কে এই হামজা চৌধুরী?
(Hamza Dewan Choudhury – The Bangladeshi-British Football Star)
হামজা দেওয়ান চৌধুরী (জন্ম: ১ অক্টোবর ১৯৯৭, লাফবারা, লেস্টারশায়ার, ইংল্যান্ড) একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং গ্রেনাডিয়ান রক্তে জন্ম নেওয়া ইংরেজ পেশাদার ফুটবলার। তিনি মূলত রক্ষণাত্মক মধ্যমাঠের খেলোয়াড় (Defensive Midfielder) হিসেবে খেলে থাকেন। বর্তমানে তিনি ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা EFL Championship-এর ক্লাব শেফিল্ড ইউনাইটেড-এ লেস্টার সিটি থেকে ধারে খেলছেন এবং ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
পারিবারিক পরিচয় ও শিকড়
মা: রাফিয়া চৌধুরী – বাংলাদেশি, হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলের স্নানঘাট ইউনিয়নের ‘দেওয়ানবাড়ি’ পরিবারের মেয়ে।
জন্মদাতা বাবা: গ্রেনাডিয়ান
সৎ বাবা: মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী – একজন বাংলাদেশি
ভাষা ও সংস্কৃতি: হামজা সিলেটি ভাষায় সাবলীল এবং শৈশব থেকেই বারবার বাংলাদেশে এসেছেন। সেখানকার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং মুসলিম ধর্মীয় অনুশাসনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তিনি ছোটবেলায় মাদ্রাসায় পড়েছেন এবং ধর্মীয় দিক থেকেও প্রাকটিসিং মুসলিম।
ফুটবলের সূচনা ও ক্লাব ক্যারিয়ার
বয়স ৭-এ লেস্টার সিটি একাডেমিতে ভর্তি হন (২০১১)।
২০১৫ সাল থেকে পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু।
২০১৭ সালে লিভারপুলের বিপক্ষে লিগ কাপে লেস্টারের হয়ে অভিষেক।
প্রিমিয়ার লিগ অভিষেক: ২৮ নভেম্বর ২০১৭, টটেনহ্যামের বিপক্ষে।
পেশাদার ক্যারিয়ারে খেলেছেন যেসব ক্লাবে:
Leicester City – মূল ক্লাব (৯১ ম্যাচ, ১ গোল)
Burton Albion – ধারে (২৬ ম্যাচ)
Watford FC – ধারে (৩৬ ম্যাচ)
Sheffield United – বর্তমান ক্লাব (ধারে, ৮+ ম্যাচ)
অর্জন ও সম্মান
FA Cup Winner: ২০২১ (Leicester City)
FA Community Shield Winner: ২০২১
EFL Championship Winner: ২০২3–24 (Leicester City)
UEFA Competitions: ইউরোপা লিগ ও কনফারেন্স লিগে খেলেছেন
Professional Matches Played: ২০৩টি (সকল প্রতিযোগিতায় মিলিয়ে)
Goal Contribution: ২টি গোল, অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পাস ও ট্যাকল
ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা
England U-21 National Team: ৭টি ম্যাচ খেলেছেন (২০১৮–২০১৯)
UEFA Euro U-21 Championship 2019: অংশগ্রহণ করেছেন
লাল কার্ড কাণ্ড: ফ্রান্সের বিপক্ষে একটি ম্যাচে বেপরোয়া ট্যাকলে লাল কার্ড পান
এক সময় ঘোষণা করেছিলেন, “ইংল্যান্ডের হয়ে খেলাই আমার বড় স্বপ্ন।”
বাংলাদেশের হয়ে যাত্রা
ইংল্যান্ড জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়ায় ২০২৪ সালে হামজা সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন।
পাসপোর্ট প্রাপ্তি: আগস্ট ২০২৪
FA থেকে NOC: সেপ্টেম্বর ২০২৪
FIFA অনুমোদন: ডিসেম্বর ২০২৪
আন্তর্জাতিক অভিষেক: ২৫ মার্চ ২০২৫, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (BFF) এবং ফিফার সহায়তায় আইনি ও কাগজপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের হয়ে খেলার বিষয়টি তিনি ভিডিও বার্তায় জানান এবং বলেন,
“আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে যাচ্ছি। আশা করি, মাঠে দেখা হবে।”
