সম্প্রতি চুম্বকীয় উত্তর মেরুর স্থান পরিবর্তন হয়েছে। কানাডা থেকে আরও দূরে, সাইবেরিয়ার দিকে এগিয়ে গেছে এটি। এই পরিবর্তনের ফলে প্রকাশিত হয়েছে নতুন ওয়ার্ল্ড ম্যাগনেটিক মডেল (WMM)। আধুনিক ন্যাভিগেশন সিস্টেমের নির্ভুলতার জন্য এ মডেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাহাজ, বিমান চলাচল ও জিপিএস প্রযুক্তি ন্যাভিগেশন সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত।
প্রতি পাঁচ বছর পরপর যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA) এবং ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভে (BGS) একসঙ্গে এই মডেল আপডেট করে। প্রথমবারের মতো উচ্চ রেজুল্যুশনে তৈরি করা হয়েছে চৌম্বকমেরুর নতুন সংস্করণের এ মানচিত্র, যা আগের মানচিত্রগুলোর চেয়ে ১০ গুণ বেশি নির্ভুল তথ্য সরবরাহ করছে।
চৌম্বক মেরু আর ভৌগলিক মেরু এক জিনিস নয়। পৃথিবী নিজ কক্ষপথের ওপর লাটিমের মতো ঘুরছে। এই ঘূর্ণন যে অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘোরে, সেই অক্ষের দুই মাথাকে পৃথিবীর দুটি ভৌগলিক মেরু ধরা হয়। অন্যদিকে, চৌম্বক মেরু নির্ধারিত হয় পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র দিয়ে। পৃথিবীর ভেতরে গলিত লোহা ও নিকেলের প্রবাহের কারণে এটি নিজেই একটি বড় চুম্বক হিসেবে কাজ করে।
সব চুম্বকের মতো তাই পৃথিবীর চারপাশেও চৌম্বক বলরেখা তৈরি হয় এবং যেকোনো দুই প্রান্তে বলরেখার ঘনত্ব বেশি থাকে। যে দুই প্রান্তে বলরেখার ঘনত্ব অনেক বেশি হয়, সেই দুই প্রান্তকে চৌম্বক মেরু বলা হয়। পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে প্রতিনিয়ত গলিত লোহা এবং নিকেল স্রোতের গতি-প্রকৃতি বদলায়। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যায় চৌম্বক মেরুর অবস্থান।
সম্প্রতি চৌম্বক মেরুর অবস্থান পরিবর্তন বেশ নাটকীয় হয়ে উঠেছে। ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভের গ্লোবাল জিওম্যাগনেটিক ফিল্ড মডেলের উইলিয়াম ব্রাউন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা চুম্বকীয় উত্তর মেরুর এমন অদ্ভুত আচরণ আগে দেখিনি। ১৫০০ সালের পর থেকে এটি কানাডার চারপাশে ঘুরছিল বেশ ধীর গতিতে।
গত ২০ বছরে হঠাৎ এটি উল্টোদিকে, অর্থাৎ রাশিয়ার সাইবেরিয়ার দিকে দ্রুত এগোতে শুরু করে। গত পাঁচ বছরে এই গতি অবশ্য হঠাৎ বছরে ৫০ কিলোমিটার থেকে কমে ৩৫ কিলোমিটারে নেমে আসে। অর্থাৎ বর্তমানে প্রতিবছর চুম্বকীয় মেরু ৩৫ কিলোমিটার করে সাইবেরিয়ার দিকে এগোচ্ছে। এমনটা আমরা এর আগে কখনো দেখিনি।’
ন্যাভিগেশন সিস্টেমের নির্ভুলতার জন্য চুম্বকীয় উত্তর মেরুর সঠিক অবস্থান জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন পুরোনো মডেল ব্যবহার করে কেউ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যের দিকে সরল পথে যাওয়া শুরু করলে তিনি ১৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে সরে যাবেন মূল গন্তব্য থেকে। বলা প্রয়োজন, সরলপথে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মাইল বা ১২ হাজার ৮৭৫ কিলোমিটার।
নতুন ম্যাগনেটিক মডেল এই ত্রুটি দূর করবে। পরের পাঁচ বছরের জন্য কার্যকর থাকবে নতুন মডেলটি। লজিস্টিক কোম্পানি ও সরকারি সংস্থাগুলোকে এই পরিবর্তন আপডেট করতে হবে নিজেদের। তবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের ফোন বা জিপিএস সিস্টেমে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হয়ে যাবে।
চুম্বকীয় উত্তর মেরু প্রথম আবিষ্কার করেন স্যার জেমস ক্লার্ক রস, ১৮৩১ সালে। তখন থেকে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত এটি পর্যবেক্ষণে রাখছেন। ভূ-পৃষ্ঠ ও মহাকাশ—দুই জায়গা থেকেই পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।