জুমবাংলা ডেস্ক: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরবর্তী মহাপরিচালক (ডিজি) কে হচ্ছেন তা জানতে গতকাল বুধবার সারাদিন ব্যাপক আগ্রহ ছিল সবার। এই পদটিতে নিয়োগের ঘটনা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এতটা কৌতূহল এর আগে কখনও লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু করোনা মহামারির বাস্তবতায় এটিই এখন বহুল আলোচিত বিষয়গুলোর একটি। ব্যাপক দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার অন্ত নেই। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র বিতর্কের মুখে গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন ডিজি অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। এর পরই নতুন ডিজি কে হতে যাচ্ছেন- সেই আলোচনা সামনে চলে আসে। এদিকে ডিজির পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক আমিনুল হাসানকেও সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ডিজি হওয়ার তালিকায় রয়েছে এক ডজন নাম। তাদের মধ্য থেকেই একজনকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। তবে গতকাল পর্যন্ত নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি বলে একাধিক সূত্র জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক সমকালকে নিশ্চিত করেছে। আজ না হলে ডিজি নিয়োগের বিষয়টি নিষ্পত্তি হতে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।
এদিকে, অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তার চুক্তি বাতিলের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে গতকাল বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন সচিব ইউসুফ হারুন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন ডিজি নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নাম প্রস্তাব করে পাঠানো হবে। এর আলোকেই পরবর্তী ডিজি নিয়োগ হবে।
সকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে মহাপরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘পরবর্তী ডিজি নিয়োগের জন্য সবাই মিলে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দরকার হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে নেব।’
নতুন ডিজি কে: স্বাস্থ্য খাতের সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নতুন ডিজি হিসেবে সম্ভাব্য কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তবে বর্তমান করোনা মহামারির পরিস্থিতিতে তাদের মধ্যে কেউ কেউ এ দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছেন না বলেও জানা গেছে। গত জুন মাসের শুরু থেকেই আবুল কালাম আজাদকে সরিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন শুরু হয়। তখন থেকে ডিজি পদের জন্য দু’জনের নাম আলোচনায় আসে। তাদের একজন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। অপরজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। ডা. আজাদ করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর প্রায় এক মাসের মতো তিনি ডিজির দায়িত্বও পালন করেন। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে নতুন করে ডিজি পদে আরও কয়েকজন চিকিৎসক-কর্মকর্তার নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ূয়া, নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশিদ রিয়াজ, আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা, মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শামীম হাসান, টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী খান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আবুল হাসেম খানের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কয়েকজন ডিজির দায়িত্ব নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আবার কয়েকজন নিয়োগ পেতে উচ্চ পর্যায়ে লবিংও করছেন। কোনো কারণে আজ সিদ্ধান্ত না হলে আগামী রোববার ডিজি পদে নিয়োগ চূড়ান্ত হতে পারে বলে আভাস মিলেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ডিজি পদে একজন সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে। সংশ্নিষ্টরা জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেন। মহাপরিচালক হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় এসেছে শেষ সময়ে তাদের সততা, যোগ্যতা ও রাজনৈতিক পরিচয়সহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্নেষণ চলছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিচার-বিশ্নেষণ করে মহাপরিচালক পদে নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের ডিজি পদত্যাগ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী এটা জনপ্রশাসনে গেছে। জনপ্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী পদক্ষেপ তারা কী নেবে। এ বিষয়ে আগে আমাদের কাছে সিদ্ধান্ত আসুক, তারপর আমরা চিন্তাভাবনা করে আরও উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
নতুন ডিজি নিয়োগের বিষয়ে সতর্ক থাকবেন কিনা- এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব, দরকার হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে নেব।’
তার পদত্যাগেও ছিল নাটকীয়তা : করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পাশাপাশি নজিরবিহীন দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সর্বত্রই সমালোচনার ঝড় ওঠে। একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদকে দায়ী করা হচ্ছিল। করোনা সম্পর্কিত কেনাকাটায় দুর্নীতির পাশাপাশি জেকেজি ও রিজেন্ট কেলেঙ্কারিতে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এতে সরকারের হাইকমান্ড তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এ অবস্থায় তার ডিজি পদে থাকা নিয়ে চাপ বাড়ছিল। বিতর্কের মুখে গত মঙ্গলবার তিনি পদত্যাগ করেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ডা. আজাদ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতা ও দুর্নীতিতে আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণে সরকারের হাইকমান্ড থেকেই তাকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পদত্যাগও ছিল নাটকীয়তায় ভরা। সরকারি নির্ধারিত কর্মঘণ্টার পর বিকেল ৫টার দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। তখন জনপ্রশাসন সচিব অফিস কক্ষে ছিলেন না। জনপ্রশাসন সচিব সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ডিজির পদত্যাগপত্র তিনি পাননি। তবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান তার পদত্যাগের খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। পদত্যাগ করার পর থেকেই ডা. আজাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। গতকালও তার ব্যক্তিগত ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
Get the latest Zoom Bangla News first — Follow us on Google News, Twitter, Facebook, Telegram and subscribe to our YouTube channel.