জুমবাংলা ডেস্ক : স্বাধীনতার পরপরই বিধ্বস্ত অবকাঠামোসহ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে এবং এভাবে ২০৪১ সালের মধ্যেদ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে।
এই দীর্ঘ যাত্রায় জাতীয় বাজেটের আকার এবং পরবর্তীকালে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সরকারের উচ্চ রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষমতার কারণে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭২ সালে স্বাধীনতা-উত্তোর বঙ্গবন্ধু সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেশের প্রথম বাজেট পেশ করেন যেখানে মোট ব্যয় ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা এবং এডিপি’র আকার ছিল ৫০১ কোটি টাকা।
সময়ের সাথে সাথে এবং নীতিগুলোর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্তমান অর্থবছরে বাজেটের আকার ৭,৬১,৭৮৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে যার এডিপি’র আকার মোট ২,৬৩,০০০ কোটি টাকা।
স্বাধীনতার পর থেকে এই দীর্ঘ উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের অবদান ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ যেখানে বিশ্বব্যাংক একটি প্রধান উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে অবিচল রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের পরপরই বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র রাষ্ট্র। কিন্তু আজ এটি দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি। মাথাপিছু জিডিপি ২০ গুণ বেড়ে ১৯৭১ সালের ১২৮ ডলার থেকে ২০২২ সালে ২,৭৪২.৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশে অতি দরিদ্র হার ২০১৬ সালে ৯.০ থেকে ২০২২ সালে ৫.০ শতাংশে নেমে এসেছে (আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা দৈনিক ২.১৫ ডলার আয়ের ওপর ভিত্তি করে)। যা লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর সাথে তুলনীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার গড় থেকে ভালো।
একই সময় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে তার উন্নয়ন রূপকল্প অর্জনে সহায়তা করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার অনুদান বা রেয়াতমূলক অর্থায়নে ঋণ প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; বর্তমানে চলমান ১৬.৪৬ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতিতে মোট ৫৭টি সক্রিয় প্রকল্পের সাথে যুক্ত রয়েছে, বাংলাদেশে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় আইডিএ প্রেগ্রাম রয়েছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৈদেশিক তহবিল প্রদানকারীও হয়েছে, যা সমস্ত সেক্টরে বিস্তৃত হস্তক্ষেপে সমস্ত বৈদেশিক সহায়তার এক চতুর্থাংশেরও বেশি প্রদান করে।
এই অংশীদারিত্বের বিষয়ে মন্তব্য করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বাসসকে বলেন, বিশ্বব্যাংক স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের একটি প্রধান বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগী।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটন ভিত্তিক ঋণদানকারী সংস্থাটি বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখে আসছে। ‘আশা করি তারা আগামী দিনে আমাদের প্রতি সমর্থন বাড়াবে’।
মান্নান আরো বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে চাহিদা অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক ছাড়াও এডিবি, জাইকা, কোইকা-এর মতো অনেক ঋণদানকারী সংস্থা থেকে ঋণ ও অনুদান নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, বিশ্বব্যাংক স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের প্রথম উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে ছিল। বিশ্বব্যাংক দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের আকাক্সক্ষাকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশকে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার অনুদান, সুদমুক্ত এবং রেয়াতি ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম বৈদেশিক তহবিল সরবরাহকারী। দেশটির প্রাপ্ত মোট বৈদেশিক সাহায্যের এক চতুর্থাংশেরও বেশি প্রদান করে বিশ্বব্যাংক। বর্তমানে ৫৭টি প্রকল্পে ১৬.৪৬ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতিসহ বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের বৃহত্তম আইডিএ প্রোগ্রাম রয়েছে। প্রযুক্তিগত একটি শক্তিশালী প্রোগ্রামের মাধ্যমে, বিশ্লেষণাত্মক এবং আর্থিক সহায়তায় আমরা বাংলাদেশকে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের অবস্থান অর্জনে সহায়তা করছি।’
