জুমবাংলা ডেস্ক: ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশে বসবাসরত চীনের কয়েক নাগরিকের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) অভিযান চালিয়ে চার চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জিয়াও উন (৪২), লিউ জিয়ানউ (৪৩), ইয়ান লিউ জুন (৩৯) ও লি মিন (৩২)। তাঁদের দু’জন নারী, দু’জন পুরুষ। রাজধানীর বারিধারা ও উত্তরা থেকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে তাঁদের তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
তবে বিপুল পরিমাণ অর্থ জালিয়াতিতে চীনের নাগরিকদের জড়িত থাকার বিষয় সামনে আসার পর তদন্তসংশ্নিষ্টরা বিস্মিত। সাধারণত বাংলাদেশে বিভিন্ন অপরাধে নাইজেরিয়া, উগান্ডাসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশের নাগরিকদের জড়িত থাকার বিষয় সব সময় আলোচনায় আসে। কিন্তু উত্তরায় চীনা নাগরিকদের চক্রটির অপরাধ কার্যক্রমকে অভিনব বলছেন তদন্তসংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা।
উত্তরা-পশ্চিম থানায় একটি মামলা হলে বিষয়টি আইনশৃঙখলা বাহিনীর নজরে আসে।
মামলায় করা অভিযোগের বরাত দিয়ে জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক সমকালের আজকের সংখ্যায় প্রকাশিত সাহাদাত হোসেন পরশের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর সড়কে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা রয়েছে চীনের নাগরিক লি ওয়েন জিংয়ের। স্বামী শাহ জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে তিনি এই ব্যবসা পরিচালনা করেন। চীনা মালিকানা হওয়ায় রেস্টুরেন্টটি মূলত উত্তরা ও আশপাশে বসবাসরত দেশটির নাগরিকদের প্রধান আড্ডাস্থল।
বাংলাদেশে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে চাকরির সূত্রে ওয়েন জিংয়ের সঙ্গে তাঁর স্বদেশি জিলিনের পরিচয় ও ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। কিছুদিন আগে জিলিনকে চীন থেকে বিভিন্ন পণ্য কম দামে এনে তাঁকে সরবরাহের প্রস্তাব দেন ওয়েন। প্রস্তাবের জবাবে জিলিন জানান, ঢাকায় তাঁকে বাংলাদেশি মুদ্রা দিলে, সেটির বিপরীতে চীন থেকে দেশটির মুদ্রায় পণ্য কিনে আনা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে। কী কী পণ্য, কীভাবে বাংলাদেশে পাঠাতে হবে তা নিয়ে চেন ইয়াং নামে আরেক চায়নিজের সঙ্গে কথাবার্তা চূড়ান্ত করেন জিলিন। এরপর ওয়েনের কাছ থেকে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০ লাখ টাকা নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় তাঁরই রেস্টুরেন্টে চেন ইয়াংয়ের অপেক্ষায় ছিলেন জিলিন।
দীর্ঘক্ষণ পরও চেন ইয়াং আসেননি। এক পর্যায়ে তাঁর প্রতিনিধি পরিচয়ে নারীসহ চীনের কয়েক নাগরিক রেস্টুরেন্টে হাজির হন। তাঁরা জিলিনকে বলেন, ৫০ লাখ টাকা নেওয়ার জন্য চেন ইয়াং তাঁদের পাঠিয়েছেন এবং টাকা হস্তান্তরে খুব তাড়াহুড়ো করতে থাকেন তাঁরা। এ সময় এও জানানো হয়, চেন এরই মধ্যে নাকি জিলিনের হিসাব নম্বরে বাংলা মুদ্রার বিনিময়ে চায়নিজ মুদ্রা পাঠিয়েছেন। তাঁদের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে জিলিন টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ পর্যায়ে প্রথমে ভয়ভীতি ও পরে মারধর করে চায়নিজ নাগরিকের গ্রুপটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে জিলিন বাদী হয়ে মামলা করেন, যাতে হাতিয়ে নেওয়া অর্থের মধ্যে ১ হাজার টাকার নোট ৩ হাজারটি ও ৫০০ টাকার নোট ৪ হাজারটি থাকার কথা উল্লেখ করেছেন।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আব্বাস আলী নামে এক দোভাষীর মাধ্যমে জিলিনের বক্তব্য শোনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মামলা নেওয়া হয়। ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্নেষণ করা হচ্ছে। মামলায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, ফুটেজে ঘটনাস্থলে তাঁদের উপস্থিতি মিলেছে।
পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম জানান, ‘৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে চীনের চার নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। হেফাজতে এনে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চীনা নাগরিকদের গ্রুপটি অন্য কোনো সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িত কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে। তাঁরা টাকা পাচারে জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। গ্রেপ্তারকৃতরা ঢাকায় দুটি ম্যাসাজ পার্লার চালান। এর বাইরে তাঁদের অন্য কোনো ব্যবসা রয়েছে কিনা তাও তদন্ত হচ্ছে।’
পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘চীনা নাগরিকদের কাছ থেকে তথ্য বের করা কষ্টসাধ্য হচ্ছে। ভাষাগত সমস্যা ছাড়াও তাঁরা সহজে তথ্য দিতে চান না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।