কমলাপুরের গলিঘুঁজো অফিসে বসে হঠাৎ দেখলেন ফোনের ব্যাটারি মাত্র ৫%! জরুরি ক্লায়েন্ট কলে কথা বলতেই হবে। গলদ ঘামতে শুরু করেছে। চার্জার খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু পাওয়ার আউটলেট দূরে! কিংবা সন্তানের স্কুল থেকে ফোন এলো, সে অসুস্থ, কিন্তু ফোনের ব্যাটারি মরার দশা! চার্জ দিতে দিতেই প্রায় দশ মিনিট… সেই দশ মিনিট কেমন কেটেছিল, তা শুধু আপনারাই জানেন। স্মার্টফোনের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করার উপায় জানা থাকলে এই আতঙ্কের মুহূর্তগুলো হয়তো এড়ানো যেত। শুধু তা-ই নয়, আপনার প্রিয় গ্যাজেটটিকে দীর্ঘদিন ভালো রাখাও সম্ভব হতো। কারণ, ব্যাটারির জীবন শুধু ‘একবার চার্জে কতক্ষণ চলে’ তার চেয়েও বেশি কিছু – এটি আপনার ফোনের সামগ্রিক আয়ুকে প্রভাবিত করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কিভাবে সহজ অভ্যাস আর স্মার্ট টিপসের মাধ্যমে আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারিকে দীর্ঘস্থায়ী করে তোলা যায়, যেন তা আপনার বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে থাকে দিনের পর দিন, বছর বছর।
স্মার্টফোন ব্যাটারির বিজ্ঞান: কেন দ্রুত ফুরায়?
স্মার্টফোনের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করার উপায় জানার আগে বুঝতে হবে ব্যাটারি কিভাবে কাজ করে। প্রায় সব আধুনিক স্মার্টফোনেই ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম-আয়ন (Li-ion) বা লিথিয়াম-পলিমার (Li-Po) ব্যাটারি। এদের সুবিধা অনেক – হালকা, উচ্চ শক্তি ঘনত্ব। কিন্তু এদেরও সীমাবদ্ধতা আছে, যার জন্য ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে:
- চার্জিং সাইকেলের সীমা: প্রতিটি ব্যাটারির একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক পূর্ণ চার্জিং সাইকেল (সাধারণত 300-500 সাইকেল) থাকে। একটি সাইকেল মানে ০% থেকে ১০০% চার্জ করা। তবে ৪০% থেকে ৮০% এ চার্জ করা এটি একটি পূর্ণ সাইকেল হিসেবে গণ্য হয় না – এটাই চাবিকাঠি!
- তাপের ক্ষতিকর প্রভাব: ব্যাটারির সবচেয়ে বড় শত্রু উচ্চ তাপমাত্রা। গরম আবহাওয়া, সরাসরি সূর্যালোক, লম্বা সময় গেম খেলা বা ভিডিও স্ট্রিমিং, এমনকি ফাস্ট চার্জারের অতিরিক্ত তাপ – সবই ব্যাটারির ভেতরের রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, ধীরে ধীরে তার ধারণক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
- গভীর ডিসচার্জের ক্ষতি: ব্যাটারিকে প্রায়ই ০% বা খুব কম চার্জে (২০% এর নিচে) নিয়ে যাওয়া এবং দীর্ঘক্ষণ সেভাবে রাখা ব্যাটারির অভ্যন্তরীণ কেমিস্ট্রির জন্য ক্ষতিকর। এটি ব্যাটারির আয়ু কমায়।
- সফটওয়্যার ও ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি: অনেক অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করে, লোকেশন সার্ভিস ব্যবহার করে, নোটিফিকেশন পাঠায় – যা অদৃশ্যভাবে ব্যাটারি খরচ করে। আপডেট না করা অপারেটিং সিস্টেমও অপটিমাইজেশনের অভাবে বেশি ব্যাটারি খরচ করতে পারে।
