বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে দারুণ এক সুখবর দিয়েছেন ব্রিটিশ গবেষক অধ্যাপক অলিভার লিন্টন। লন্ডনের বিখ্যাত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতির অধ্যাপক এবং ট্রিনিটি কলেজের ফেলো ওই গবেষক বলেছেন, আগামী ৪০ দিনের মধ্যেই কমতে শুরু করব করোনা যার লক্ষণ ইতিমধ্যে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।
তার মতে, করোনা নামের এই মহাবিপদ অনেকটাই কেটে যাবে এবং নতুন সংক্রমণের সংখ্যা অনেক কমে যাবে। তখন এতে মfরাও যাবে অনেক কম সংখ্যক মানুষ। তিনি এটাকে সবার জন্য সুখবর হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
ক্যামব্রিজের অধ্যাপক লিন্টনের নিবন্ধটি ক্যামব্রিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
অধ্যাপক লিন্টন ওই নিবন্ধে বলেছেন, করোনার চূড়ান্ত তাণ্ডবের দিনগুলোতে বিশ্বে প্রতিদিন ৮০ হাজারের বেশি লোক আক্রান্ত হবেন এবং মারা যাবেন ১০ হাজারের বেশি লোক। এরপর বিশ্বজুড়ে কমতে থাকবে করোনার প্রকোপ।
তবে ১৮ এপ্রিলের আগেই করোনার সেই দুঃসময় কেটে গেছে। অর্থাৎ এই ভাইরাসটি ইতিমধ্যে তার সংক্রামণের চূড়ান্ত পযায়ে পৌঁছেছে। ফলে এখন বিশ্বে প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে থাকবে।
অধ্যাপক লিন্টন মনে করেন, আগামী ২০ দিনের মধ্যে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজারের নিচে নেমে আসবে। ৩০ দিনের মাথায় রোজ করোনায় আক্রান্ত হবে ২০ হাজারেরও কম মানুষ। আর ৪০ দিনের মাথায় এই সংখ্যা হবে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ সাত হাজার। এই ধারাবাহিকতায় আগামী দুই মাস পর করোনা সংক্রমণের সংখ্যা শূন্যে নেমে আসবে।
এর অর্থ হচ্ছে আগামী দুই মাস পর বিশ্বে আর করোনার তাণ্ডব থাকবে না। সংক্রমণের মতো মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক নিচে নেমে আসবে।
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক লিন্টন কোনও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নন। তবে তিনি করোনা নিয়ে অনেক দিন ধরেই গবেষণা করছেন।
করোনা নিয়ে এই সুখবর দেওয়ার সময় তিনি বলেন, চীনসহ বিভিন্ন দেশের করোনা রোগের তথ্য নিয়ে তিনি এটি তৈরি করেছেন। তবে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রশ্ন উঠছে। ফলে এই পূর্বাভাস একেবারে নির্ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও কম। তবে ইতোমধ্যেই তার পূর্বাভাস মিলতে শুরু করেছে।
কোয়াড্রেটিক টাইম ট্রেন্ড মডেল অনুসরণ করে এই পূর্বাভাস দিয়েছেন অধ্যাপক লিন্টন।
অধ্যাপক লিন্টনের হিসাবে, যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হবে এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ এবং মারা যাবে ১৯ হাজার ৮০০ জন।
যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হতে পারে ১০ লাখ মানুষ। দেশটিতে মারা যাবে এক লাখ ১২ হাজার মতো মানুষের।
তিনি আরও জানান, ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই করোনা সংক্রমণের চূড়ান্ত অতিক্রম করেছে।
অধ্যাপক লিন্টন, চীনে করোনা সংক্রান্ত উপাত্ত ও মহামারির সাধারণ তথ্য ব্যবহার করে এই পূর্বাভাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ৩১ ডিসেম্বর। এরপর ২৩ জানুয়ারি থেকে ওই শহরটি লকডাউন করা হয়। অর্থাৎ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ২৪তম দিনে সেখানে লকডাউন শুরু হয়।
চীনে করোনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছছিল ৪২তম দিনে এবং দেশটিতে ৫০তম দিনে করোনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়।
চীনের এই মডেল ব্যবহার করেই তিনি করোনা সংক্রামণ হ্রাসের এই সুখবর দিচ্ছেন।
তবে একইসঙ্গে তিনি সামাজিক দূরত্ব ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মতো বিষয়গুলোর প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তার মতে, কোনও দেশ তড়িঘড়ি করে লকডাউন তুলে নিলে সেখানে দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ শুরু হয়ে তা চূড়ায় পৌঁছাতে পারে। ফলে তাড়াহুড়ো করে লকডাউন তোলার বিষযে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন।
অধ্যাপক লিন্টন তার নিবন্ধে জানান, করোনার সংক্রমণ কোনও দেশের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোটা বড় বিষয় নয়, যদি তাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর পর সংক্রমণ কমতে থাকলে একপর্যায়ে আক্রান্তের সংখ্যাও হ্রাস পেতে থাকবে। এসময় লকডাউন করে সামাজিক দূরত্ব বড়ায় রাখার মতো কড়াকড়ি শিথিল করা দেশগুলোর পক্ষে অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
এখানে বলে রাখা ভালো, অধ্যাপক লিন্টনের পূর্বাভাস ইতোমধ্যেই কিন্তু ফলতে শুরু করেছে। গত তিন দিন ধরেই বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকার শীর্ষে থাকা দেশগুলোতে (১০টি দেশের মধ্যে আটটিতেই) সংক্রমণ কমেছে। ফলে ইতালি, জার্মান ও ইরানের মতো দেশে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।