জুমবাংলা ডেস্ক : নওগাঁর মান্দা উপজেলায় চলতি জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় একটি বিদ্যালয় থেকে ৪ পরীক্ষার্থীর কেউই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। পরীক্ষার কেন্দ্রে উপস্থিতি স্বাক্ষরতা দেখার সময় বিষয়টি প্রকাশ পায়।
প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে- শ্যামপুর নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়া ও শিক্ষকদের অনীহার কারণেই এমনটি ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। এরপর ২০০০ সালে ৬ষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নিম্ন মাধ্যমিক হিসেবে পাঠদানের অনুমতি পায়। প্রধান শিক্ষকসহ মোট ৬জন শিক্ষক রয়েছে। এছাড়া একজন পিয়ন ও একজন অফিস সহায়ক রয়েছে।
বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৫ জন। ৭৬ শতাংশ জায়গার ওপর সেই সময় মাটির ঘর ছিল। বর্তমানে সেখানে একটি আধাপাকা ইটের ঘর যা অফিস কক্ষ এবং টিনের বেড়া ও টিনের ছাউনির তিনটি কক্ষ, যা পাঠদান করা হয়।
উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম শ্যামপুর। উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে অবিস্থত। প্রত্যন্ত-অবহেলিত গ্রামের নিম্নবৃত্ত পরিবারে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে গত ২০ বছর আগে শ্যামপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। বছরের পর বছর স্থানীয়দের অনুদান ও সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলছিল। শিক্ষকরাও প্রতিষ্ঠানের জন্য শ্রম ও নিজেদের পকেট থেকে টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক-এলাকাবাসীরা হতাশ হয়ে পড়েন।
চলতি বছরে বিদ্যালয়টি থেকে জেএসসিতে চারজন (দুই জন মেয়ে ও দুই জন ছেলে) পরীক্ষার্থী অংশ নেয়ার কথা থাকলেও কেউ অংশ নেয়নি। বিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। যেখানে আসা-যাওয়ার ভাড়া প্রায় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। প্রত্যন্ত গ্রামের নিম্নবৃত্ত পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের জন্য ভাড়ার টাকা না থাকায় পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে দেয়নি বলে জানা যায়। শিক্ষার্থীদের ইচ্ছা থাকলেও ভাড়ার কারণে হয়ত এমনটি হয়েছে।
শ্যামপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা নিজে থেকে চাঁদা দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যালয়টি ধরে রেখেছি। গত ২০১৮ সালে ৭ জন এবং ২০১৭ সালে ১২ জন জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাশ করে। এবছরও চারজন পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।
শিক্ষার্থীদের পরিবারের সাথে কথা বলেছিলাম, পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য। তারা জানায়- ‘ভাড়া দিয়ে আমাদেরকেই পরীক্ষার কেন্দ্রে নিয়ে যেতে। যেখানে আমরা চলতে পারি না, সেখানে টাকা খরচ করে কিভাবে পরীক্ষার কেন্দ্রে নিয়ে যাব।’
প্রতিবছরই এমপিওভুক্ত হওয়ার আশ্বাস পাই। কিন্তু কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত করার জন্য স্থানীয় সাংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন দপ্তরে অবগত করা হয়েছিল। এবছরও পার হয়ে গেল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না।
তিনি আরো বলেন, এদিকে বয়সও শেষ। বলতে গেলে জীবনটাও শেষ! কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। এনজিও’তে যাব তার বয়সও নাই। আমার মতো অন্য শিক্ষকরা কৃষি কাজ ও ছোটখাট ব্যবসা করে খুব কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে ‘প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত হলে পরিবার পরিজন নিয়ে চারটা ডাল-ভাত খেতে পারতাম। সে আশাও এখন গুড়ো বালি।’ আগামীতে হয়ত প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হতে পারে।
কয়াপাড়া কামার কুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব আজাহারুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শুরুর কিছু পর পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি কার্যক্রম শুরু হয়। কেন্দ্রের ৯ নম্বর কক্ষে দেখা যায় চারজন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল শ্যামপুর নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।
মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, আমার যেটা মনে হয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। শিক্ষার্থী আছে কিনা সন্দেহ। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন থেকে এমপিও না হওয়ায় সঠিকভাবে চলছিল না। মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হালিম বলেন, বিষয়টি জানা নেই। শিক্ষা অফিসারের কাছ থেকে অবগত হতে হবে। তবে প্রতিষ্ঠান থেকে কেন পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি তা জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।