বাটারি ইউনিভার্সিটি (Battery University) এর গবেষণা অনুসারে, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির ক্ষমতা প্রতি বছর প্রাকৃতিকভাবেই প্রায় ২-৩% কমতে থাকে, এমনকি সঠিকভাবে ব্যবহার করলেও। তবে ভুল অভ্যাস এই ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে।
ব্যবহারের অভ্যাসে পরিবর্তন: দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারির মূল চাবিকাঠি
স্মার্টফোনের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করার সবচেয়ে শক্তিশালী উপায় লুকিয়ে আছে আপনার দৈনন্দিন অভ্যাসে। ছোটখাটো বদল আনলেই বড় পার্থক্য দেখা যাবে:
- অতিরিক্ত উজ্জ্বলতা কমিয়ে আনুন: স্ক্রিনের ব্রাইটনেস সবচেয়ে বেশি ব্যাটারি খায়। ঢাকার রোদে হয়তো ১০০% ব্রাইটনেস দরকার, কিন্তু ঘরের ভেতরে বা সন্ধ্যায় ৪০-৫০% যথেষ্ট। অটো-ব্রাইটনেস চালু রাখুন – এটি পরিবেশের আলো অনুযায়ী ব্রাইটনেস স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামঞ্জস্য করে।
- স্ক্রিন টাইমআউট সংক্ষিপ্ত করুন: ফোন ব্যবহার না করলেও স্ক্রিন অন থাকলে ব্যাটারি খরচ হয়। স্ক্রিন টাইমআউট ১৫ সেকেন্ড বা সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ডে সেট করুন।
সেটিংস > ডিসপ্লে > স্ক্রিন টাইমআউট
থেকে এটি করা যায়। - অপ্রয়োজনীয় কানেক্টিভিটি বন্ধ করুন: আপনার যখন Wi-Fi, ব্লুটুথ, GPS (লোকেশন সার্ভিস), NFC বা মোবাইল ডেটার প্রয়োজন নেই, তখনই এগুলো বন্ধ রাখুন। বিশেষ করে লোকেশন সার্ভিস অনেক অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু রাখে, যা ব্যাটারির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। শুধু প্রয়োজন হলে চালু করুন।
কুইক সেটিংস প্যানেল
(নোটিফিকেশন বার টেনে এনে) থেকে এগুলো সহজেই অন/অফ করা যায়। - ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ রিফ্রেশ সীমিত করুন: অনেক অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে ডেটা আপডেট করে, ইমেইল চেক করে – যা ব্যাটারি খায়।
সেটিংস > অ্যাপস > ব্যাটারি
(বাব্যাকগ্রাউন্ড রেস্ট্রিকশন
) থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা বা রিফ্রেশ বন্ধ করে দিন। শুধু মেসেজিং অ্যাপ বা ইমেইল অ্যাপের মতো জরুরি অ্যাপগুলোর জন্য এটি অন রাখুন। - পুশ নোটিফিকেশন নিয়ন্ত্রণ করুন: প্রতিটি নোটিফিকেশনের জন্য স্ক্রিন জ্বলে, ভাইব্রেট হয় বা সাউন্ড হয় – সবই ব্যাটারি খরচ।
সেটিংস > নোটিফিকেশনস
গিয়ে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন। শুধু অত্যাবশ্যকীয় অ্যাপের নোটিফিকেশন রাখুন। - ডার্ক মোডের শক্তি: OLED বা AMOLED স্ক্রিনযুক্ত ফোনে (যেমন বেশিরভাগ আধুনিক স্যামসাং, ওয়ানপ্লাস, গুগল পিক্সেল ফোন) ডার্ক মোড চালু রাখলে ব্যাটারি সাশ্রয় হয়। কারণ কালো পিক্সেলগুলো জ্বলে না।
সেটিংস > ডিসপ্লে > ডার্ক মোড
চালু করুন। এমনকি কিছু অ্যাপে আলাদা ডার্ক মোড অপশন থাকে।
প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা: আমি নিজেও লক্ষ্য করেছি, অফিসে কাজ করার সময় Wi-Fi চালু রেখে, কিন্তু লোকেশন সার্ভিস অপ্রয়োজনে অন রাখলে, মধ্যাহ্নের আগেই ব্যাটারি ২০% নেমে আসত। এখন শুধু প্রয়োজনে লোকেশন অন করি, আর অফিসের Wi-Fi ব্যবহার করি। ফলাফল? দুপুরের পরেও ৫০% এর কাছাকাছি ব্যাটারি থাকে!
