এইচ এম শরিফুল হাসান: পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে আপনি হোমলেস (Homeless) মানুষের দেখা পাবেন। আমেরিকায় পাবেন, কানাডায় পাবেন, জাপানে পাবেন। সব জায়গায় আছে তারা।
হোমলেসরা সাধারণত দুই ধরনের হয়, একটা হলো সাময়িক সমস্যাজনিত কারণে হোমলেস; আরেকটা হল সে তার স্বইচ্ছায় এবং বলতে পারেন জিনগতভাবে সে হোমলেস।
জাপান পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মাঝে অন্যতম। সেখানে কাজের অভাব নাই। সবাই নাকি উদয়াস্ত হাড়ভাঙা খাটুনি খাটে। তারপরও সেই দেশে হোমলেস মানুষ আছে।
এদের পিছনে জাপান সরকার অনেক খরচ করে, অনেক চেষ্টা করে তাদেরকে কর্মসংস্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার কিন্তু এদের এদের স্বভাব হলো হাত পেতে চেয়ে বেঁচে থাকা, রাস্তায় ঘুমাবে কিন্তু তারা কাজ করে খাবেনা।
টোকিও অলিম্পিক গেমসের সময় এ ধরণের অনেক হোমলেসদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এক সাংবাদিক তার অভিজ্ঞতায় লিখেছিলেন, সব গরীব লোকই নাকি ভিক্ষা করে না।
এক মহিলাকে দেখে খুব মায়া লেগেছিলো তার। তার বয়স ১০০ প্লাস হবে। কাছে গিয়ে ১০,০০০ এর একটা নোট বের করে দিলেও সেটা তিনি কোনভাবেই নেয় না।
পরে জিজ্ঞেস করা হলো কিছু খাবে নাকি, তাও নারাজ। পরে ওই ভদ্রলোক কাছের দোকান থেকে কিছু রুটি, কলা, পানি কিনে আনলেন, কিন্তু বৃদ্ধা কোনভাবেই নিতে রাজি হলোনা। আরও কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর বলেছিল যে তার ছেলে আছে কিন্তু তাকে রেখে আমেরিকা চলে গেছে।
আমি কয়দিন আগে ইউটিউবে একটা ভিডিও দেখেছি যেখানে বছর পঞ্চাশের একজন আমেরিকান মহিলাকে দেখায়। ওই মহিলা তার গাড়িতে করে এক স্টেট থেকে আরেক স্টেটে যায়। গাড়িতে খায়, গাড়িতেই ঘুমায়।
কোনো এক পার্কিং লটে গাড়ি রেখে ব্যাক ডালা খুলে ভেতরে শুয়ে থাকে। সকালে ব্যাগ থেকে টুথব্রাশ বের করে দাঁত মাজে। পাব্লিক টয়লেটে ঢুকে প্রাতঃকৃত্য সারে, গোসল করে। গ্যাস স্টেশনের কনভেনিয়েন্ট স্টোর থেকে বার্গার কিনে খেয়ে ফেলে।
আমেরিকা প্রবাসী আমার একজন বন্ধু সেদিন বলছিল এসব হোমলেস মানুষের কথা। সে প্রায়ই এদের সাথে কথা বলে, গল্প করে। সে বলছিল, আমি অনেককেই চেষ্টা করেছি বাসায় নিয়ে এসে গোসল করানো বা তাকে ভালো পরিবেশ দেওয়ার। কিন্তু তারা কেউ কোনো কথাই শোনেনি।
তারা অত্যন্ত নোংরা হয়, গোসল করা পছন্দ করে না। তাদের একমাত্র চাওয়া কোনো কাজ না করে রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে, হাত পাতবে, চেয়ে খাবে।
এদের বেশিরভাগই অ্যালকোহলিক হয়, তারা যে হোমলেস এতে তাদের মোটেও কোনো আক্ষেপ নেই, কোন কষ্টও নেই৷ এই জীবনটাকেই তারা বেশি পছন্দ করে।
তবে তাদের সবার একটা সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার আছে। এর বিপরীতে সরকার থেকে একটা বেকার ভাতা তারা পায়। সেই টাকা দিয়ে তারা চলে। তাদের পরিবার থাকে না, সন্তানাদি নেয় না। এবং তারা ইমিগ্র্যান্টদের পছন্দ করে না। কথায় কথায় সরকারকে গালি দেয় বিদেশিদের এনে দেশ ভরিয়ে ফেলার জন্য। এইসব লোকেরা মাঝেমধ্যেই হামলা করে বিদেশি অধ্যুষিত এলাকায়। তারা মনে করে ইমিগ্র্যান্টরা এসে তাদের দেশ নোংরা করে ফেলছে।
এদের মধ্যে অনেকেই নাকি এমনও আছে একটা সময় অনেক ধনী ছিল টাকা পয়সা ছিল, তখন নেশা নাইট ক্লাব এসবের পিছনে টাকা খুইয়ে এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুমায়।
তাদের সাথে আমাদের দেশের ফুটপাতে বসবাস করা গৃহহীন লোকদের কোথায় যেন মিল আছে। আপনি ফুটপাতে যারা নিয়মিত ভিক্ষা করে তাদের কাজ দিতে চান, দেখবেন করতে চাইবে না। ভিক্ষার বদলে একবেলা খাইয়ে দিতে নিয়ে যেতে চান, যাবে না। মুখ খারাপ করে একটা গালি দিয়ে চলে যাবে। এদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতাও বেশি হয়।
জিনগত সমস্যা কি-না জানি না, তবে আমার কাছে মনে হয়েছে এটা ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার একটা চরম অবস্থা। এরা বাই চয়েজ ভবঘুরে থাকতে চায়, নিয়মকানুনের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে। পিছুটান রাখতে চায় না। তবে একটা কথা সত্য, ভবঘুরে হয়ে থাকতে চাওয়াটা একটা মেন্টাল কন্ডিশন। অনেকটা হিমু’র মতন।
লেখক: জয়েন্ট কমিশনার অব কাস্টমস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
[email protected]
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।