জুমবাংলা ডেস্ক: বাড়তে বাড়তে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উৎসব এলে তা ঠেকে ৯০০ টাকায়। গরুর মাংসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খাসি ও মুরগির দামও। এমন অগ্নিমূল্যের বাজারেও ৫৮০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করে সাড়া ফেলেছেন বগুড়ার গাবতলীর মাংস ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম ওরফে কালু কসাই। রমজানে রাজধানীর ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে ৬৪০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করেও লাভের মুখ দেখেছেন খামারিরা। এমন পরিস্থিতিতে গরুর মাংসের দাম আসলে কত হওয়া উচিত– তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন খামারিরা। দৈনিক সমকালের প্রতিবেদক জাহিদুর রহমান-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
তাঁদের দাবি, সিন্ডিকেটের কারণে বাড়ছে মাংসের দাম। হাতবদল হতে হতে ভোক্তার কাছে মাংস আসে বাড়তি দামে। সেই হাত ভেঙে দিয়ে তাঁরা সরাসরি সুলভ মূল্যে ভোক্তার কাছে মাংস তুলে দিতে চান। খামারিরা বলছেন, এতে সরকার নীতি-সহায়তা দিলে ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন গরুর মাংস। খাসির মাংসসহ ডেইরি পণ্যও বিক্রি করা যাবে কম মূল্যে।
কম দামে গরুর মাংস বিক্রি ও লোকসান থেকে খামারিদের রক্ষায় এরই মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন। ডেইরি খাতের সবচেয়ে বড় এ সংগঠন মাংসসহ দুগ্ধজাত পণ্য পৌঁছে দিতে ঢাকায় ‘ফারমার্স মার্কেট’ চালুর বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) প্রস্তাবনাও দিয়েছে। এই কাজে ঢাকার অঞ্চলভেদে খামারিদের জন্য আলাদা মার্কেট বা স্টল বরাদ্দ ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা চান তাঁরা।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, এর ফলে তৃণমূলের খামারিরা সরাসরি ফারমার্স মার্কেটে সাশ্রয়ী মূল্যে গরু ও খাসির মাংস, দুধ, পনির, ঘি, দইসহ বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রির সুবিধা পাবেন। এতে ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ পণ্য পাওয়ার পাশাপাশি খামারিরাও লাভবান হবেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থেকেও মুক্তি পাবেন।
ইউরোপসহ উন্নত বিশ্বের আদলে এই ফারমার্স মার্কেটের প্রস্তাবনা নিয়ে এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে গরুর মাংসের দাম কমছে না। এই কারসাজির সঙ্গে মাংস ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও বিক্রেতারা জড়িত। এ ছাড়া পশুখাদ্যের অগ্নিমূল্য, পথে পথে চাঁদাবাজি, হাটে নির্ধারিত হাসিলের চেয়ে বেশি টাকা আদায় ও সরকারের তদারকি না থাকার কারণে মাংসের দাম বাড়ছে। অথচ কম দামে পশু বিক্রি করার পরও অভিযোগের তীর থাকে খামারিদের দিকে। মূল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ জন্য দাম বাড়ার অপবাদ ঘোচাতে চান খামারিরা।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ইউরোপসহ উন্নত বিশ্বে ফারমার্স মার্কেট রয়েছে। যেখানে কৃষক বা খামারিরা সরাসরি ফারমার্স মার্কেটে পণ্য সরবরাহ করেন। এখন গ্রামের খামার কিংবা বাজার থেকে ব্যাপারিরা পশু কিনে ঢাকায় পাঠান। দুই-তিন হাত বদল হওয়ার পর কসাইরা পশু জবাই করে বিক্রি করেন। এতে মাংসের দাম অনেক বেড়ে যায়। সরকারের সহায়তা পেলে কেজি ৫০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, আমরাও খামারিদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তাঁদের উদ্যোগের সঙ্গে থাকবে ডিএনসিসি। এতে সুলভ মূল্যে সহজেই ভোক্তার হাতে নিরাপদ খাবার পৌঁছে দেওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকায় ২০টি ফারমার্স মার্কেট চালু করতে সিটি করপোরেশনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
গবেষক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, বিশ্বের উন্নত সব দেশেই খামারিরা সরাসরি বাজারে পণ্য বিক্রি করেন। ঢাকা শহরেও অনেক কৃষকের বাজার তৈরি করেছে সরকার। এতে নিরাপদ সবজি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও ক্রেতা। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ডেইরি খাতের খামারিদের জন্যও মার্কেট তৈরি করলে মাংসের বাজারে এর প্রভাব পড়বে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মাংস ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়। সে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। খামারিকে সরাসরি ভোক্তার হাতে পণ্য তুলে দেওয়া সুযোগ দিলে দুর্বল হয়ে পড়বে সিন্ডিকেট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।