সেটিংস অপ্টিমাইজেশন: ফোনের ভিতরের গোপন সুইচগুলো
আপনার ফোনের সেটিংসে লুকিয়ে আছে ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করার বেশ কিছু শক্তিশালী টুল। এগুলোকে কাজে লাগান:
ব্যাটারি সেভার/অপ্টিমাইজেশন মোড: প্রায় সব আধুনিক অ্যান্ড্রয়েড ফোনে (
সেটিংস > ব্যাটারি > ব্যাটারি সেভার/অপ্টিমাইজেশন
) এবং আইফোনে (সেটিংস > ব্যাটারি > লো পাওয়ার মোড
) এই অপশন আছে। এটি চালু করলে ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে:- ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি কমিয়ে দেয়।
- পুশ নোটিফিকেশনে বিলম্ব ঘটাতে পারে।
- প্রসেসরের পারফরম্যান্স সামান্য কমিয়ে দেয় (যা সাধারণ ব্যবহারে খুব একটা লক্ষণীয় নয়)।
- অটো-সিঙ্ক ফ্রিকোয়েন্সি কমায়।
- এটি ব্যাটারি কম থাকলে বা দীর্ঘক্ষণ ফোন ছাড়া থাকতে হলে খুবই কার্যকর। গুগলের অফিসিয়াল গাইডলাইনেও এর ব্যবহার উৎসাহিত করা হয় (Android Battery Help).
অ্যাডাপটিভ ব্যাটারি/ব্যাটারি হেলথ ফিচার (অ্যান্ড্রয়েড): কিছু ফোনে (
সেটিংস > ব্যাটারি > অ্যাডাপটিভ ব্যাটারি/ব্যাটারি কেয়ার
) এমন ফিচার থাকে যা আপনার ব্যবহারের প্যাটার্ন শিখে নেয় এবং যে অ্যাপগুলো আপনি কম ব্যবহার করেন, সেগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সীমিত করে দেয়। এটি দীর্ঘমেয়াদে স্মার্টফোনের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করার একটি চমৎকার উপায়।অটো-সিঙ্ক/অ্যাকাউন্ট সিঙ্ক নিয়ন্ত্রণ: আপনার ইমেইল, ক্যালেন্ডার, কন্টাক্ট অ্যাপগুলো নির্দিষ্ট সময় পর পর সিঙ্ক হয়।
সেটিংস > অ্যাকাউন্টস
গিয়ে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সিঙ্ক সেটিংস চেক করুন। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বা অ্যাকাউন্টের অটো-সিঙ্ক বন্ধ করে দিন। ম্যানুয়ালি সিঙ্ক করলেও চলে।- অপ্টিমাইজড চার্জিং/ব্যাটারি হেলথ চার্জিং (আইফোন/কিছু অ্যান্ড্রয়েড): আইফোনের (
সেটিংস > ব্যাটারি > ব্যাটারি হেলথ > চার্জিং অপ্টিমাইজেশন
) এবং কিছু অ্যান্ড্রয়েড ফোনে (স্যামসাং, পিক্সেল ইত্যাদিরসেটিংস > ব্যাটারি > মোর ব্যাটারি কেয়ার/প্রোটেক্ট
) এই ফিচার আছে। এটি আপনার ঘুমানোর রুটিন শিখে নেয় এবং রাতভর চার্জে থাকলেও ফোনকে ৮০% এর কাছাকাছি চার্জে রেখে সকালে উঠার আগে ১০০% এ পৌঁছায়। এতে ব্যাটারি দীর্ঘক্ষণ ১০০% চার্জে থাকার চাপ থেকে রক্ষা পায়, যা ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে।
চার্জিং অভ্যাস: ব্যাটারির আয়ু বাড়ানোর মূলমন্ত্র
চার্জ দেওয়ার পদ্ধতিই স্মার্টফোনের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। এখানেই বেশিরভাগ মানুষ ভুল করেন:
আংশিক চার্জিংই উত্তম: পুরনো নিকেল-ক্যাডমিয়াম (NiCd) ব্যাটারির মতো লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিকে ০% থেকে ১০০% চার্জ করতে হবে এমন কোন কথা নেই। বরং ২০-৮০% রুল মেনে চলা উত্তম। অর্থাৎ, ব্যাটারি ২০% এর নিচে নামতে না দেওয়া এবং ১০০% পর্যন্ত চার্জ না করা। চার্জ ৮০% হলে খুলে ফেলাই ভালো। গবেষণা অনুসারে, ৪০-৮০% রেঞ্জে ব্যাটারিকে রাখলে এর আয়ু সবচেয়ে বেশি হয়। (Source: Battery University – How to Prolong Lithium-based Batteries)
