জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের প্রকোপ বাড়তে থাকায় ১৯ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, গত ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা, যা পূর্ববর্তী প্রান্তিকের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
Table of Contents
খেলাপি ঋণের কারণে মূলধন ঘাটতির বিস্তার
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ১৯ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দেখা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি ৪টি, বেসরকারি ১৩টি, ২টি বিশেষায়িত ও ১টি বিদেশি ব্যাংক। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খেলাপি ঋণের কারণে প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় এই ঘাটতি বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো আয় দেখাতে না পারায় এবং প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে না পারায় মূলধনের ঘাটতি দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করছে।
ব্যাংকের তালিকা ও ঘাটতির পরিমাণ
মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের রয়েছে জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক। বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক, ন্যাশনাল, পদ্মা, আইএফআইসি, আল-আরাফাহ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, স্ট্যান্ডার্ড ও ইউনিয়ন ব্যাংক। বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে হাবিব ব্যাংক।
এক নজরে মূলধন ঘাটতির পরিসংখ্যান
জনতা ব্যাংক: ৫২,৮৯০ কোটি টাকা
অগ্রণী ব্যাংক: ৪,৬৮৬ কোটি টাকা
রূপালী ব্যাংক: ৫,১৯২ কোটি টাকা
বেসিক ব্যাংক: ৩,১৫৬ কোটি টাকা
ইউনিয়ন ব্যাংক: ১৫,৬৯০ কোটি টাকা
এবি ব্যাংক: ৫১৭ কোটি টাকা
কমার্স ব্যাংক: ১,৬৫৬ কোটি টাকা
আইএফআইসি ব্যাংক: ৯,০২৯ কোটি টাকা
ন্যাশনাল ব্যাংক: ৭,৭৯৮ কোটি টাকা
পদ্মা ব্যাংক: ৪,৯৮৫ কোটি টাকা
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক: ২৫৪ কোটি টাকা
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ১৩,৯৯১ কোটি টাকা
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: ২,৯০৪ কোটি টাকা
ইসলামী ব্যাংক: ১২,৮৮৫ কোটি টাকা
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক: ১,৯০৯ কোটি টাকা
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক: ১১,৭০৮ কোটি টাকা
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক: ১,৮৬২ কোটি টাকা
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক: ১৮,১৮৮ কোটি টাকা
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক: ২,৪৭০ কোটি টাকা
হাবিব ব্যাংক: ১২,০০০ কোটি টাকা
ব্যাংকিং খাতের সার্বিক পরিস্থিতি
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ৫৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। একই সঙ্গে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাত বা সিআরএআর কমে দাঁড়িয়েছে ৩.০৮ শতাংশে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে ৩.৫ শতাংশ লিভারেজ অনুপাত বজায় রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনের আলোকে স্পষ্ট হয়েছে যে, ১৯ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলাপি ঋণ হ্রাস না পেলে এ ঘাটতি আরও বাড়বে এবং ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা আরও দুর্বল হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।