকা। ১৪ বছরে তার নামে বাড়ি, ফ্ল্যাট, কৃষি ও অকৃষি জমি কেনা হয়েছে। কেনা হয়েছে জার্মানিতে বাড়ি-গাড়ি।
এবার ত্রাণ নিয়ে উত্তরবঙ্গের বন্যাকবলিত এলাকায় যাচ্ছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।