আন্তর্জাতিক ডেস্ক: স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভয়াবহ অবস্থাটা আবার সামনে এলো। ছেলে মারা যাওয়ার শোক গুলির মতো বাবার বুকে বিঁধছে। সেই সঙ্গে গ্রাস করছে ভয়ংকর চিন্তা, ছেলের দেহ নিয়ে কী করে গ্রামে ফিরবেন তিনি! কোনো অ্যাম্বুল্যান্স যেতে রাজি হচ্ছে না। যারা রাজি হচ্ছে, তারা অন্ততপক্ষে আট হাজার রুপি চাইছে। গরিব বাবা কোথা থেকে এত টাকা পাবেন?
অথচ, কয়েকদিন আগে অসুস্থ আরেক ছেলে অনেকটা সেরে যাওয়ার পর তাকে নিয়ে স্ত্রী অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়ি ফিরেছেন। সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স কোনো টাকা নেয়নি। বিনা পয়সায় পৌঁছে দিয়েছে। তার যমজ বাচ্চার একজন মারা যাওয়ার পরই পরিস্থিতি বদলে গেল। অ্যাম্বুল্যান্স জানিয়ে দিল, মৃত শিশুকে নিয়ে কেউ যাবে না।
সরকারি হেলপলাইন নম্বরে ফোন করেও সুরাহা হয়নি। বাবা অসীম দেবশর্মার কাছে হাজার দুয়েক রুপি ছিল। তিনি বলেন, দেড় হাজার রুপি দিতে পারবেন। কোনো অ্যাম্বুল্যান্স রাজি হয়নি।
এই সময় হাসপাতালেই পরিচয় হয় একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, একটা নতুন ব্যাগ কিনে তাতেই ছেলের দেহ ঢুকিয়ে বাসে করে নিয়ে যাও। ২২০ রুপি দিয়ে ব্যাগ কিনে তাতে ছেলের দেহ ঢুকিয়ে তার ওপর জামাকাপড় রাখেন। এরপর বাসের সিটের ওপর জিনিস রাখার জায়গায় ব্যাগটা রেখে দেন অসীম। পুরো রাস্তা তিনি উদ্বেগে, ভয়ে কাটান। রায়গঞ্জে নেমে বাস বদল করে কালিয়াগঞ্জে পৌঁছন তিনি। বাসস্ট্যান্ডে তখন প্রচুর মানুষ, গণমাধ্যম ও অ্যাম্বুল্যান্স ছিল। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে যান তিনি। পরে ছেলের শেষকৃত্য করেন।
সবকিছু হয়ে যাওয়ার পর বিডিও অফিস থেকে ফোন পান, দেহ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।
রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী টুইট করে বলেছেন, “এটা ‘এগিয়ে বাংলার’ দুর্ভাগ্যজনক অথচ আসল ছবি।” আর তৃণমূলের রাজ্যসভা সংসদ সদস্য শান্তনু সেন বলেছেন, বিজেপি নোংরা রাজনীতি করছে।
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তাবলেছেন, ‘কিছুদিন আগেও এরকম হয়েছিল। অ্যাম্বুল্যান্স মরদেহ নিতে এত টাকা চেয়েছিল যে, একজন তাঁর মার দেহ কাঁধে করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পর প্রচুর হৈচৈ হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই ক্ষেত্রে অন্তত পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির বদল হয়নি।’
এদিকে রবিবারের এই ঘটনা জানতে পেরে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্যজুড়ে। কালিয়াগঞ্জের ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় প্রতিবেদন তলব করেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে। নিয়ম মতো ওই প্রতিবেদনের একটি কপি পাঠাতে হবে স্বাস্থ্য ভবনকেও।
সূত্র : ডয়চে ভেলে, আনন্দবাজার পত্রিকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।