গভীর ডিসচার্জ এড়িয়ে চলুন: ফোন সম্পূর্ণ শুন্য (০%) হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং দীর্ঘক্ষণ সেভাবে রাখা ব্যাটারির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। চেষ্টা করুন ২০-৩০% এর নিচে নামার আগেই চার্জে বসানো।
অত্যধিক তাপ থেকে দূরে রাখুন চার্জের সময়: ফোন চার্জ দেওয়ার সময় কভার খুলে রাখুন (বিশেষ করে ফাস্ট চার্জিংয়ের সময়)। সরাসরি সূর্যালোক বা হিটারের কাছে চার্জ দেবেন না। ফোন গরম হয়ে উঠলে চার্জিং বন্ধ করে ফোন ঠান্ডা হতে দিন। উচ্চ তাপ ব্যাটারির আয়ু দ্রুত কমিয়ে দেয়।
ফাস্ট চার্জিংয়ের ব্যবহার সীমিত করুন: ফাস্ট চার্জিং সুবিধাজনক, কিন্তু এটি ব্যাটারিতে বেশি তাপ উৎপন্ন করে। প্রতিদিনের রুটিন চার্জিংয়ে সাধারণ চার্জার ব্যবহার করুন। জরুরি প্রয়োজনে বা সময় কম থাকলে শুধুমাত্র ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করুন। গুগল পিক্সেল বা স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজের ফোনগুলোতে এডাপটিভ ফাস্ট চার্জিং থাকে যা ব্যাটারি হেলথের কথা ভেবে চার্জিং রেট সামঞ্জস্য করে।
রাতভর চার্জে রাখা উচিত নয়: যদিও আধুনিক ফোন ও চার্জারে ওভারচার্জ প্রোটেকশন থাকে, তবুও রাতভর চার্জে রাখলে ব্যাটারি দীর্ঘক্ষণ ১০০% চার্জে এবং কিছুটা উষ্ণ অবস্থায় থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ। যদি রাখতেই হয়, তাহলে অপ্টিমাইজড চার্জিং ফিচারটি চালু রাখুন।
- মূল চার্জার ও কেবল ব্যবহার করুন: নিম্নমানের বা সস্তার চার্জার ও কেবল ব্যবহার করলে ভোল্টেজ ফ্লাকচুয়েশন বা অতিরিক্ত তাপের কারণে ব্যাটারির ক্ষতি হতে পারে। সর্বদা ফোন কোম্পানির দেওয়া অথিক্যাল বা বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের চার্জার ও কেবল ব্যবহার করুন।
চার্জিং রেঞ্জের প্রভাব (সারণী):
চার্জিং রেঞ্জ (SOC – State of Charge) | ব্যাটারি আয়ুর উপর প্রভাব (আনুমানিক) |
---|---|
১০০% এ ক্রমাগত রাখা | সবচেয়ে খারাপ, দ্রুত ক্ষয় |
৪০%-৮০% এর মধ্যে রাখা | সবচেয়ে ভালো, সর্বোচ্চ আয়ু সম্ভাব্য |
২০% এর নিচে নামানো | ক্ষতিকর, বিশেষ করে দীর্ঘক্ষণ রাখলে |
০% পর্যন্ত ডিসচার্জ করা | অত্যন্ত ক্ষতিকর, ব্যাটারি ড্যামেজ হতে পারে |
এডভান্সড টিপস ও যত্ন: আরও একধাপ এগিয়ে
স্মার্টফোনের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য কিছু অতিরিক্ত সতর্কতা ও টিপস:
- অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপ আপডেট রাখুন: কোম্পানিগুলো নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে ব্যাটারি অপ্টিমাইজেশন ও বাগ ফিক্স করে। আপনার ফোনের অপারেটিং সিস্টেম এবং গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপগুলো সর্বশেষ ভার্সনে আপডেট রাখুন (
