আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) বানানোর প্রক্রিয়াটা ছিল দারুণ। এই নভোস্টেশনের বিভিন্ন অংশ মহাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রকেটে করে। তারপর মহাকাশেই জোড়া দেওয়া হয়েছে সবগুলো অংশ। ১৯৯৮ সালে শুরু হয়েছিল। ধীরে ধীরে এই নির্মাণকাজ এগোতে থাকে। মূল নির্মাণ শেষ হয় ২০১১ সালে এসে। এরপর পেরিয়ে গেছে একযুগেরও বেশি। এতদিন সেখানে দিব্যি প্রয়োজনীয় গবেষণা করেছেন নভোচারীরা। কাজেই প্রশ্ন আসে, একইভাবে পৃথিবীর কক্ষপথে বিভিন্ন অংশ নিয়ে গিয়ে, সেখানে জোড়া দিয়ে নভোযান বানানো হয় না কেন?
কেউ কেউ একটু ক্ষেপেই হয়তো গেছেন। ভাবছেন, পৃথিবীতেই তো দিব্যি মহাকাশযান বানানো যাচ্ছে। উৎক্ষেপণও করা যাচ্ছে দিব্যি। তাহলে এত ঝামেলার চিন্তা করছ কেন, বাপু? চিন্তা করার কারণ আছে বৈকি!
মঙ্গলের মতো গ্রহে আমরা যে এখনো মানুষ পাঠাতে পারিনি, তার সঙ্গেই যুক্ত প্রশ্নটা। তা, মানুষ পাঠাতে পারিনি কেন এখনো? একটা বড় সমস্যা তো দূরত্ব। মঙ্গল ও পৃথিবী সবচেয়ে কাছে যখন থাকে, তখনো দুটি গ্রহের দূরত্ব থাকে প্রায় ৬২ মিলিয়ন কিলোমিটার। ১ মিলিয়নে ১০ লাখ কিলোমিটার—এটুকু জেনে হিসাব করলে দেখবেন, দূরত্বটা দাঁড়ায় প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ কিলোমিটার। বিশাল এ দূরত্ব পাড়ি দিতে আজকের রকেট প্রযুক্তির লাগবে প্রায় সাত মাস অন্তত। আরও উন্নত প্রযুক্তি এ সময় অবশ্য কমাতে পারে কিছুটা। তাতে জ্বালানির পরিমাণ খানিকটা কমবে বটে, তবে মানুষ সঙ্গে নিয়ে যাত্রা করলে প্রয়োজন খাবার, কাপড়চোপড়সহ আরও হাজারটা জিনিসের ব্যবস্থাও তো লাগবে।
মঙ্গলে গেলেই হবে না, ফিরতেও হবে। সে জন্য অন্তত প্রায় দেড় বছর অপেক্ষা করা চাই। নাহয় পাড়ি দিতে হবে আরও দীর্ঘ পথ। দেড় বছর অপেক্ষা করলে কী হবে? মঙ্গল ও পৃথিবী আবার সর্বনিম্ন দূরত্বে ফিরবে। সে জন্যও প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র রাখতে হবে নভোযানেই। অথবা মার্শিয়ান বই বা মুভির মতো যাত্রী ফিরিয়ে আনতে পাঠাতে হবে ভিন্ন যান—তাতে একসঙ্গে এত জিনিস রাখার ঝামেলা খানিকটা কমতে পারে।
যাহোক, এরকম বিশাল নভোযান পৃথিবীতে বানিয়ে তা উৎক্ষেপণ করা মুশকিল। আজকের দিনে অবশ্য স্পেসএক্সের কল্যাণে এ সম্ভাবনা খানিকটা বেড়েছে। তবে এখনো পাড়ি দিতে হবে বন্ধুর পথ। শুরুর প্রশ্নটা সে জন্যই। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বানিয়ে নিয়ে গিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথে বা চাঁদে জোড়া দেওয়া যায় না? যায়, কিন্তু তাতে খরচ বেড়ে যাবে অনেক। ঝুঁকিও বাড়বে অনেকখানি। এটাই আসলে মূল কারণ এখন পর্যন্ত অমনটা না করার। তবে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণও আছে।
যেমন নভোচারীরা এতদিন মহাকাশে থাকলে মাইক্রোগ্র্যাভিটি বা প্রায় ওজনশূন্যতার প্রভাবে প্রতি মাসে তাঁদের হাড়ের ভর কমতে পারে এক শতাংশ করে। মঙ্গলে আবার উচ্চ মাত্রার ক্ষতিকর বিকিরণ আছে। মনস্তাত্ত্বিক চাপের দিকটিও আছে। এতদিন পৃথিবীর বাইরে, ভিন গ্রহে থাকা; ফেরার নিশ্চয়তা নেই—চলচ্চিত্রে যা-ই দেখানো হোক, বাস্তবে বিষয়গুলো আরও কঠিন।
এত বাধা পেরিয়েও বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, ২০৪০ সালের মধ্যেই মানুষ পৌঁছে যাবে মঙ্গলে। তাঁদের এই প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গে আমরাও চাইলে আশায় বুক বাঁধতে পারি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।