জুমবাংলা ডেস্ক: ১২ দিনে পাঁচটি হাসপাতাল ঘুরে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ১০ লাখ টাকার বেশি বিল পরিশোধ করেও তারা প্রয়োজনীয় সেবা পাননি।
আইসিইউ সুবিধা দেয়ার কথা বলে তাদের ভর্তি করা হলেও সে সুবিধা দেয়া হয়নি। হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেনি। শ্বাসকষ্ট নিয়ে ব্যাংকার নূরুজ্জামান মিয়া ও তার স্ত্রী হোসনে আরা জামান একদিনের ব্যবধানে মারা গেছেন।
তাদের সন্তানদের অভিযোগ, অনেক আশা নিয়ে একের পর এক হাসপাতালে মা-বাবাকে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু হাসপাতালগুলো ২-৩ দিন করে রেখে মোটা অংকের বিল নিয়ে বের করে দিয়েছে।
বিলের লম্বা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে অন্য হাসপাতালের পথ দেখিয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা জানান, কোনো একটি হাসপাতালে ধারাবাহিক চিকিৎসা করা হলে হয়তো মা-বাবা বেঁচে যেতেন।
করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হলেও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ জুন হোসনে আরা জামান এবং ১১ জুন নূরুজ্জামান মিয়া মারা যান।
নূরুজ্জামান দম্পতির ছেলে মামুন বলেন, প্রথমদিন মা এবং পরদিন বাবা মারা যান। করোনা উপসর্গ থাকায় তাদের কারও জানাজায় অংশ নিতে পারিনি। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে? তিনি জানান, মা-বাবাকে প্রথমে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে বলা হয়, তাদের আইসিইউ বেড খালি নেই এবং আইসিইউ সুবিধা আছে এমন হাসপাতালে তাদের দ্রুত স্থানান্তর করতে হবে। ১ জুন মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতালে তাদের ভর্তি করি।
কিন্তু রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাবা-মাকে আইসিইউ সুবিধা দেয়নি। কথা দিয়েও তারা কথা রাখেনি। এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রিজেন্ট হাসপাতালের সিআইও রাশেদুল আলম মোল্লা বলেন, তারা আইসিইউ হয়তো চেয়েছিলেন। আমরা বলেছিলাম চেষ্টা করব। আইসিইউ তাদের দেয়া হবে এমন নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে আমরা কোনো লিখিত প্রতিশ্রুতিও দেইনি।
মামুন জানান, রিজেন্ট হাসপাতাল যথাযথ চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হওয়ার পর এবং আইসিইউ সাপোর্টের আশ্বাস পেয়ে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাবা-মাকে ভর্তি করি। কিন্তু সেখানেও ভর্তি করে যথাযথ সেবা না দিয়ে তাদের বের করে দেয়া হয়। অথচ বিল নিয়েছে প্রায় লাখ টাকা।
ওই দম্পতির আরেক ছেলে হাসানুল বান্না বলেন, রাতে আমি ইউনিভার্সেল হাসপাতালের চার তলায় দৌড়ে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করি- বাবাকে যে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়েছেন সেটায় কাজ হচ্ছে না।
অন্য সিলিন্ডার অথবা আইসিইউর ব্যবস্থা করুন। কিন্তু তারা তা করেননি। এ বিষয়ে ইউনিভার্সেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী বলেন, তাদের যেখানে রাখা হয়েছিল সেটি ছিল করোনা রোগীর স্থান। তারা করোনা নেগেটিভ হওয়ায় আমরা তাদের সাহাব উদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করি।
আইসিইউ সুবিধা দেয়ার কথা বলে তাদের এখানে ভর্তি করানো হয়নি। কে আশ্বাস দিয়েছিলেন তা আমার জানা নেই। আমার এখানে যতক্ষণ চিকিৎসাধীন ছিলেন ততক্ষণ যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
সাহাব উদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মনসুর আলী বলেন, আমাদের এখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের সুবিধা থাকায় ভর্তির ব্যবস্থা করে ইউনিভার্সেল কর্তৃপক্ষ।
ভর্তির সময় বলা হয়েছিল তাদের আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে না। শুধু অক্সিজেন সাপ্লাই লাগবে। তখন ইউনিভার্সেল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছিল রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট লাগলে আমরা কিন্তু দিতে পারব না।
হাসানুল বান্না আরও বলেন, সাহাব উদ্দিন মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ভর্তির একদিন পর বিলের লম্বা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বাবা-মাকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে বলেন।
ততক্ষণে তাদের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এরপর সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের ভর্তি করি। সেখানে একদিনের ব্যবধানে মা ও বাবা মারা যান। সূত্র: দৈনিক যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।