অপো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পরবর্তী স্মার্টফোন Oppo F21 Pro উপমহাদেশে রিলিজ করেছে। আগের মডেল থেকে F21 Pro তে নতুন ফিচার নিয়ে আসা হয়েছে। ডিজাইনে নতুনত্ব আনা হয়েছে। তবে এটিই কি মাঝারি রেঞ্জে সেরা হ্যান্ডসেট হতে পেরেছে নাকি অন্য স্মার্টফোন ভালো হবে এ বিষয়ে আজ আলোচনা করা হবে। নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে F21 Pro সম্পর্কে পর্যালোচনা করা হবে।
বক্সের মধ্যে যা থাকছে:
- Oppo F21 Pro স্মার্টফোন
- হ্যান্ডসেট কভার
- ৩৩ ওয়াট এর ফার্স্ট চার্জার
- ইউএসবি টাইপ এ টু সি ক্যাবল
- সিম ইজেক্টিং টুল
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
স্মার্টফোনের ডিজাইন
Oppo F21 Pro ডিজাইনে অনন্য বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে। কমলা ও কালো রঙের ফোন বাজারে রিলিজ হয়েছে। কালো রঙ স্মার্টফোন এ বহুল প্রচলিত হলেও কমলা রঙ এর হ্যান্ডসেট তেমন বাজারে নেই। আর আলোর চমৎকার প্রতিফলন হয় বিধায় হাতে নিলে প্রিমিয়াম ফিল হয়। বক্সের সাথে দেওয়া কভার থেকে সাধারণভাবে ব্যবহার করলে বেশি ভালো দেখাবে। আমি ২ সপ্তাহ ব্যবহার করেছি। তবুও কোন ধুলা-বালি জমেনি।
ক্যামেরার ডিজাইন যথেষ্ট সুন্দর হয়েছে। ২টি গোলাকার ক্যামেরা বাম্প ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি ফ্ল্যাশলাইটের ব্যবস্থা আছে। নোটিফিকেশনের জন্য আলাদা বাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। হ্যান্ডসেটের পেছনের অংশ প্লাস্টিকের তৈরি। ডানদিকে পাওয়ার বাটন ও ভলিউম বাটন ব্যবহার করা হয়েছে। বামে সিম কার্ড এর স্লট ইন্সটল করা আছে। পাশাপাশি মাইক্রোফোন, হেডফোন জ্যাক, USB TYPE C স্লট ও স্পিকার গ্রিল রয়েছে। ক্যামেরার জায়গার কথা বাদ দিলে হ্যান্ডসেটটির পূরত্ব ৭.৫৪ মিলিমিটার হবে। পাশাপাশি এটি ১৭৫ গ্রামের মোবাইল হওয়ায় হাতে দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে কোন সমস্যা হবে না।
ডিসপ্লে এবং সাউন্ড
Oppo F21 Pro তে AMOLED ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে ও ফোনের সাইজ হচ্ছে ৬.৪৩ ইঞ্চি। ১০৮০পি রেজুলেশন ব্যবহার করা হয়েছে যা দাম অনুপাতে ঠিকই আছে। তবে ফোনটি HDR সার্টিফিকেট অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে মোবাইলটি সর্বদা ৯০ হার্জ রিফ্রেশ রেট বজায় রেখে চলতে পারে না। সফটওয়ার ভিত্তিক কিছু সমস্য দেখা গিয়েছে। তবে আপডেট দিয়ে অপটিমাইজ করা হবে বলে আমার বিশ্বাস।
ইউটিউবে ভিডিও দেখার সময় HDR ফিচার অনুপস্থিত থাকবে। পাশাপাশি নেটফ্লিক্স ও এমাজন ভিডিওতে FHD ভিডিও উপভোগ করা যাচ্ছে না। যদিও এ সমস্যা পরবর্তী সময়ে থাকবে না বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এ মডেলে একটি মাত্র স্পিকার ব্যবহৃত হয়েছে। ডুয়েল স্পিকার থাকলে শব্দের কোয়ালিটি আরও ভালো হতো। আপনি বক্সের সাথে হেডোফোন পাবেন না। তাই হেডফোনের ব্যবস্থা আপনাকেই করতে হবে।
হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার
Oppo F21 Pro একটি Qualcomm Snapdragon 680 দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। চিপসেটটি 8GB RAM এবং 128GB স্টোরেজের সাথে যুক্ত। অ্যান্ড্রয়েড 12-এর উপর ভিত্তি করে ColorOS 12.1 ইনস্টল করা হয়েছে। অন্যান্য মডেলেও অপো ColorOS ব্যবহার করেছে। তেমন কোন ভিন্নতা লক্ষ্য করিনি। তবে কিছুটা ধীরগতির মনে হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় কিছু অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে যা আপনি ডিলিট করতে পারবেন না।
সফটওয়ার লোড হতে বেশ কিছুটা সময় নেয়। তবে তা উল্লেখযোগ্য কিছু না। তবে অপোর প্রতিযোগী হ্যন্ডসেটগুলির স্পিড আরও অনেক বেশি। প্রতিদিনের ব্যবহারে আপনার তেমন কোন সমস্যা হবে না। ভালো গেমিং অভিজ্ঞতা আপনি পাবেন না কারণ গেমিং এর জন্য ফোনটি উপযুক্ত নয়।
ক্যামেরা
