জুমবাংলা ডেস্ক : ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রাব্বানি নাদিমকে ‘উচিৎ শিক্ষা’ দিতে চেয়েছিলেন জেলার বকশীগঞ্জ উপেজলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। তার নেতৃত্বে মারধরের কারণে নাদিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ কথা জানান। এর আগে শনিবার সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে বাবুকে আটক করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সাংবাদিক নাদিম হ ত্যা কা ণ্ড নিয়ে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি কাজ করে র্যাব এবং সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ শুরু করে। র্যাবের সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার নেতৃত্বে এবং র্যাব-১৪-এর জামালপুর ক্যাম্প প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত সিসি টিভি ফুটেজ অ্যানালাইসিস করে প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সকালে পঞ্চগড় থেকে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার নেতৃত্বে সেখানে (পঞ্চগড়) অবস্থানরত র্যাব-১৩-এর একটি আভিযানিক দলের সহযোগিতায় পঞ্চগড়েরর দেবীগঞ্জ এলাকা থেকে মাহমুদুল আলম বাবুসহ আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘অর্থাৎ ঘটনাস্থলে থাকা মনির ও জাকিরকে- যারা সাংবাদিক নাদিমকে এলোপাতাড়ি পিটিয়েছিল। এই দুজনসহ তিনজনকে আমরা প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। কিছুক্ষণ আগে এ ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত অর্থাৎ সাংবাদিক নাদিমক যিনি সর্বপ্রথম মোটরসাইকেল চালানো অবস্থায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন তাকে র্যাব-১২-এর সহযোগিতায় বগুড়া থেকে আমরা আটক করতে সক্ষম হই।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পরিকল্পনাতেই উক্ত হ ত্যা কাণ্ডটি সংঘটিত হয়। সাংবাদিক নাদিম সাম্প্রতিক সময়ে বাবুর বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশ করায় বাবু ক্ষিপ্ত হয়ে যান। প্রথমত, তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক নাদিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। যেটি পরবর্তীতে ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনাল উক্ত মামলাটি খারিজ করে দেন।’
তিনি বলেন, ‘এই মামলাটি যখন খারিজ হয়ে যায়, তখন নাদিম তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এতে বাবু আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। মামলা খারিজের ঘটনাটি ছিল ১৪ জুন। পরবর্তীতে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে বাবু তার যে সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে তাদের মাধ্যমে সাংবাদিক নাদিমকে একটি উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা নেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বকশীগঞ্জ উপজেলার পাটহাটি এলাকায় তার সন্ত্রাসী গ্রুপ অবস্থান করছিল, ১৪ জুন রাতের বেলা। মূল পরিকল্পনাকারী বাবু সন্নিকটে অবস্থান করে নির্দেশ দিচ্ছিলেন।’
খন্দকার মঈন বলেন, ‘আনুমানিক রাত ১০টার দিকে কয়েকজন সাংবাদিকসহ নাদিম যখন বাসায় যাচ্ছিলেন তখন রেজাউল দৌড়ে গিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন, চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে। তখন বাবু সন্ত্রাসী গ্রপের অন্যরা দৌড়ে যায় এবং জাকির, মনিরসহ তারা সাংবাদিক নাদিমকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। তার (নাদিম) এক সহযোগী সাংবাদিককেও তারা মারধর করে। পরে সাংবাদিক নাদিমের চিৎকারে এলাকাবাসী ও অন্যান্য সাংবাদিক তাকে বাঁচাতে আসে এবং ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। গুরুতর জখম অবস্থায় সাংবাদিক নাদিমকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরের দিন বিকেলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরপরই তিনি (বাবু) আত্মগোপনে চলে যান এবং আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় পঞ্চগড়ে তার এক দুঃসম্পর্কীয় আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে আমরা আটক করতে সক্ষম হই।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।