সেটিংস > সফটওয়্যার আপডেট
/ অ্যাপ স্টোর)। - অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ আনইনস্টল করুন: যেসব অ্যাপ আপনি মাসেও একবার ব্যবহার করেন না, সেগুলো আনইনস্টল করে দিন। এগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে রিসোর্স ব্যবহার করতে পারে এবং স্টোরেজ জায়গা নেয়।
- লাইভ ওয়ালপেপার ও অ্যানিমেশন এড়িয়ে চলুন: স্ট্যাটিক ওয়ালপেপারের চেয়ে লাইভ ওয়ালপেপার বা হোম স্ক্রিনে অ্যানিমেশন বেশি ব্যাটারি খরচ করে। এগুলো বন্ধ রাখাই ভালো।
- অতিরিক্ত তাপ ও ঠান্ডা এড়িয়ে চলুন: শুধু চার্জিং সময়ই নয়, সারাদিনই ফোনকে চরম তাপমাত্রা (৩৫°C এর বেশি বা ০°C এর নিচে) থেকে দূরে রাখুন। গরম গাড়ির ড্যাশবোর্ডে ফোন রাখা একদমই উচিত নয়।
- লম্বা সময় সংরক্ষণের সময়: যদি ফোনকে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের জন্য নাড়াচাড়া না করেন (যেমন পুরোনো স্পেয়ার ফোন), তাহলে একে প্রায় ৫০% চার্জ অবস্থায় সংরক্ষণ করুন। সম্পূর্ণ চার্জ বা সম্পূর্ণ ডিসচার্জ অবস্থায় দীর্ঘদিন রেখে দিলে ব্যাটারির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। (Source: Apple – Maximizing Battery Lifespan)
দেশীয় প্রেক্ষাপট: আমাদের দেশের আবহাওয়া উষ্ণ। গ্রীষ্মকালে ফোন সহজেই গরম হয়ে যায়। তাই খেয়াল রাখুন ফোন যেন বদ্ধ জায়গায় (জিন্সের পকেটে দীর্ঘক্ষণ, বন্ধ ব্যাগে) অতিরিক্ত গরম না হয়। বাইরে বের হলে ব্যাগে বা আলাদা পকেটে রাখুন।
জেনে রাখুন (FAQs)
প্রশ্নঃ স্মার্টফোনের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য প্রথম চার্জ কতক্ষণ দেব?
উত্তরঃ পুরনো নিকেল ব্যাটারির জন্য ৮-১২ ঘণ্টার প্রথম চার্জ দেওয়ার নিয়মটি আধুনিক লিথিয়াম ব্যাটারির জন্য প্রযোজ্য নয়। নতুন ফোন কিনলে সেটি সাধারণত ৫০-৬০% চার্জে আসে। আপনি স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার শুরু করতে পারেন। প্রথম চার্জও ৮০-৯০% পর্যন্ত দিলেই যথেষ্ট। লম্বা সময় চার্জে বসিয়ে রাখার কোন প্রয়োজন নেই।প্রশ্নঃ ব্যাটারি হেলথ বা ক্ষমতা কিভাবে চেক করব? (অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন)
উত্তরঃ- আইফোনঃ
সেটিংস > ব্যাটারি > ব্যাটারি হেলথ অ্যান্ড চার্জিং
তে গেলেMaximum Capacity
দেখতে পাবেন (যেমন ৯২%)। এটি মূল ক্ষমতার তুলনায় বর্তমান ক্ষমতার শতাংশ। - অ্যান্ড্রয়েডঃ সরাসরি ইউনিফাইড উপায় নেই। কিছু ফোনে
সেটিংস > ব্যাটারি > ব্যাটারি কেয়ার/ব্যাটারি হেলথ
অপশনে পাওয়া যায়। তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ (যেমন AccuBattery) ব্যবহার করে চার্জিং প্যাটার্ন থেকে আনুমানিক ক্ষমতা বের করা যায় (তবে এগুলো ১০০% নির্ভুল নয়)। ফোনের ডায়ালারে*#*#4636#*#*
ডায়াল করেব্যাটারি ইনফো
দেখতে পারেন (সব ফোনে কাজ নাও করতে পারে)।
- আইফোনঃ
প্রশ্নঃ পাওয়ার ব্যাঙ্ক ব্যবহার করা কি ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর?
