জুমবাংলা ডেস্ক : দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের বছরগুলোর তুলনায় কমেছে। ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার। বর্তমানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৯১ লাখের ওপরে। অর্থাৎ গত ১০ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে কমবেশি ২ কোটি ৬৮ লাখের মতো। দেশের বর্তমান জনসংখ্যার সত্যিকার চিত্র তুলে ধরতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা, ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে আজ।
বেলা ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সেলিব্রেটি হলে আয়োজিত প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি থাকবেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
বিবিএস সূত্র জানিয়েছে, পরিসংখ্যান আইন, ২০১৩ অনুযায়ী আদমশুমারিকে ‘জনশুমারি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। সে অনুযায়ী সাধারণত দেশে প্রতি ১০ বছর পর জনসংখ্যার হিসাব করা হয়। দেশে সর্বশেষ শুমারি হয়েছিল ২০১১ সালের ১৫ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত। ওই আদমশুমারি ও গৃহগণনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার। সে অনুযায়ী ২০২১ সালে নতুন করে আদমশুমারি করার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে তা পিছিয়ে চলতি বছরের জুনে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা, ২০২১’ শীর্ষক প্রকল্প ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পায়। শুরুতে এ খাতে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। পরে প্রকল্পের সংশোধনীতে ব্যয় কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। ১৫ জুন শুরু হওয়া এ গণনা চলে ২১ জুন পর্যন্ত। দেশের ষষ্ঠ এই জনশুমারির মাধ্যমে জানা যাবে দেশের মোট জনসংখ্যা এখন কত। জনসংখ্যার বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কোনো কথা বলতে রাজি হননি পরিসংখ্যান ব্যুরোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এবারের শুমারিতে দেশের জনসংখ্যা হয়েছে প্রায় ১৭ কোটি।’ একটু সুনির্দিষ্ট করে বলার অনুরোধ জানালে তিনি ১৬ কোটি ৭০ থেকে ৮৫ লাখের ইঙ্গিত দেন। এর আগে গত বছর
২৮ জুন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে বলা হয়েছিল, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার। ২০২০ সালে দেশে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৮২ লাখ ২ হাজার জন। ওই সময় জরিপে বলা হয়েছিল, এবার জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমেছে, যেখানে স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের বছর ছিল ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এর আগের বছর ছিল ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। জনসংখ্যার ঘনত্ব আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। এখন প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বসবাস করে ১ হাজার ১৪০ জন। আগের বছর ছিল ১ হাজার ১২৫ জন। ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার। জনসংখ্যা বাড়ার হার ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৮ বছর। নারীদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭৪ দশমিক ৫ বছর, পুরুষের গড় আয়ু ৭১ দশমিক ২ বছর। তবে সরকারের এ তথ্য নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেই।
জনসংখ্যাবিদের মতে, দেশে মোট জনসংখ্যার সঙ্গে প্রতিবছর ২৪ থেকে ২৫ লাখ মানুষ যুক্ত হয়। প্রধানত দুটি উৎস থেকে দেশের জনসংখ্যাবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়। প্রথমত বিবিএস নিয়মিত জনসংখ্যা-সংশ্লিষ্ট নানা তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করে। দ্বিতীয়ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর জনসংখ্যার কিছু তথ্য দেয়। প্রতিবছর ১১ জুলাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস’ পালন করে। কিন্তু এ বছর দেশে ১১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি থাকায় বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয় ২১ জুলাই।
সেদিন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটি বা তার কিছু বেশি। তবে গোল বাধে জনসংখ্যা নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালকের দেওয়া তথ্যে। ওই দিন সভাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের একটি বিশেষ প্রকাশনা দেওয়া হয়।
এতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানুর লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। দেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি। অন্যদিকে জনসংখ্যা নিয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরো দিচ্ছে ভিন্ন তথ্য। ‘কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নির্ধারণের সুবিধার্থে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা’র তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে দিয়েছিল পরিসংখ্যান ব্যুরো। পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছিল, ২০২১ সালের ১ জুলাই দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৭ কোটি ৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৭। ২০২১ সালের ১ জুলাইয়ের পর এক বছর পার হয়েছে। দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে প্রথম আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালে। তখন দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ। দ্বিতীয় আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। সে সময় মোট জনসংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৯৯ লাখ। এরপর ১০ বছর পর পর দেশের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম আদমশুমারি ও গৃহগণনা যথাক্রমে ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালে ১১ কোটি ১৫ লাখ, ২০০১ সালে ১৩ কোটি ৫ লাখ ও ২০১১ সালে সর্বশেষ ১৪ কোটি ২৪ লাখ ১ হাজার ছিল। গত শুমারিগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রতি ১০ বছরে গড়ে প্রায় ২ কোটি বেড়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।