জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রপ্তানি দিন দিন বাড়ছে। এখন রপ্তানিতে পিছিয়ে থাকা কম্পানিগুলোও নতুন বাজার ও বড় রপ্তানি আদেশ পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তারা। আগামী তিন বছরে আফ্রিকাসহ নতুন ১০টি দেশে ওষুধ রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে ওয়ান ফার্মা। কম্পানিটি বর্তমানে তিনটি দেশে রপ্তানি করছে।
আরো কয়েকটি দেশে রপ্তানি করতে প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার।
তিনি বলেন, ‘আমদানির বিকল্প ওষুধ বাজারে দিতে সক্ষম হয়েছি। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। আমদানি না করে আমাদের কম্পানি দেশে ওষুধ তৈরি করে কম দামে দিতে পারছি।
আগামী দিনে এমন ওষুধ উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি স্থাপন করে ভালো মানের ওষুধ তৈরি করে এখন বাজারে ছাড়ছি। আগামী দিনগুলোতে ভালো কম্পানির ওষুধের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কম দামে বাজারে ওষুধ দিতে চাই।’
ওয়ান ফার্মার চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান ক্যান্সারের বায়োটেক ওষুধ তৈরির প্লান্ট স্থাপন করছে। কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। আরো যন্ত্রপাতি আসছে। এগুলো স্থাপন করে দেশে তৈরি ক্যান্সারের ওষুধ বাজারে দেওয়া সম্ভব হবে। ক্যান্সারের ওষুধ এখন বেশ ব্যয়বহুল। আমরা উৎপাদন করলে এই ওষুধ গরিব মানুষ কম দামে পেলে তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এই ওষুধ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে এরই মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আরো কিছু চুক্তি সই করার পরিকল্পনা আছে।’
জানা যায়, ওষুধ রপ্তানি বাড়াতে কম্পানিটি ব্যবসা সম্প্রসারণে যাচ্ছে। এ জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। বিশেষ করে ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদনে এর বড় অংশ বিনিয়োগ হচ্ছে। ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদন শুরু হলে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানিতে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে। ২০১৫ সালে এই ওষুধ কম্পানি বগুড়ার বিসিক শিল্পনগরীতে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এই ওষুধ কারখানায় ২০০ শ্রমিক কাজ করছেন। শতাধিক জেনেরিক ওষুধ এখন তৈরি করছে কম্পানিটি।
ওয়ান ফার্মার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘আলজেরিয়া তাদের কম্পানির ওষুধ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশটির সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এখন প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলো চলছে। এটি শেষ হলে রপ্তানি সম্ভব হবে। এর বাইরেও আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অনুন্নত দেশগুলোতে ওষুধ রপ্তানির বাজার বাড়ানো যাবে। দেশের বিভিন্ন কম্পানি এখন ওষুধ রপ্তানির বাজার ধরছে। আমাদের কম্পানি ১০০টি দেশে রপ্তানির টার্গেট করে কাজ করছে। আগামী দুই থেকে তিন বছরে ১০ দেশে রপ্তানি করতে চাই। বর্তমানে আফগানিস্তান ও মায়ানমারে রপ্তানি হচ্ছে। শ্রীলঙ্কা থেকে রপ্তানি আদেশ দিয়েছে। এই তিন দেশে এখন রপ্তানি হচ্ছে। ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদন শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। কম্পানির শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সাল থেকে ওষুধ রপ্তানি শুরু করে ওয়ান ফার্মা। ২০২৪ সালে দুই মিলিয়ন ডলারের ওষুধ আফগানিস্তানে রপ্তানি করেছে। চলতি বছরে তিন মিলিয়ন ডলারের অর্ডার আছে। এ ছাড়া মায়ানমারে ৫০ হাজার ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। এই ওষুধ কম্পানিটির বার্ষিক টার্নওভার ১৫০ থেকে ১৮০ কোটি টাকা। গত বছরে এই কম্পানির প্রবৃদ্ধি ৬১ শতাংশ ছিল বলে দাবি করেছেন। কম্পানিটি স্টরয়েড ও বায়োটেক ওষুধ তৈরি করছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ওষুধশিল্পে উত্তরোত্তর উন্নতি করেছে। দেশে উৎপাদিত ওষুধ বিশ্বের ১৫৭টি দেশে রপ্তানি করা হয়। পাশাপাশি দেশের মোট চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ এখন দেশেই উৎপাদিত হয়। দেশে উৎপাদিত প্রায় সব ওষুধই রপ্তানি হচ্ছে। এই রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি ডলার। দেশে উৎপাদিত ওষুধ রপ্তানিতে উৎসাহিত করতে সরকার অনেক দিন ধরে প্রণোদনা দিয়ে আসছে। বর্তমানে এই পণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদসহ ওষুধ কম্পানি আছে ৯০৫টি। এর মধ্যে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ কম্পানি আছে ৩০৫টি, চালু ২২৯টি। দেশের ওষুধের বাজার ৪০ হাজার কোটি টাকার।
ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওয়ান ফার্মা। এই গ্রুপ অব কম্পানির চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার। তিনি বলেন, দেশে অনেক দিন ধরেই নগরায়ণ বাড়ছে। এই কারণে ফসল উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে ২০০২ সালে যাত্রা শুরু করে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।