ইথিওপিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আফার অঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার বছর নিষ্ক্রিয় থাকার পর প্রথমবারের মতো জেগে উঠেছে হেইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরি। কয়েক ঘণ্টার অগ্ন্যুৎপাতে ছাইয়ের ঘন মেঘ রেড সী পেরিয়ে পৌঁছে গেছে ইয়েমেন ও ওমানেও।
ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলে অবস্থিত হেইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরি দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে রবিবার (২৩ নভেম্বর) হঠাৎ অগ্ন্যুৎপাত শুরু করে। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা অগ্ন্যুৎপাত থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া ও ছাইয়ের স্তম্ভ প্রায় ১৪ কিলোমিটার উঁচুতে উঠে রেড সী অতিক্রম করে ইয়েমেন ও ওমানের আকাশেও ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদ জানান, রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে প্রায় ৫০০ মাইল উত্তর-পূর্বে, ইরিত্রিয়ার সীমান্তের কাছে অবস্থিত এই আগ্নেয়গিরি থেকে এর আগে কোনো অগ্ন্যুৎপাতের রেকর্ড নেই।
তিনি বলেন, “মানুষ বা প্রাণীর কোনো ক্ষতি না হলেও বহু গ্রাম ছাইয়ে ঢেকে গেছে। এতে স্থানীয় পশুপালনকারী পরিবারগুলো খাদ্য সংকটে পড়ার ঝুঁকিতে আছে।”
প্রায় ৫০০ মিটার উচ্চতার হেইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরিটি অবস্থিত ভূতাত্ত্বিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয় রিফট ভ্যালি অঞ্চলে, যা দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলে নিয়মিত ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি কর্মকাণ্ড ঘটে থাকে।
ভলকানিক অ্যাশ অ্যাডভাইসরি সেন্টার (VAAC) জানিয়েছে, আগ্নেয়ছাইয়ের মেঘ ইথিওপিয়া ছাড়িয়ে ইয়েমেন, ওমান, ভারত ও উত্তর পাকিস্তানের আকাশেও ছড়িয়ে পড়েছে।
অগ্ন্যুৎপাতের সময় আফার অঞ্চলে প্রচণ্ড শব্দ ও ধাক্কা অনুভূত হয়েছে বলে জানান এক বাসিন্দা আহমেদ আবদেলা। তার ভাষায়, ‘মনে হয়েছে হঠাৎ কোনো বোমা বিস্ফোরিত হয়ে ধোঁয়া আর ছাই ছড়িয়ে পড়েছে।’ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে বিশাল সাদা ধোঁয়ার স্তম্ভ দেখা গেছে।
স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের গ্লোবাল ভলকানিজম প্রোগ্রাম জানিয়েছে, হেইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরির হোলোসিন যুগে, যখন বরফ যুগের শেষ পর্যায় চলছিল—যা প্রায় ১২ হাজার বছর আগে। এরপর আর কোনো অগ্ন্যুৎপাতের রেকর্ড নেই। মিশিগান টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির আগ্নেয়গিরিবিদ সাইমন কার্নও ব্লুস্কাই–এ নিশ্চিত করেছেন যে হেইলি গুব্বির হোলোসিন যুগে কোনো অগ্ন্যুৎপাতের ইতিহাস নেই।
এদিকে এই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিমান চলাচলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভারতের একটি ফ্লাইট অগ্ন্যুৎপাতের ছাইয়ের জন্য ইতিমধ্যেই ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগ্নেয়গিরির ছাই বিমানের জেট ইঞ্জিনের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। কোনও ভাবে সেই ছাই বিমানের ইঞ্জিনে ঢুকে পড়লে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আগ্নেয়গিরির ছাই মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার আকাশপথে আরও কিছুদিন প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



