জুমবাংলা ডেস্ক: জীবন, সংগ্রাম ও জীবিকা সবকিছুতেই প্রয়োজন নৌকা। দিনের শুরু থেকে রাতের আঁধার কিংবা বেঁচে থাকার অন্যতম মাধ্যম এই নৌকা। বলছি হাওর পাড়ের লাখো মানুষের প্রাণের গল্প। বছরের ছয় মাস যাদের জীবন কাটে পানিতে ভেসে। নৌকাই যেন বেঁচে থাকার একমাত্র সহায় সম্ভব।
নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলে চলাচলের একমাত্র বাহন নৌযান। বছরের পর বছর হাওরের মানুষরা চলেন ঝুঁকি নিয়ে। ফলে প্রায়শই ঘটে দুর্ঘটনা। তারপরও নেই সচেতনতা। গত তিন বছর আগে মদনের উচিৎপুর হাওরে বেড়াতে এসে একসঙ্গে ১৮ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। এর পরের বছর কলমাকান্দার গুমাই নদীতে নৌকাডুবে মারা যায় ১১ জন। কিন্তু নেই তেমন কোনো উদ্যোগ। এদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ নৌ চলাচলে তদারকি করছে স্থানীয় প্রশাসন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নেত্রকোণার হাওরাঞ্চল মানেই বেশ কয়েকটি উপজেলার সিংহভাগ এলাকায় থৈ থৈ পানি। বর্ষা মৌসুমজুড়ে একমাত্র চলাচলের মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। বাজার থেকে শুরু করে সদরে আসতে যেতে নৌকাই মাধ্যম। শিশু-বৃদ্ধ ও নারী সকলেই যেন অভ্যস্ত। তারপরও প্রায় সময় শোনা যায় নৌকাডুবে প্রাণহানির ঘটনা। কিন্তু এসব নৌযান চলাচলে কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেন না নৌকা চালক ও যাত্রীরা।
এদিকে হাওরের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে নৌকায় ঘুরতে আসেন অনেকে। কখনো কখনো স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা থেকেও পিকনিক করতে চলে আসেন নেত্রকোণার হাওরে। অনেকে জানে না সাঁতার। গত ২০২০ সালের ৫ আগস্ট ময়মনসিংহ থেকে একটি মাদরাসার প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক এসেছিলেন মদনের উচিৎপুর হাওরে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া এবং চালকের অধিক মুনাফা লাভের কারণে ট্রলার ডুবে মারা যান ১৮ জন। এরপর সেই ঘটনায় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি নৌ পুলিশের টহলসহ নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেট এবং ফিটনেস বিহীন নৌকা নিষেধসহ বেশকিছু সুপারিশ দিলেও মানছেন না কেউই।
পরের বছর ১১ আগস্ট কলমাকান্দা উপজেলার গুমাই নদীতে নৌকাডুবে ১১ জন নিহত হন। এ বছর ৭ জুলাই পুর্বধলার কংশ নদে নৌকাডুবে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও প্রায়ই নৌকাডুবির ঘটনায় এক-দুজন নিহতের ঘটনা ঘটে। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না বলে অভিযোগ তুলেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, এ বছর ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় উচিৎপুর ঘাটটি ইজারা দেয় প্রশাসন। প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি নৌকা চলে বিভিন্ন এলাকায়।
স্থানীয় পরিতোষ দাস ও ফয়েজ আহমেদ হৃদয় বলেন, নৌকার মাঝিরা ফিটনেস বিহীন নৌকা যেমন চালায় তেমন সচেতনতা নেই। ট্রলার ডুবির পরপর তদন্ত কমিটি গঠন করে তারা চালকসহ ইজারাদারদের বাঁচিয়ে দিয়ে বৈরী আবহাওয়াকে দোষ দিয়েছে। কিন্তু সেখানে কয়েকটি সুপারিশ ছিল। যেগুলোর কোনোটাই বাস্তবায়নের লক্ষ্য দেখা যায়নি। নৌ পুলিশ নেই। চলে ফিটনেস বিহীন নৌকা। এমন ঝুঁকিতেই এই হাওরাঞ্চলের মানুষ।
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহনূর রহমান জানান, এ ব্যাপারে তারা ইজারাদার ও নৌকা চালকদের প্রতিনিয়ত সচেতন করে যাচ্ছেন। স্থানীয়দের মাঝেও সচেতনতায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে সচেতনতা কাজ করে যাচ্ছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মদন খালিয়াজুরী উপজেলা) সার্কেল অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা সব সময় সচেতন করছি। সেইসঙ্গে নিরাপত্তার জন্য দিনে-রাতে টহল থাকে পুলিশ। এছাড়াও লাইফ জ্যাকেট ও ফিটনেস বিহীন কোনো জলযান নজরে পড়লেই ব্যবস্থা নেয়া হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।