জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১১টিতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রায় সারা দেশেই মাঝারি থেকে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে চলছে এই পরিস্থিতি, যা হাড় কাঁপিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি আছে কুয়াশার প্রকোপ।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কনকনে ঠাণ্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ খুব কষ্টে আছেন। শীত উপেক্ষা করেই তাদের কাজের সন্ধানে বের হতে হচ্ছে। আগের মতো কাজও পাচ্ছেন না তারা। রিকশাচালক, দিনমজুর, ফেরিওয়ালাসহ ভাসমান ব্যবসায়ীদের আয়রোজগার কমে গেছে।
কুয়াশায় ঢেকে আছে শহর-বন্দর-গ্রামগঞ্জ। অনেক জেলায়ই সূর্যের দেখা নেই। কোথাও কোথাও এমন অবস্থা চলছে সপ্তাহকাল। ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে বাতাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শহরের ভাসমান মানুষের মধ্যে যারা রাস্তা বা উন্মুক্ত স্থানে থাকেন,তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কায়িক শ্রমিকদের অবস্থা আরো করুন। গরম কাপড়ের অভাবে কাতর হতদরিদ্ররা।
গতকালও দিনভর রাজধানীর আকাশে সূর্য দেখা যায়নি। গতকাল ঢাকায় তাপমাত্রা নেমে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যাতে কাঁপছে ঢাকার বাসিন্দারা। এর আগে ২০১৮ সালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে সকালে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে যানবাহনগুলোকে। অল্প দূরত্বেও ঠিকমতো কিছু দেখা যাচ্ছিল না। গত চার দিনে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা কমেছে ঢাকায়। তাপমাত্রা ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও শীতের অনুভূতি ছিল ১০ ডিগ্রির নিচে। অর্থাৎ মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতিতে ছিলেন রাজধানীবাসী। যদিও গতকাল সকালে দেশের ও এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়।
১৭ জেলায় শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার:আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, প্রতিদিন শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার ঘটছে। ঢাকা, খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১৭টি জেলায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে। ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, বগুড়া, নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও বরিশালের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ওমর ফারুক বলেন, আজ থেকে দিনের কুয়াশা অনেকটা কমে যাবে। তবে রাতের কুয়াশা থাকবে। মূলত আগামীকাল থেকে তাপমাত্রা একটু বাড়তির দিকে থাকলেও ১০ জানুয়ারির পর থেকে তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে কমতে থাকবে। তার মানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে নামতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, আগামী বেশ কয়েক দিন এই তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে। যদি সূর্যের তাপ পাওয়া না যায়, তাহলে শৈত্যপ্রবাহের এলাকাও বিস্তার লাভ করতে পারে। ঢাকায় আজ যে তাপমাত্রা, তাতে শৈত্যপ্রবাহ বলা না গেলেও দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসায় কোল্ড ওয়েভের মতোই অনুভূতি পাচ্ছেন নগরবাসী।
আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির পূর্বাভাস: এদিকে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো বিশ্লেষণ করে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, আগামী ১৪, ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টির পরে ১৮-২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আবারও সপ্তাহব্যাপী দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে কুয়াশা ও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে এখনই বলা যাচ্ছে না পরবর্তী শৈত্যপ্রবাহটির তীব্রতা কোন মাত্রার হবে।
তীব্র শীতের আশঙ্কা, সহসা কাটছে না ঘনকুয়াশা:আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, গঙ্গা অববাহিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত কুয়াশার কারণে শীত বেশি থাকবে। ঘন কুয়াশার একটি প্রবাহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চল হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম পর্যন্ত ঐ ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও সূর্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ওয়েস্টার্ন ডিস্টার্বেন্স (পশ্চিমা লঘুচাপ) আমাদের দেশে তুলনামূলক উষ্ণ জলীয়বাষ্প নিয়ে আসে, এতে কুয়াশা কেটে যায়। এবার সেটা না হওয়ায় কুয়াশা কাটছে না। ঢাকার বাইরে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা পড়ছে। কোথাও কোথাও তা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে। আমাদের এখানে যদি বাতাসের গতিবেগ বেশি হতো তা হলেও কুয়াশা কেটে যেত। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ইরানের পূর্বাঞ্চল ও এর আশপাশের এলাকায় পশ্চিমা লঘুচাপ দেখা গেছে। এর প্রভাবে আগামী ১২ জানুয়ারি পশ্চিম হিমালীয় অঞ্চলে বৃষ্টি বা তুষারপাত হতে পারে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি জানুয়ারির শুরুতে প্রথমে মধ্যপ্রদেশের উত্তরাংশ, ছত্তিশগড় ও উপহিমালীয় পশ্চিমবঙ্গে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে উত্তরাখন্ড ও ছত্রিশগড়েও ঘন কুয়াশা দেখা যায়। গত কয়েক দিন ধরে ধরে ভারতের দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিশাল এক ঘন কুয়াশার স্তর চাদরের মতো আটকে আছে। প্রায় প্রতিদিনই কুয়াশা ঘন হচ্ছে, ফলে রোদ এই অঞ্চলগুলোর ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারছে না। কলকাতার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। অন্যদিকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আসা শীতল বায়ুর একটি প্রবাহ দিনদিন শক্তিশালী বা ঠান্ডা হচ্ছে। এই দুইয়ের প্রভাবে বাংলাদেশে শীতের তীব্রতা আরো বেড়েছে। আজ রবিবারও একই ধরনের শীত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ বলেন, বিরাজমান শৈত্যপ্রবাহ আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীত অনুভূত হতে পারে। আবহাওয়াবিদ ডক্টর মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূত হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।