হামজার বিশেষত্ব
রক্ষণে দক্ষতা, পাসিং ও বল কন্ট্রোল তাঁর খেলার মূল বৈশিষ্ট্য।
৮০-৮৯% সঠিক পাসিং অ্যাকুরেসি
প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভাঙা এবং খেলা নিয়ন্ত্রণে রাখায় তিনি বিশেষজ্ঞ
আধুনিক ফুটবলে “Holding Midfielder” হিসেবে বাংলাদেশ দলের ভারসাম্য রক্ষা করবেন বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে।
ব্যক্তি হামজা
ধর্ম: ইসলাম; ম্যাচের আগে আয়াতুল কুরসি ও ছোট দোয়া পড়েন
পরিবার: বিবাহিত, ৩ সন্তানের জনক
স্টাইল: ঝাকড়া চুল ও পেশাদার মনোভাবের জন্য সুপরিচিত
অবদান: FA Cup ফাইনালে ফিলিস্তিন পতাকা উত্তোলন করে বিশ্বে নজর কেড়েছেন
হামজা চৌধুরী শুধু একজন ফুটবলার নন, বরং এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। বাংলাদেশ ফুটবলের ইতিহাসে এই তারকার আগমন শুধু মাঠের শক্তি নয়, জাতীয় গর্বের প্রতীকও। জন্মসূত্রে বিদেশি হলেও, হৃদয়ে বাংলাদেশ—এই বার্তা দিয়েই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নাম আরও একবার তুলে ধরলেন হামজা।
🔗 তথ্যসূত্র সমূহ (References):
BBC Sport, The FA, Leicester City Official, Soccerbase, Wikipedia, BBC Bangla, Prothom Alo, The Daily Star, Dhaka Tribune, The Athletic, Getty Images, FIFA Records
শিকড় বাংলাদেশের হবিগঞ্জে
হামজার মা রাফিয়া চৌধুরী বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলের বাসিন্দা। জন্মগ্রহণ করেন যুক্তরাজ্যের লাফবারায় এবং বড় হয়েছেন এক বাংলাদেশি মুসলিম পরিবারে। সৎ বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরীর হাত ধরে বেড়ে উঠেছেন হামজা। ছোটবেলায় বারবার বাংলাদেশে এসেছেন, জানেন সিলেটি ভাষা—এমনকি গ্রামে খেলাধুলাও করেছেন।
ফুটবল ক্যারিয়ারের সূচনা
মাত্র ৭ বছর বয়সে লেস্টার সিটি একাডেমিতে ভর্তি হন। এরপর ধীরে ধীরে উঠে আসেন লেস্টার সিটির সিনিয়র দলে। ২০১৭ সালে লিভারপুলের বিপক্ষে লিগ কাপের ম্যাচে প্রথমবার মাঠে নামেন, আর একই বছরের নভেম্বর মাসে টটেনহামের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক হয়।
আন্তর্জাতিক ফুটবল এবং বাংলাদেশে আসা
হামজা ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলে খেলেছেন। ২০১৯ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়ায় তিনি বাংলাদেশকে বেছে নেন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পান এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে FIFA তাঁকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমতি দেয়।
মাঠে তার ভূমিকা
হামজার প্রধান পজিশন “ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার”। তার কাজ মূলত প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভাঙা, বল কন্ট্রোল করা, এবং দলের আক্রমণে পাস সরবরাহ করা। প্রয়োজনে রাইট ব্যাক হিসেবেও খেলেন তিনি। তার খেলার ধরন রিয়ালের চুয়ামেনি কিংবা ইউনাইটেডের কাসেমিরোর মতো।
পরিসংখ্যান ও সাফল্য
মোট ক্লাব ম্যাচ: ২০৩ (Premier League, Championship, FA Cup, UEFA Competitions সহ)
গোল: ২টি (মিডফিল্ডার হিসেবে রক্ষণাত্মক ভূমিকার জন্য স্বাভাবিক)
সঠিক পাস রেট: ৮০% (Sheffield United), ৮৯% (Leicester City)
FA Cup জয়: ২০২১, Leicester City [সূত্র: Soccerbase, The Guardian, FA]
বাংলাদেশের জন্য কতটা মূল্যবান?
