আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্র, টিভি এবং আধুনিক সঙ্গীতের জগতে ঝড় তোলার পর দক্ষিণ কোরিয়া এখন হালাল শিল্পের দিকে পা বাড়িয়েছে। হালাল শিল্প, যা সারা বিশ্বের প্রায় ১শ’ ৮ কোটি মুসলমানের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কোরিয়ান রন্ধনশৈলীর জনপ্রিয়তা ও খাবারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং ২০২৫ সালের মধ্যে হালাল খাবারের উপর মুসলমানদের ব্যয় ১লাখ ৬৭ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে পুঁজি করে ব্যবসায়িদের উৎসাহিত করছে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার। এটি খাদ্য উপাদান বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে প্রত্যয়ন পত্র পেতে ভর্তুকি এবং ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের যুক্ত করতে প্রচারমূলক উদ্যোগের জন্য সহায়তা প্রদান করছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর দায়েগুতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ একটি ‹হালাল ফুড অ্যাক্টিভেশন প্রজেক্ট’-এর নেতৃত্ব দিচ্ছে, যার লক্ষ্য হল শহরে হালাল-প্রত্যয়িত সংস্থার সংখ্যা দশগুণ বৃদ্ধি করা এবং ২০২৮ সালের মধ্যে রপ্তানি তিনগুণ করে ২০ কোটি ডলারে মিলিয়নে উন্নীত করা। খাদ্য রপ্তানি বিভাগের প্রধান দক্ষিণ কোরিয়ার কৃষি, খাদ্য ও গ্রামীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লি ইয়ং জিক আল জাজিরাকে বলেছেন, ‹হালাল খাদ্যের বাজার হল একটি নীল মহাসমুদ্র যার প্রবৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা রয়েছে।›
গত বছর দ.কোরিয়া মালয়েশিয়ার ইসলামিক দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো হালাল কোরিয়ান গরুর মাংস রপ্তানি শুরু করে, যা হ্যানউ নামে পরিচিত। খাদ্য শিল্প ছাড়াও, জনপ্রিয় ‘কে-বিউটি› খাতের উৎপাদকরাও এই প্রবণতাকে কাজে লাগাচ্ছেন। দ.কোরিয়ার প্রসাধনী প্রস্তুতকারক কসম্যা´ ২০১৬ সাল থেকে ইন্দোনেশিয়ায় এর শিল্পকারখানাগুলিতে হালাল পণ্য উৎপাদন করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার দুটি প্রত্যয়নকারী সংস্থার সম্মতি পত্র পাওয়ার পর নভেম্বরে দেশটি ইন্দোনেশিয়ার সাথে কৃষি ও খাদ্য পণ্যের প্রত্যয়ন করা থেকে অব্যাহতি সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।
যদিও দক্ষিণ কোরিয়া মুসলিম বিশ্বের সাথে ব্যবসায়িক সংযোগ স্থাপনের জন্য তার উচ্চাকাক্সক্ষার কথা গোপন করছে না, কিন্তু দেশটিতে মুসলিম জনগণ এবং ইসলামী সংস্কৃতির প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক নয়। দায়েগুতে, যেখানে সরকারী কর্মকর্তারা সর্বাত্মকভাবে মুসলিম বাজার ধরার চেষ্টা করছেন, একটি ছোট মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা স্থানীয় বাসিন্দাদের এবং রক্ষণশীল খ্রিস্টানদের তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা মসজিদের বিরুদ্ধে প্রচারণা মোকাবেলায় ব্যর্থতার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের কাছে ‘গুরুতর উদ্বেগ› প্রকাশ করে, যার মধ্যে ছিল নির্মাণস্থলের বাইরে শূকরের মাথা প্রদর্শন এবং একটি ব্যানার অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা ইসলামকে মানুষকে হত্যাকারী একটি অশুভ ধর্ম হিসেবে বর্ণনা করে। এর আগে, ২০১৮ সালে দেশটি ইয়েমেন থেকে আসা কয়েকশ মুসলিম আশ্রয়প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রত্যক্ষ করেছে। একই বছরে মুসলিম বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদের কারণে শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে নামাজ কক্ষের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার চারটি হালাল প্রত্যয়নের সংস্থার অন্যতম ‘কোরিয়া হালাল অ্যাসোসিয়েশন (কোহাস)’ এর চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ জো আল জাজিরাকে বলেছেন যে, একটি ক্রমবর্ধমান হালাল বাজার সহনশীলতা এবং বোঝাপড়ার প্রসার ঘটাতে পারে। জো, যিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছেন, কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য একটি ইসলামিক পরামর্শদাতা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং কোরিয়ান ভাষায় হালাল সম্পর্কে একটি বই অনুবাদ করেছেন, বলেছেন, ‘কোরিয়ার মূল শক্তিগুলির মধ্যে একটি হল দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। কিছু নেতিবাচক মন থাকা সত্ত্বেও, আমরা এই নতুন বাজারে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক চিন্তা করছি এবং কোরিয়ানরাও শিখছে। এটা আমাদের সাংস্কৃতিকভাবে উন্মুক্ত হতে সাহায্য করছে।
Get the latest Zoom Bangla News first — Follow us on Google News, Twitter, Facebook, Telegram and subscribe to our YouTube channel.