জুমবাংলা ডেস্ক: তার নাম জোনাথন জেমস্। আমেরিকার ফ্লরিডার এই হ্যাকার ১৭ বছর বয়সে হ্যাক করেছিলেন আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ওয়েবসাইট। কিন্তু তিনি আত্মঘাতী হন। তাও আবার মাত্র ২৪ বছর বয়সে। কিন্তু এত অল্প বয়সে মৃত্যু হলেও জোনাথনের জীবনগাথা যেকোন রহস্য-রোমাঞ্চ সিনেমাকেও হার মানায়। জোনাথনের পুরো নাম জোনাথন জোসেফ জেমস। ১৯৮৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফ্লরিডার পাইনক্রেস্টে তার জন্ম। ছোট থেকেই কম্পিউটার এবং কম্পিউটারের যাবতীয় যন্ত্রাংশের প্রতি জোনাথনের অমোঘ আকর্ষণ ছিল।
জোনাথনই ছিলেন আমেরিকার প্রথম কিশোর হ্যাকার যিনি সাইবার অপরাধের জন্য জেল গিয়েছিলেন। জোনাথনের দাবি ছিল, তিনি এথিক্যাল হ্যাকার (যারা ভালো কাজের জন্য নিজেদের হ্যাকিং বিদ্যাকে কাজে লাগান) হিসাবে কাজ করতেন। তবে প্রথম থেকেই এথিক্যাল হ্যাকিং করতেন না জোনাথন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি প্রথম সাইবার অপরাধ করেন। জেলে যান ১৬ বছর বয়সে। ১৯৯৯ সালের অগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে বেলসাউথ এবং মিয়ামি ডেড স্কুলের ওয়েবসাইট-সহ একাধিক ওয়েবসাইট হ্যাক করেন জোনাথন। আর এর মাধ্যমেই আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরে আসেন।
কম বয়সেই এই ওয়েবসাইট, ঐ ওয়েবসাইট ঘুরে জোনাথনের হ্যাকিংকে সম্ভাব্য হুমকি হিসাবেই দেখেছিলেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। তাই নির্দেশ আসে জোনাথনের অজান্তেই তার উপর কড়া নজরদারি চালানোর। এর মধ্যেই আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি বিভাগ ‘ডিফেন্স থ্রেট রিডাকশন এজেন্সি (ডিটিআরএ)’-এর ওয়েবসাইটে উঁকিঝুঁকি মারতে থাকেন জোনাথন। গোয়েন্দারা বুঝতে পেরে জোনাথনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
জেমস পরে গোয়েন্দা বিভাগের কাছে স্বীকার করেন যে তিনি ভার্জিনিয়ার ডুলেসের একটি কম্পিউটারে একটি অবৈধ সিস্টেম ব্যবহার করেছেন এবং এর সাহায্যেই তিনি ডিটিআরএ কর্মীদের কাছে আসা তিন হাজারেরও বেশি বার্তা দেখতে পারতেন। পাশাপাশি তিনি ডিটিআরএ-র ১০টি কম্পিউটারে নজরদারি চালাচ্ছিলেন বলেও তিনি স্বীকার করেন।
এবার জোনাথনের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করে মাঠে নামে নাসা। নাসা দাবি করে, জোনাথন যে সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, তা নাসার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান নিয়ন্ত্রণ করে। ঐ সফটওয়্যার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা অন্যান্য ভৌত পরিবেশও নিয়ন্ত্রণ করত বলেও নাসা জানায়।
২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারি জোনাথনের বাড়িতে হানা দেয় প্রতিরক্ষা বিভাগ, নাসা এবং পাইনক্রেস্ট পুলিশ বিভাগের আধিকারিকরা। সমস্ত প্রমাণ জোগাড় করে নিয়ে গিয়ে এর ছ’মাস পরে জোনাথনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
ঐ বছরেরই ২১ সেপ্টেম্বরে জোনাথনের সাজা ঘোষণা করা হয়। তবে খারাপ উদ্দেশ্য না থাকার জন্য এবং বয়স কম হওয়ায় জেমসকে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত গৃহবন্দি থাকার সাজা শোনানো হয়। পাশাপাশি তাকে নাসা এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লেখার নির্দেশও দেওয়া হয়। জোনাথনের কম্পিউটার ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। তবে সেই চুক্তিভঙ্গ করার এবং মাদক সেবন করার অভিযোগে তাকে শেষ পর্যন্ত ছয় মাসের জেলের সাজা শোনানো হয়।
এ-ও উল্লেখ করা হয়েছিল যে, জোনাথন যদি প্রাপ্তবয়ল্ক হতেন তা হলে তার অপরাধের জন্য অন্ততপক্ষে ১০ বছরের সাজা শোনানো হত। জেল থেকে বেরিয়ে খানিক মুষড়ে পড়েছিলেন জোনাথন। মাঝেমধ্যে মাদকও সেবন করতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু হ্যাকিং থেকে নিজেকে দূরেই রেখেছিলেন তিনি।
২০০৮ সালের ১৭ জানুয়ারি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর টিজেএক্স-এর কম্পিউটার হ্যাক হয়ে লাখ লাখ গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। হ্যাকারদের এই একই চক্র বোস্টন মার্কেট, বার্নস অ্যান্ড নোবেল, স্পোর্টস অথরিটি, ফরএভার ২১, ডিএসডব্লু, অফিসম্যাক্স এবং ডেভ অ্যান্ড বাস্টারস-এর মতো সংস্থার ওয়েবসাইটও হ্যাক করা হয়। এই হ্যাকারদের দলের পান্ডা অ্যালবার্ট গঞ্জালেজ হ্যাকিং করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছিলেন। অ্যালবার্টের দলে কয়েক জন সদস্য ছিলেন যাঁরা জোনাথনের বন্ধু এবং পূর্বপরিচিত ছিলেন।
ফলে অপরাধীকে খুঁজতে খুঁজতে আবার জোনাথনের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছান গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। জোনাথনের পাশাপাশি তার ভাই এবং তার বান্ধবীর বাড়িতেও অভিযান চালান সরকারি আধিকারিকরা। অনেক খুঁজেও ঐ হ্যাকারদের দলের সঙ্গে জোনাথনের কোনো যোগসাজশ খুঁজে বার করতে ব্যর্থ হন গোয়েন্দারা। তবে জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে। এরপর ২০০৮ সালের ১৮ মে জোনাথনকে বাথরুমে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তে উঠে আসে যে মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী হন তিনি। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ২৪।
জোনাথনের লাশের পাশ থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করা হয়। সেই সুইসাইড নোটে লেখা ছিল, ‘আমি সত্যিই টিজেএক্স-এর কম্পিউটার হ্যাক করিনি। কিন্তু তবুও আমাকে ধরে নিয়ে যেতে পারে ওরা। বিচারব্যবস্থায় আমার কোনো বিশ্বাস নেই। সম্ভবত আমার এই চিঠি জনসাধারণের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠাবে। যে ভাবেই হোক, আমি এই পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি। নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার এটাই আমার একমাত্র উপায়।’
পরে অবশ্য জোনাথনের বাবা দাবি করেন, জেল থেকে বেরোনোর পর থেকেই অবসাদে ভুগছিলেন জোনাথন। এর আগেও কয়েক বার তিনি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। পরে অবশ্য তদন্ত চালিয়ে গোয়েন্দারা মূল চক্রী অ্যালবার্টকে গ্রেফতার করে।
সূত্র: আনন্দবাজার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।