Oppo F21 Pro পিছনে ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ দিয়ে সজ্জিত। সিস্টেমটিতে একটি 64MP OmniVision সেন্সর, পাশাপাশি দু’টি 2MP Galaxycore সেন্সর রয়েছে৷ সামনে সেলফির জন্য 32MP Sony IMX709 সেন্সর ইনস্টল করা হয়েছে। অন্য স্মার্টফোনের মতো এখানে ডেপথ সেন্সর তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না। ব্যবহারকারী কয়েকদিন ব্যবহারের পর বিরক্ত হতে পারে।
পূর্বের Oppo Reno 6 Pro স্মার্টফোনে যে সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে এখানে প্রাইমারি ক্যামেরায় একই সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। তবে স্মার্টফোনের সফটওয়ার এর কার্যাবলিতে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে। আগের Reno হ্যান্ডসেটে মানুষের ত্বকের ছবি স্পষ্ট আসেনি। এ নিয়ে সমালোচনাও ছিলো। তবে এবার তার সমাধান হয়েছে। বাস্তবে আপনি দেখতে যেমন ক্যামেরার ছবি সেরকম দেখায় যা প্রশংসার যোগ্য। Oppo F21 Pro ডিভাইসটি আকর্ষণীয় ছবি তুলতে সক্ষম।
কম আলোয় ছবি আরও স্পষ্ট আসা উচিত ছিলো। আর নাইট মোড তেমন কাজে লাগবে না। সেলফি ক্যামেরার পারফরম্যান্স হতাশাজনক। সনির লেন্স ব্যবহার করা সত্ত্বেও সফটওয়্যার ভিত্তিক সমস্যা থাকার কারণে ছবি স্পষ্ট আসছে না। ত্বকের রঙের পার্থক্য লক্ষনীয়। আশা করছি আপডেট দিয়ে অপো সমস্যার সমাধান করবে।
ভিডিও রেকর্ডিং 30fps এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে ১০৮০পি FHD ভিডিও করতে সক্ষম ডিভাইসটি। তবে ফোকাসিং এর ক্ষেত্রে এটি বেশ ধীর। পর্যাপ্ত আলো সরবরাহ করতে পারে হ্যান্ডসেটটি। অডিও এর কোয়ালিটি খুবই ভালো। তবে নয়েজ ক্যানসেল করা যায় না।
বিবিধ বিষয়
হ্যান্ডসেটটি 4G কানেক্টিভিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ, কোন 5G সাপোর্ট নেই। তবে উপমহাদেশে এখনো 5G চালু না হওয়ায় এটি তেমন সমস্যা নয়। আর চালু হলেও তা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে অনেক সময় লাগবে। মোবাইল ডেটা ভাল কাজ করে এবং মোবাইল হটস্পটও কাজ করে। হেডপিস থেকে অডিও নিয়ে কোনও সমস্যা নেই এবং মাইক্রোফোনের মান ঠিক বলা যেতে পারে। একইভাবে ওয়াই-ফাই এবং ব্লুটুথ ঠিকঠাক কাজ করে। আমি কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়নি।
ক্যামেরার জন্য LED লাইট এর নানামুখী ব্যবহার লক্ষনীয়। নোটিফিকেশন, কল এলার্ট, চার্জিং এবং এমনকি গেমিং এর জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও এটি দেখতে দুর্দান্ত তবে আমি এটির কোন উল্লেখযোগ্য ব্যবহার খুঁজে পাইনি।
ব্যাটারি এবং চার্জিং
Oppo F21 Pro একটি 4,500mAh ব্যাটারি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। সম্পূর্ণ চার্জে এটি সহজেই একদিন স্থায়ী হতে পারবে। ফার্স্ট চার্জিং এর অপশন থাকায় ১ ঘন্টা ২০ মিনিটের মধ্যে পুরো ফুল চার্জ দেওয়া সম্ভব।
শেষকথা
সাধারণত ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা মূল্যের মিডরেঞ্জের ফোনে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৮০ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়। ‘অপো এফ২১ প্রো’ মডেলটির দাম ২৭ হাজার ৯৯০ টাকা। নতুন এই ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৮০ প্রসেসর।
অপো বলছে, নতুন ‘এফ২১ প্রো’ ফোনটিতে র্যাম বাড়ানো প্রযুক্তিসহ ৫জিবি পর্যন্ত ভার্চুয়াল র্যাম ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যাবে। মানে এতে ৫ জিবি পর্যন্ত ভার্চুয়াল র্যাম ব্যবহার করা যাবে। প্রশ্ন ওঠেছে, ভার্চুয়াল র্যাম আসলে কতটা কাজের?
Oppo F21 Pro সবার জন্য নয়। এটির ডিজাইন ও সেলফি ক্যামেরা বাদে অন্য বিষয় সাধারণ মানের। ডিজাইনের কথা চিন্তা করলে পাশাপাশি হালকা-পাতলা গড়নের এমন স্মার্টফোন চাইলে এটি নিতে পারেন। ব্যাক ক্যামেরা, গেমিং ও আরও দ্রুতগতির স্মার্টফোন চাইলে Oppo F21 Pro আপনার জন্য উপযুক্ত নয়। সবচেয়ে বড় কথা, এই দামের মধ্যে এর চেয়ে অনেক ভালো মানের মোবাইল বাজারে পাওয়া যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।