বিশ্বব্যাংকের মতে- এটি নারীর ক্ষমতায়নের উপর দৃঢ় মনোযোগ দিয়ে মানব ও সামাজিক উন্নয়ন এবং দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির মতো খাতে বিদ্যুতের সুবিধাসহ অবকাঠামো, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা এবং দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের সাথে একটি রূপান্তরমূলক এবং প্রভাবশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে।
নতুন ও উদীয়মান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক দ্রুত সহায়তা জোগাড় করেছে। ব্যাংক বাংলাদেশে সকলের জন্য ভ্যাকসিন সুবিধাসহ কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সহায়তা করেছে।
২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা আগমনের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করার ক্ষেত্রেও বিশ্বব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি ১৯৭২ সাল থেকে পাঁচ দশক ধরে এই অব্যাহত যাত্রায় বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশের মধ্যে অংশীদারিত্বের অর্জন এবং বিশ্বব্যাংকের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা সাফল্যের একটি স্মৃতিস্তম্ভ।
সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এর লক্ষ্য অর্জনে ২০২৩ থেকে ২০২৭ অর্থবছরের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক (সিপিএফ) ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জনের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করে উচ্চ এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির প্রধান বাধাগুলো মোকাবেলায় দেশকে সাহায্য করবে।
এটি একটি বৈচিত্র্যময় এবং প্রতিযোগিতামূলক বেসরকারি খাতকে আরো বেশি এবং ভালো চাকরির ক্ষেত্র তৈরিতে সহায়তা করবে; সবার জন্য সুযোগ প্রসারিত করতে আর্থ-সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং জলবায়ু, পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবেলায় সহায়তা করবে।এই তিনটি ফলাফলই বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির আকাক্সক্ষার মূল অগ্রাধিকার।
অবকাঠামো, মানব মূলধন উন্নয়ন, সামাজিক সুরক্ষা, গ্রামীণ ও নগর উন্নয়ন, দেশের ডিজিটাল এজেন্ডার অগ্রগতির জন্য দেশের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে বিশ্বব্যাংক, ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) এবং বহুপাক্ষিক বিনিয়োগ গ্যারান্টি এজেন্সি (এমআইজিএ) ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশকে আরও ৩ বিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে।
বাংলাদেশে আইএফসি-এর কাজ অবকাঠামো এবং আর্থিক পরিষেবার উন্নতি এবং ছোট ব্যবসার সম্প্রসারণে সহায়তা করার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের মধ্যে, আইএফসি দেশের পোশাক খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধির উপযোগী বিনিয়োগ সহজতর, নির্মাণ ও অগ্নি নিরাপত্তা, শ্রম ও পরিবেশগত মান উন্নত করতে কাজ করছে।
বাংলাদেশে এমআইজিএ এর বর্তমান কর্মসূচিগুলো মোট ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা জলবায়ু, জ্বালানি এবং টেকসই অবকাঠামোর মতো ক্ষেত্রে দেশটিকে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ অর্থবছরে, ১৪.৩ মিলিয়ন মানুষকে বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন বা উন্নত বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের আগস্টে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সদস্য হয়। একই বছরের নভেম্বরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জন্য প্রথম প্রকল্প অনুমোদন করে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে পরিবহন ও যোগাযোগ পুনর্গঠন, কৃষি ও শিল্প খাতের পাশাপাশি নির্মান ও বিদ্যুৎ খাতে সহায়তা করার জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলারের জরুরি পুনরুদ্ধার ক্রেডিট প্রদান করে।
একইসাথে বিশ্বব্যাংক স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে অনুমোদন পাওয়া চারটি প্রকল্প পুনরায় সক্রিয় করে। সেই থেকে, দরিদ্রতম দেশগুলোর জন্য বিশ্বব্যাংকের তহবিল ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) অনুদান, সুদ-মুক্ত ঋণ এবং রেয়াতি ঋণের আকারে ৪০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সূত্র : বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।