দেশপ্রেম, প্রত্যাবর্তন এবং একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান—এই তিনটি শব্দ ঘিরে আবর্তিত হয় আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু। দীর্ঘ ১৫ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে হানিফ এন্টারপ্রাইজের প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক মো. হানিফ অবশেষে বাংলাদেশে ফিরেছেন। তার এই প্রত্যাবর্তন শুধু একটি ব্যক্তিগত মুহূর্ত নয়; এটি দেশের পরিবহন খাতের একটি যুগান্তকারী অধ্যায়ের পুনরারম্ভ।
হানিফ এন্টারপ্রাইজ: দেশের পরিবহন সেক্টরের এক প্রতীক
বাংলাদেশের পরিবহন খাতে হানিফ এন্টারপ্রাইজ নামটি একটি সুপরিচিত ব্র্যান্ড। ঢাকার শহর থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা এই পরিবহন কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে জনগণের আস্থা অর্জন করে আসছে। ২০১০ সালে মালিক মো. হানিফ ব্যক্তিগত ও স্বাস্থ্যগত কারণে বিদেশে পাড়ি জমান। কিন্তু প্রবাসে থেকেও তিনি হানিফ এন্টারপ্রাইজের নীতিগত ও কৌশলগত দিকনির্দেশনায় সক্রিয় ছিলেন।
Table of Contents
এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০-এর দশকের শেষদিকে। তখন ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরের মধ্যে সড়কপথে নির্ভরযোগ্য পরিবহন ব্যবস্থা ছিলো না। হানিফ এন্টারপ্রাইজ এই সংকট পূরণে সামনে আসে। বিশেষ করে ঢাকাগামী এবং ঢাকাবহির্ভূত যাত্রীদের জন্য মানসম্মত সেবা প্রদান করে প্রতিষ্ঠানটি অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করে।
১৫ বছরের প্রবাসজীবনের পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
২০২৫ সালের ১০ মে, শনিবার, মো. হানিফ লন্ডন থেকে সরাসরি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে হাজির ছিল হানিফ এন্টারপ্রাইজের ৩৫টি বাস এবং শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শুভাকাঙ্ক্ষী। এই অভিনব সংবর্ধনা আয়োজন ছিল একজন নেতার প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার প্রকাশ।
জেনারেল ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, “স্যার এখনও বিমানবন্দরে আছেন। আমরা তাকে অভ্যর্থনা জানাতে এসেছি।” এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও এই ফিরে আসাকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।
প্রবাসজীবনে থাকলেও মো. হানিফ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়মিত প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ভিডিও কনফারেন্স, মেইল ও অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন, যাতে কোম্পানির গতি ব্যাহত না হয়।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা
দেশে ফেরার পরপরই মো. হানিফ তাঁর পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, “বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমার দায়িত্ব আছে। আমি আবারও সক্রিয়ভাবে পরিবহন খাতের উন্নয়নে কাজ করব।” তিনি আরও বলেন, “বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে হানিফ এন্টারপ্রাইজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় এখন।”
এই সময়ে তিনি কিছু নতুন উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনাও শেয়ার করেন, যার মধ্যে রয়েছে:
- ইলেকট্রিক বাস চালু করা
- টিকিটিং সিস্টেমে এআই প্রযুক্তি প্রয়োগ
- পরিবহন স্টাফদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ
- দূরপাল্লার রুটে নতুন রুট যুক্তকরণ
এই ঘোষণাগুলি ইতিমধ্যেই ইন্ডাস্ট্রিতে আশাবাদের সঞ্চার করেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে আসছে এআই চালিত পরিবহন সম্পর্কিত প্রতিবেদনগুলোতেও আলোচনা হচ্ছে।
সম্মান ও স্মৃতিচারণা: কর্মীদের প্রতিক্রিয়া
হানিফ এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁর আগমন নিয়ে আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সিনিয়র ড্রাইভার মিজানুর রহমান বলেন, “স্যার ফিরে আসায় আমরা নতুনভাবে অনুপ্রাণিত। তার নেতৃৃত্বে প্রতিষ্ঠান আবার নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।”
এই আবেগঘন মুহূর্তের স্মরণে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
একজন দূরদর্শী নেতার ফিরে আসা
বাংলাদেশের পরিবহন খাতে মো. হানিফ একজন কিংবদন্তি নাম। তাঁর প্রবাসজীবনেও নেতৃত্বের জাদু অপূর্বভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এই ফিরে আসা শুধু হানিফ এন্টারপ্রাইজের জন্য নয়, বরং গোটা পরিবহন খাতের জন্য এক আশার বার্তা।
তার দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতা নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের জন্যও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
হানিফ এন্টারপ্রাইজ এখন নতুন এক দিগন্তে যাত্রা শুরু করছে, এবং আমরা প্রত্যাশা করছি যে এই প্রতিষ্ঠান আগামীতেও বাংলাদেশের মানুষের আস্থা অর্জন করে চলবে।
FAQs
- হানিফ এন্টারপ্রাইজ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়? হানিফ এন্টারপ্রাইজ ১৯৮০-এর দশকে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সে সময় থেকে দেশের অন্যতম বৃহৎ পরিবহন কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
- মো. হানিফ কত বছর বিদেশে ছিলেন? তিনি প্রায় ১৫ বছর প্রবাসে ছিলেন এবং ২০২৫ সালে দেশে ফিরে আসেন।
- হানিফ এন্টারপ্রাইজ কী ধরনের বাস সার্ভিস প্রদান করে? প্রতিষ্ঠানটি লোকাল ও আন্তঃজেলা রুটে এসি, নন-এসি এবং সুপার সার্ভিস বাস চালায়।
- প্রবাস জীবনেও মো. হানিফ কীভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন? তিনি ডিজিটাল মাধ্যমের সাহায্যে নিয়মিত অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করতেন।
- ভবিষ্যতে হানিফ এন্টারপ্রাইজের নতুন পরিকল্পনা কী? ইলেকট্রিক বাস, আধুনিক টিকিটিং সিস্টেম, নতুন রুট সংযোজনসহ আরও অনেক উন্নত প্রযুক্তির সংযোজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।