জুমবাংলা ডেস্ক : দিনাজপুরের ১০২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৭টি ইউনিয়নের অবস্থাই এমন। এসব ইউনিয়নের এলাকাগুলোতে খরা মৌসুমে পানির স্থিতিতল নেমে যাচ্ছে তিন থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত। এছাড়া প্রতি বছরই নামছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্থিতিতল।
চিরিরবন্দর উপজেলার ইন্দ্রপুর গ্রামের সামসুন্নাহার বলেন, ‘বাড়ির টিউবওয়েলে পানি নাই। মাইনষের বাড়ি থাকি চাইয়া আনি খাই। অনেকেই দিবার চায় না। নানা রকম কথা কয়। ২৫ বছর ধরে এই কষ্টে আছি।’
গত ২৫ বছর ধরে ওই অঞ্চলের টিউবওয়েলে বর্ষাকাল ছাড়া পানি পাওয়া যায় না। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্থিতিতল নেমে যাওয়ায় তাদেরকে এ সমস্যার পড়তে হয়েছে।
চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে কলসি, ড্রাম, বালতি হাতে নিয়ে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ পানির সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছেন। তাদের গ্রামের টিউবওয়েলগুলো বর্ষা ছাড়া বছরের বাকি সময় পানিশূন্য থাকে। যাদের বাড়িতে গভীর নলকূপ রয়েছে তারা এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেলেও আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিরা অন্যের গভীর নলকূপের উপরই নির্ভশীল থাকেন। এক বালতি পানির জন্য দেড় কিলোমিটার দূরে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে অনেকের।
কথা হয় ইন্দ্রপুর গ্রামের মোমেনা খাতুনের সঙ্গে। বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের বোরো ক্ষেতে পানি দেওয়ার গভীর নলকূপ থেকে তিনি এক বালতি পানি নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ”বালটিত করি পানি আনি ড্রামে ভরি রাখি। বাড়িতে পোষা দু’টি গরুর খাবার পানি আনি বাড়ির পাশের ময়লা পুকুর থেকে।”
দিনাজপুর জেলায় প্রতি বছরই নামছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্থিতিতল। খরা মৌসুমে এই জেলার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্থিতিতল তিন থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে যায়। আর প্রতি পাঁচ বছরে এই স্থিতিতল নামছে স্থানভেদে এক থেকে দুই ফুট পর্যন্ত।
দিনাজপুরের যেসব এলাকায় পানির স্থিতিতল নিচে নেমে গেছে তার মধ্যে রয়েছে চিরিরবন্দর উপজেলা। এই উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে টিউবওয়েল দিয়ে পানি উঠছে না। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জরিপের তথ্যে এটি পাওয়া গেছে। এছাড়াও জেলার কাহারোল উপজেলার চারটি ইউনিয়ন, সদর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন, পার্বতীপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন, বিরামপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন, ঘোড়াঘাট উপজেলার চারটি ইউনিয়ন এবং বিরল ও ফুলবাড়ীর একটি করে ইউনিয়নে পানির স্থিতিতল নিচে নেমে গেছে।
দিনাজপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, যদি কোনো এলাকার পানির স্থিতিতল ২৫ ফুটের নিচে হয় তাহলে স্বাভাবিক টিউবওয়েল দিয়ে পানি উঠবে না। খরা মৌসুমে সাধারণত এটি হয়ে থাকে। তাই এই সময়টাতে পানির সংকট দেখা দেয়।
জেলার ১০২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৭টি ইউনিয়নেই অবস্থা এমন। এসব ইউনিয়নের এলাকাগুলোতে খরা মৌসুমে পানির স্থিতিতল নেমে যাচ্ছে তিন থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত। সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে ২০১৮-১৯ অর্থ বছর সরকারিভাবে জেলার ১৩টি উপজেলায় ১৬৪৮টি টিউবওয়েল (তারাপাম্প) বসানো হয়েছে। আর চলতি (২০১৯-২০) অর্থ বছরে বসানো হয়েছে চার হাজার ১০৫টি। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নে আরও ২৬টি করে টিউবওয়েল বসানোর বরাদ্দ পেয়েছে দপ্তরটি।
চিরিরবন্দর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হোসনে আরা বলেন, খরা মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেকেই পানির সংকটে রয়েছেন। গত অর্থ বছরে এই উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ২৯৬টি তারাপাম্প বসানো হয়েছে। চলতি বছরই আরও টিউবওয়েলের কাজ হবে। যদি কোথাও তারা পাম্পে গোলযোগ থাকে, আমাদেও জানালে সেগুলো মেরামত করা হবে।
দিনাজপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মুরাদ হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিম্নগামী হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে ভূ-উপরস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
সূত্র : বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।