জুমবাংলা ডেস্ক : ৫ আগস্টেও দেশ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন নব নিযুক্ত বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, বিগত সরকারের সময় ব্যাংক থেকে টাকা পাচার তো হয়েছেই, এরপর ৫ আগস্ট এই এক দিনেই ব্যাংকগুলো থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার তুলে নিয়ে পাচার করা হয়েছে। অন্য দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বিগত ১৫ বছরের ব্যাংকিং খাত থেকে লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে।
কিন্তু এরপরও আমরা চেষ্টা করছি কোনো ব্যাংক যাতে বন্ধ না হয়ে যায়। কোনো ব্যাংক বন্ধও হবে না।
গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন-২০২৪’ অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। দৈনিক বণিক বার্তা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন আরো বলেন, দুই হাজার প্রাণের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, সেটিকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ের রাজনীতিকরণ যেভাবে করেছি, তাতে মাঝে মাঝে ব্যবসায়ী পরিচয় দিতে লজ্জা হয়। আমি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনার খরচ কমানোর জন্য সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ছাত্র-জনতা আমাদের কিছু দায়িত্ব দিয়েছে এবং আমরা সেটা যথাসম্ভব পালন করার চেষ্টা করছি। আমাদের কারো ব্যক্তিগত এজেন্ডা নেই; আমাদের একমাত্র এজেন্ডা হচ্ছে দেশের স্বার্থ।
তিনি আরো বলেন, যা কিছু করা হচ্ছে, তা দেশের স্বার্থেই করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যেকোনো সরকার এসে সেই কাজগুলো চালিয়ে নিতে পারবে। আমরা কাজগুলো তিনটি ধাপে ভাগ করেছি স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কাজ। আমরা হয়তো মধ্যমেয়াদি কাজ শুরু করতে পারব, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কাজগুলো পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারগুলো করবে।
গরিব মানুষের সুযোগের বৈষম্যের কথা তুলে ধরে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, গ্রামের অনেক মানুষ জানেন না সরকারি সুযোগ-সুবিধা কোথায় পাওয়া যাবে এবং তারা সুযোগ বিষয়ে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে। গরিব মানুষকে শুধু ভিটামিন এ ক্যাপসুল বা কলেরার টিকা দিলেই যথেষ্ট নয়। তার মরণব্যাধী রোগের চিকিৎসা কোথায় হবে, সেটা স্পষ্ট নয়। তাকে তার জমিজমা বিক্রি করে ঢাকা আসতে হয়। আর শিক্ষা খাতে অনেক সময় তারা গুণগত শিক্ষা পান না।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে যোগ্য পরিচালকের অভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে গেছে। এগুলো সঠিক সময়ে ভালো লোক দিয়ে পরিচালিত হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই প্রফেশনাল জায়গায় নন-প্রফেশনাল বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে।’
সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত তিন মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক টাকাও ছাপায়নি। এ ছাড়া এই তিন মাসে রিজার্ভ থেকেও কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি। বাজারে এখন ডলারের অভাব নাই। কেউ টাকা নিয়ে এলে ডলার পাবে। তবে পিডিবি টাকা না থাকায়, তাদের ওভারডিউ পেমেন্ট করতে সমস্যায় পড়ছে। এটা সমাধান আমার কাজ না।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের ব্যাংক খাত। এখন যদি দ্রুত সংস্কার বা সমাধান চাওয়া হয়, আমার চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। কারণ এক ব্যাংকের ২৭ হাজার কোটি টাকার অ্যাসেট এক পরিবারের হাতে ছিল। তারা ২৩ হাজার কোটি নিয়েছে। আমার হাতে ম্যাজিক নেই। তবে আমি বলতে পারি কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না। কারণ তাদের তারল্যসহায়তা দেয়া হচ্ছে।
অর্থপাচার নিয়ে তিনি বলেন, দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে দেশ থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এটা ফিরে পাওয়া কঠিন। তবে আমাদের জাল ফেলা হয়েছে। এখন গোটানো বাকি। এরই মধ্যে আমরা দেশ ও দেশের বাইরেও যোগাযোগ করেছি। আমাদের সহযোগিতার জন্য চলতি সপ্তাহে আমেরিকার প্রতিনিধি আসছেন, যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি আসবেন, বিশ্বব্যাংক আসবে ও সিঙ্গাপুরের সাথেও কথা হবে। আমরা চাই না কোনো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বা শিল্প বন্ধ হয়ে যাক। কারণ সেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। আবার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হিসাবও জব্দ করা হয়নি, হবেও না। ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। ঢাকায় টোটাল ব্যাংকিংয়ের ৫৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৭ শতাংশ, বাকিটা অন্য জায়গা। আমরা এটাকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমাদের এজেন্ট ব্যাংক বড় কাজ করছে। তাদের মাধ্যমে এমএফএস সেবা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
গভর্নর বলেন, কয়েকটি ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না। কিন্তু তাদের নগদ সহায়তা দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে গত তিন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে কোনো নগদ সহায়তা দেয়া হয়নি। কারণ ম্যাক্রো ইকোনমি স্ট্যাবল রাখতে হবে। এটা স্ট্যাবল না হলে কোনো বিনিয়োগ হবে না। এজন্য ব্যবসায়ীদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য যারা ব্যাংকের টাকা মেরেছে, তারা ব্যাংকের সাথে থেকে যেন টাকা ফেরত দেয়। বাইরে যে টাকা চলে গেছে সেসব কিভাবে আইনগত প্রক্রিয়ায় ফেরত আনা যায়, সেই চেষ্টা চলছে।
বিএনপি সরকারের দায়িত্ব পেলে জিডিপির ১০ শতাংশ স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সম্মেলনে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমরা দু’টি বিষয়ে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিয়েছি স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ এবং শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ করব। এটি আমাদের সিদ্ধান্ত।
আমির খসরু ব্যাখ্যা করেন, আমরা যদি নাগরিকদের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারি, তবে তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং তারা জাতির জন্য আরো ভালোভাবে অবদান রাখতে পারবে। এর ফলে সাশ্রয় হওয়া অর্থ পরিবারের অন্যান্য কল্যাণমূলক খাতে ব্যয় করা সম্ভব হবে। একই সুবিধা শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।’
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে, ফলে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগের অভাব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো: আবদুর রহমান খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং।
জনগণের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে নবনিযুক্ত বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, সামগ্রিকভাবে দেশের জনগণের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ও বুম কেড়ে নিলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
তিনি গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা বলেন, আমি আপনাদের কাছে কোনো ম্যাজিক প্রত্যাশা করছি না। আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করব। আপনারা আমাকে সহযোগী হিসেবে পাবেন। আপনাদের কাজকে আরও কার্যকর করার জন্য ইনসাফের সাথে আমার সক্ষমতা অনুযায়ী চেষ্টা করব। সূত্র : নয়া দিগন্ত
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।