বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ লিসানুল আলম লিসান পদত্যাগ করেছেন। শুক্রবার (১১ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টা ১৬ মিনিটে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
লিসান ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেও তার দীর্ঘ পোস্টে স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক হতাশা, ভাঙচুর এবং নেতাদের স্বার্থপরতাকে দায়ী করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আমি ব্যক্তিগত কারণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।”
ছাত্রদলের দুঃসময়ে পাশে ছিলেন দাবি করে লিসান বলেন, “জন্মলগ্ন থেকে পারিবারিক রাজনীতির সূত্র ধরে দীর্ঘ ১০ বছরের ঊর্ধ্বে এই দলের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলাম।বিএনপির একদম দুঃসময়েও দলের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত ছিলাম।২০১৮ সালের নির্বাচনে বাবা জেলে থাকাকালীন(মামলা সংখ্যা ২৮), দীর্ঘ দুই মাসের ঊর্ধ্বে বাড়ি ছাড়া হয়েছি।ভোর রাতে লুকোচুরি করে আম্মার সাথে একবার দেখা করে আসতাম।২৮ অক্টোবর সমাবেশ পরবর্তীও হরতাল অবরোধসহ বহু কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম।এই দলের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি ও বহু নির্মমতার ভাগীদার আমি হয়েছি।”
পোস্টে ২৮ অক্টোবরের আন্দোলন এবং সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকার কথা উল্লেখ করে লিসান বলেন, তার রাজনীতির মূল লক্ষ্য ছিল ‘নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ এবং একটা সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ।’
কিন্তু ৫ আগস্টের ঘটনার পর সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে বলে জানান তিনি। তার ভাষায়, “৫ আগস্ট পরবর্তীতে,অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম,দেশ নতুন করে বিনির্মাণ হবে। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, ৫ ই আগস্ট পরবর্তীতে দেশটাকে সুন্দর ভাবে বিনির্মাণের পরিবর্তে, সবাই যে যার মতো করে নিজের স্বার্থ এবং ভোগের রাজনীতি করে গেছে। এই দ্বায়ে জামাত, বিএনপি, এনসিপি সবাই দণ্ডিত। সবাই নয়া বন্দবস্তের কথা বললেও কেউ কথা রাখেনি।জুলাইকে কেউ স্মরণ করেনি। জুলাইকে কেউ মনে রাখেনি। শহীদদের রক্তের সাথে সবাই নির্বিচারে গাদ্দারি করেছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আমার নিজ উপজেলা হাতিয়ায় যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়েছে,এনসিপি এবং বিএনপি কর্তৃক আওয়ামী লীগের যে পরিমাণ পুনর্বাসন হয়েছে,তা আমি বিগত কোন সময় দেখি নাই।বহু নেতা কে দেখেছি,যাদের সুনির্দিষ্ট উপার্জনের সোর্স না থাকলেও এখন শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন, রাতারাতি ফুলে ফেঁপে উঠেছেন।
তিনি লিখেছেন, “বিএনপির পাশাপাশি এনসিপির হান্নান মাসুদও চাঁদাবাজি ও আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করে রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। অথচ উনার মতো তরুণ নেতা চাইলে পুরো রাজনীতির প্রেক্ষাপটই বদলে দিতে পারতেন।”
লিসান জামাতের দিকেও আঙুল তোলেন—“জামাতও এই অন্যায় গাদ্দারির বাহিরে নয়।রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ক্ষমতা বলে পদায়ন সহ, ৫ আগস্টের পরবর্তীতে যথেষ্ট নোংরা রাজনীতির চর্চা তারা করে গেছেন।(দয়া করে কোনো নব্য রাজনীতিবিদ আমাকে লজিক/ জ্ঞান দিতে আসবেন না।সব দলের ই রাজনীতির একদম ভিতরের পিঠ আমি খুব ভালো করেই দেখে আসছি)।”
তবে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে কিছু সৎ ও নিষ্ঠাবান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন তিনি। লিসান লেখেন, “তবে রাজনৈতিক সব দলেই প্রকৃত সৎ এবং নিষ্ঠাবান কিছু ভালো কিছু মানুষেরও দেখা পেয়েছি। আপনাদের জন্য সমবেদনা। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে এদেশে সুষ্ঠু ও গঠনতান্ত্রিক রাজনীতির স্বপ্ন দেখেছি,প্রকৃতি দেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে এসেছি, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা ব্যর্থ।”
সজ্ঞানে কারো ক্ষতি করিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার জানামতে সজ্ঞানে রাজনীতির অপব্যবহার করে কখনো কারো কোনো ধরণের ক্ষতি আমি করিনি। যদি ভুল বসত আমি করেও থাকি,আপনাদের নিকট আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।”
শেষে লিসান লেখেন, “যেদিন প্রকৃত স্বচ্ছ বাংলাদেশ বিনির্মাণের ডাক আসবে,সেদিন আপনাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমিও থাকবো মিছিলের অগ্রভাগে, প্রথম বুলেটের শিকারি হতে। তবুও এদেশের বুকে শান্তি ফিরে আসুক।এদেশের মাটির ঊর্ধ্বে আমার কাছে কিছুই মূল্যবান না। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।