উত্তরঃ গুণগত মানসম্পন্ন পাওয়ার ব্যাঙ্ক (যা সঠিক ভোল্টেজ-কারেন্ট দেয়) এবং ভালো কেবল ব্যবহার করলে সাধারণত ক্ষতিকর নয়। তবে সস্তা, নিম্নমানের পাওয়ার ব্যাঙ্ক ব্যবহার করা বিপজ্জনক হতে পারে – এগুলো অনিয়মিত আউটপুট দিতে পারে বা অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করতে পারে, যা ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর। ভালো ব্র্যান্ডের পাওয়ার ব্যাঙ্ক বেছে নিন।প্রশ্নঃ ফোন সবসময় চার্জে বসিয়ে রাখি (ডেস্কে কাজ করার সময়), এতে কি সমস্যা?
উত্তরঃ আধুনিক ফোনে ওভারচার্জ প্রোটেকশন থাকায় ১০০% চার্জ হয়ে গেলে চার্জিং বন্ধ হয়ে যায়। তবে, সমস্যা হলো ফোন ক্রমাগত ১০০% চার্জে এবং কিছুটা উষ্ণ অবস্থায় থাকে (এডাপ্টারের মাধ্যমে সামান্য চার্জ আসতে থাকে)। এটি ব্যাটারির উপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে এবং ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা। যদি দীর্ঘসময় ডেস্কে কাজ করেন,অপ্টিমাইজড চার্জিং
ফিচার চালু করুন বা চার্জ ৮০-৯০% পৌঁছালে খুলে ফেলার চেষ্টা করুন।- প্রশ্নঃ ব্যাটারি পরিবর্তন করব কখন?
উত্তরঃ সাধারণত, ব্যাটারি হেলথ (আইফোনে) বা আনুমানিক ক্ষমতা ৮০% এর নিচে নেমে গেলে এবং আপনি লক্ষ্য করেন যে:- ফোন খুব দ্রুত ব্যাটারি শেষ করছে (এমনকি হালকা ব্যবহারে)।
- ফোন হঠাৎ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে (২০-৩০% থাকতেই)।
- ফোন অস্বাভাবিক গরম হচ্ছে।
তখন কোম্পানির অথরাইজড সার্ভিস সেন্টার থেকে মূল ব্যাটারি পরিবর্তন করানো উচিত। সস্তার নকল বা নিম্নমানের ব্যাটারি ব্যবহার করবেন না।
মনে রাখবেন, আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি একটি খরচযোগ্য উপাদান। এর আয়ু চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু, স্মার্টফোনের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করার এই সহজ উপায়গুলো মেনে চললে আপনি এর স্বাভাবিক আয়ুকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারেন – হয়তো দুই বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বা সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত। এটি শুধু আপনার টাকার সাশ্রয়ই নয়, ই-বর্জ্য কমাতেও সাহায্য করে। আপনার ফোনের স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা সামান্য কমিয়ে দিন, অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করুন, আর ব্যাটারি ২০% এর নিচে নামার আগেই তাকে প্রিয় চার্জারে স্নান করান। এই ছোট ছোট পদক্ষেপই আপনার ফোনকে করে তুলবে আরও দীর্ঘস্থায়ী, আর আপনাকে মুক্ত করবে ব্যাটারি আতঙ্ক থেকে। আজ থেকেই শুরু করুন – আপনার বিশ্বস্ত ডিজিটাল সঙ্গীকে দীর্ঘ জীবন দান করুন!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।