বাংলাদেশ দলের জন্য এটা বিশাল অর্জন। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা দল হিসেবে একজন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ফুটবলার রক্ষণ ও পরিকল্পনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেন। বাংলাদেশের রক্ষণভাগে তাঁর উপস্থিতি মানেই শক্তি, অভিজ্ঞতা ও নতুন প্রজন্মের অনুপ্রেরণা।
দেশপ্রেম না কৌশল?
হামজা একসময় চেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে। পরে বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা, মা-বাবার অনুরোধ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা মিলিয়ে লাল-সবুজকে বেছে নেন। অনেকের মতে, এটি শুধু কৌশল নয়, বরং নিজের শিকড়ে ফিরে আসার আবেগময় সিদ্ধান্ত।
হামজা চৌধুরী শুধু একজন ফুটবলার নন, তিনি এক ঐতিহাসিক প্রতীক—যিনি প্রমাণ করেছেন জন্মভূমি যতই দূরে হোক, হৃদয়ের টান ফেলে না। তিনি নতুন করে আশা জাগিয়েছেন বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমীদের মনে।
FAQs About হামজা চৌধুরী (Hamza Choudhury)
হামজা চৌধুরী কে?
হামজা চৌধুরী একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইংরেজ পেশাদার ফুটবলার। তিনি ইংল্যান্ডের শেফিল্ড ইউনাইটেড ক্লাবে খেলেন এবং ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
হামজা চৌধুরীর জন্ম কোথায়?
হামজার জন্ম ১ অক্টোবর ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের লাফবারা, লেস্টারশায়ারে।
হামজা চৌধুরী কোন ক্লাবে খেলেন?
বর্তমানে তিনি ইংল্যান্ডের শেফিল্ড ইউনাইটেডে (Sheffield United) লেস্টার সিটি থেকে ধারে খেলছেন।
হামজা চৌধুরী কোন পজিশনে খেলেন?
তিনি মূলত একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। প্রয়োজনে রাইট ব্যাক হিসেবেও খেলেন।
হামজা চৌধুরী কি ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন?
হ্যাঁ, তিনি ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে ৭টি ম্যাচ খেলেছেন এবং ২০১৯ ইউরো U21 চ্যাম্পিয়নশিপেও অংশ নিয়েছেন।
হামজা চৌধুরী কবে বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন?
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ফিফা থেকে অনুমতি পাওয়ার পর তিনি ২০২৫ সালের মার্চে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক করেন।
হামজা চৌধুরীর মা-বাবা কে?
তার মা রাফিয়া চৌধুরী বাংলাদেশি, হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলের বাসিন্দা। জন্মদাতা বাবা গ্রেনাডিয়ান এবং সৎ বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী।
হামজা চৌধুরীর ধর্ম কী?
তিনি একজন মুসলিম। তিনি বলেন, ম্যাচে মাঠে নামার আগে আয়াতুল কুরসি ও ছোট দোয়া পড়েন।
হামজা চৌধুরী কি প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন?
হ্যাঁ, তিনি ৬টি মৌসুম ধরে লেস্টার সিটির হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন।
হামজা চৌধুরীর পারফরম্যান্স কেমন?
তিনি একজন দক্ষ ট্যাকলার, পাসিং অ্যাকুরেসি ৮০-৮৯%, FA Cup জয়ী এবং ক্লাব ক্যারিয়ারে ২০৩টি ম্যাচে অংশ নিয়েছেন।
হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশের হয়ে খেলার কারণ কী?
ইংল্যান্ড দলে না খেলতে পারায়, নিজের শিকড়ে ফিরে আসা এবং বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসার কারণে তিনি লাল-সবুজের জার্সি বেছে নিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
