পুরো পৃথিবীর ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি চলে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে। সেই ট্রানজিস্টরের উদ্ভাবকদের একজন তো বটেই, বড়বাবা বলা যায় উইলিয়াম শকলিকে। নন্দিত ছিলেন তিনি, একই সঙ্গে ছিলেন নিন্দিত। একুশ শতকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে প্রযুক্তি। যে আধুনিক প্রযুক্তি আমরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছি, তা হলো তথ্যপ্রযুক্তি। আমাদের প্রায় সব কাজই এখন কোনো না কোনোভাবে কম্পিউটারনির্ভর।
১৯৪৫ সালে যখন প্রথম কম্পিউটার এনিয়াক (ENIAC: Electronic Numerical Integrator and Computer) তৈরি হয়, তখন তাতে ব্যবহার করা হয়েছিল হাজার হাজার ভ্যাকুয়াম টিউব। তখন একটি কম্পিউটারের জন্য জায়গা লাগত কমপক্ষে ৫০ ফুট বাই ৩০ ফুট। সে সময় কেউ ভাবতেও পারেনি, একদিন কম্পিউটার চলে আসবে আক্ষরিক অর্থেই মানুষের হাতের মুঠোয়। আজ এই ২০২৩ সালে পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষের হাতে রয়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি স্মার্টফোন। ইলেকট্রনিকসের যে উদ্ভাবনের ফলে বিশাল শিল্পবিপ্লব ঘটে গেছে পৃথিবীজুড়ে, তার মূলে রয়েছে ট্রানজিস্টরের উদ্ভাবন।
প্রযুক্তির ইতিহাসে উজ্জ্বলতম দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বরকে, যেদিন যুক্তরাষ্ট্রের বেল টেলিফোন ল্যাবরেটরিতে তৈরি হয়েছিল প্রথম ট্রানজিস্টর। এই ট্রানজিস্টর আবিষ্কারের জন্য ১৯৫৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান বেল ল্যাবরেটরির তিন বিজ্ঞানী—জন বার্ডিন, ওয়াল্টার ব্র্যাটেইন ও উইলিয়াম শকলি।
ট্রানজিস্টরের উদ্ভাবনকে বিশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কারণ, তথ্যপ্রযুক্তির যে বিপুল উন্নতি আজ ঘটেছে পৃথিবীতে, তার মূলে রয়েছে ট্রানজিস্টর। ট্রানজিস্টরকে ইলেকট্রনিক যুগের ‘নার্ভ সেল’ বা স্নায়ুকোষের সঙ্গে তুলনা করা হয়। উইলিয়াম শকলি বেল ল্যাবরেটরির রিসার্চ গ্রুপের প্রধান হওয়া সত্ত্বেও বার্ডিন ও ব্র্যাটেইনের কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। ফলে বেল ল্যাবরেটরির প্রথম ট্রানজিস্টরের পেটেন্ট নেওয়া হয়েছিল জন বার্ডিন ও ওয়াল্টার ব্র্যাটেইনের নামে। কিন্তু তাতে ভীষণ রেগে যান উইলিয়াম শকলি।
তিনি নিজেই আরও উন্নত একটি ট্রানজিস্টরের পেটেন্ট নিয়ে প্রমাণ করেন, বার্ডিন ও ব্র্যাটেইন যদি ট্রানজিস্টরের বাবা হন, তাহলে শকলি হলেন ট্রানজিস্টরের বড়বাবা। এই উইলিয়াম শকলির হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ট্রানজিস্টর তৈরির প্রথম কারখানা, পরে যা পথ দেখায় সিলিকন ভ্যালির। বিশ শতকের প্রযুক্তির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবকদের একজন হিসেবে উইলিয়াম শকলি একদিকে ছিলেন ভীষণ নন্দিত, আবার অন্যদিকে তাঁর ব্যক্তিগত উন্নাসিক স্বভাব ও সাম্প্রদায়িক বর্ণবাদী মনোভাবের কারণে হয়ে পড়েছিলেন ভীষণ নিন্দিত। এ কাহিনি উইলিয়াম শকলির কাহিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।